ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টিআইবির প্রতিবেদন ভিত্তিহীন ॥ মন্তব্য সিইসির

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৭ জানুয়ারি ২০১৯

টিআইবির প্রতিবেদন ভিত্তিহীন ॥ মন্তব্য সিইসির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে টিআইবি যে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তা ভিত্তিহীন উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা বলেন, নির্বাচন নিয়ে টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন ভিত্তিহীন। এছাড়া রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান কমিশনের সমালোচনা করে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাও অসৌজন্যমূলক বলে উল্লেখ করেন তিনি। বুধবার আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন। বলেন, নির্বাচন বিষয়ে টিআইবি যে মন্তব্য করেছে তা অসৌজন্যমূলক। তাদের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছি। মাঠ পর্যায় থেকে নির্বাচন নিয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। এমনকি মিডিয়া থেকেও অভিযোগ পাইনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধু মিডিয়া নয়, যারা নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছেন, তাদেরও আমরা গুরুত্ব দিয়েছি।’ গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে মঙ্গলবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি। এতে ভোটে ব্যাপক