ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যোগ্য কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন হচ্ছে

সরকারের শুরুতেই সুশাসন প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৭ জানুয়ারি ২০১৯

সরকারের শুরুতেই সুশাসন প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু

তপন বিশ্বাস ॥ নতুন সরকারের শুরুতেই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় যাত্রা শুরু করেছে সরকার। যাত্রার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে তা দৃশ্যমানও হয়েছে। আগে থেকে ই-ফাইলিং শুরু হলেও সরকারের যাত্রার শুরুতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের স্থানভেদে তা ৯০ শতাংশে উন্নীত করেছে। সৎ, দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের একান্ত সচিব নিয়োগ তার একটি প্রতিফলন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে নেয়া হয়েছে কঠোর পদক্ষেপ। সরকারের যাত্রার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে মন্ত্রীদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু করেছে। নতুন মন্ত্রিসভা গঠন এবং প্রধানমন্ত্রী তার নির্দেশনায় তারই ইঙ্গিত দিয়েছেন। এবার প্রথমবারের মতো সকল মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীদের একান্ত সচিব (পিএস) সরকার নির্ধারণ করে দিয়ে আদেশ জারি করেছে। এতে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম মনিটর করার পাশাপাশি কার্যক্রমকে গতিশীল করতে তাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহম্মদ জনকণ্ঠকে বলেন, এটি সুশাসন প্রতিষ্ঠার একটি ধাপ। শুধুমাত্র কোন সংস্থার রিপোর্টের ওপর ভিত্তিতে নয়, কর্মকর্তার কর্মক্ষেত্রের রিপোর্টের ভিত্তিকে গুরুত্ব দিয়ে পিএসদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আগেভাগে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের একান্ত সচিবের তালিকা প্রস্তুত করে রাখে। বিগত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার পর দিন এই তালিকা নিয়ে জনপ্রশাসন সচিব প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। প্রধানমন্ত্রী তার এই কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মন্ত্রিসভার শপথের আগেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সকল মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীদের জন্য একান্ত সচিবের তালিকা প্রস্তুত করে রাখে। সে হিসেবে ৭ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার শপথের পরদিন ৮ জানুয়ারি একান্ত সচিবের আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহম্মদ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীদের সকল একান্ত সচিবকে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এতে তাদের কাজ মূলত কি? সেটি তিনি বুঝিয়েছেন। জনপ্রশাসন সচিব জনকণ্ঠকে বলেন, এখন একান্ত সচিব, সহকারী একান্ত সচিবের (এপিএস) কাজ ভিন্ন করে দেয়া হবে। কেউ কোন কাজ নিয়ে অজুহাত তুলতে পারবেন না। যার কাজ তাকে দায়িত্ব নিয়ে ঠিকমতো সম্পন্ন করতে হবে। প্রসঙ্গত এর আগে কোন কাজে সমস্যা সৃষ্টি হলে পিএস, এপিএসএর ওপর দায় চাপাতে চায়। আবার এপিএসরা বলেন, পিএস এটি দেখেছেন বা করেছেন। কোন কাজে যাতে এই সমস্যা তৈরি না হয়, সে লক্ষ্যে তাদের কাজ ও দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হবে। ই-ফাইলিং-এর সম্পর্কে সচিব বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি উয়িং-এ ৯০ শতাংশের বেশি ই-ফাইলিং শুরু করেছে। অন্যান্য উয়িংগুলোতেও কাজ চলছে। আশাকরি খুব শীঘ্রই ভাল ফল পাব। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এককভাবে সচিব বা কোন কর্মকর্তা কাউকে কোথাও বদলি বা পদায়ন করছেন না। এই কাজে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে বসে, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের পার কর্মকর্তাদের কর্মজীবন যাচাই-বাছাই করে তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হচ্ছে। এতে সৎ, দক্ষ ও যোগ্য এবং কর্মকর্তারা ভাল পদে পদায়ন পাবেন। রাজনৈতিক পরিচয়কে গুরুত্ব না দিয়ে যোগ্যতার ভিত্তিকে এই পদায়ন দেয়া হচ্ছে। এতে তদ্বির অচিরেই কমে যাবে। কর্মকর্তারা এখন থেকে ভাল পদায়ন পেয়ে যোগ্যতার ছাপ রাখবেন। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে একইভাবে বিবেচনায় নেয়া হবে। এবার সরকারের সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থানে সরকার। এটি বাস্তবায়ন করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কঠোর অবস্থানে। কোথাও দুর্নীতি করলে এবং তার প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি পেতেই হবে। বিষয়টি ইতোমধ্যে বিভিন্ন অফিসে আলোচনায় পরিণত হয়েছে। যে সকল অফিসে দুর্নীতি প্রায় প্রকাশ্য রূপ নিয়েছিল, তারাও অনেকটা চুপ চাপ হয়ে গেছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে মন্ত্রীরাও অবস্থান নিয়েছেন। মন্ত্রিসভার যাত্রার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী সংসদ ভবনে মন্ত্রীদের উদ্দেশে বলেন, দুর্নীতি করে কেউ রেহাই পাবে না। আপনাদের অনেককে তলানি থেকে তুলে এনে মন্ত্রী বানিয়েছি। কিন্তু দুর্নীতি করলে বা সহায়তা করলে আবারও নিচে চলে যাবেন। পরে আবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুরানোদের বাদ দিয়ে নতুনদের মন্ত্রী বানিয়েছি, তার মানে এই না যে পুরানোরা ব্যর্থ ছিল। নতুনদের সুযোগ দিতে যারা টানা ১০ বছর মন্ত্রী ছিলেন, তাদের বাদ দিয়ে নতুনদের স্থান দিয়েছি। সকলে দেশ গঠনে, উন্নত দেশে প্ররিণত করতে কাজ করবেন। এ কাজ করার সুযোগ সবাই পায় না। আপনারা পেয়েছেন, তার মর্যাদা দেবেন আশা করি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর মন্ত্রীরাও তৎপরতা শুরু করেছেন। প্রায় প্রতিটি মন্ত্রী যে যার মতো করে কাজ গুছিয়ে নিচ্ছেন। শুরুতেই ভূমিমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঝটিকা অভিযান শুরু করেছেন। কোথাও কোথাও ব্যবস্থাও নিয়েছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীও পিছিয়ে নেই। তিনিও বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটছেন। কৃষিমন্ত্রী সবকিছু খোঁজ খবর নিয়ে কাজে নেমে পড়েছেন। প্রথমবারের মতো মন্ত্রী হওয়া খাদ্যমন্ত্রীর ওপর চাপ অনেকটা বেশি। অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কবল থেকে চালের বাজায় নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কঠিন কাজ। এই সিন্ডিকেটও থেমে নেই। নির্বাচনের সময় সরকারের মনিটরিং-এর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে চালের দাম বাড়িয়ে দেয় ব্যবসায়ীরা। এ লক্ষ্যে যাত্রা শুরুর দ্বিতীয় দিনে খাদ্য অধিদফতরে চালকল মালিক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। এতে কিছুটা সফলতাও পান তিনি। বর্তমানে তিনি তার নিজের নির্বাচনী এলাকা এবং দেশের চালের বড় বাজার নওগাঁ সফর করছেন এবং চাঁদের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করছেন। শিক্ষামন্ত্রী শুরুতেই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় সভা করেছেন এবং সকলকে সততার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানয়েছেন। তিনিও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সকলকে সতর্ক করে দেন। এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরীক্ষিত তিনি তার নিজস্ব ‘স্টাইলে‘ কাজ করছেন। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীকেও দেখা গেছে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সমন্বয় সভা করতে। এবার প্রায় সকল মন্ত্রীর একটাই নির্দেশ সমন্বয়ের মাধ্যমে সকলকে কাজ করতে হবে। এতে সুফল পাওয়া যায়।
×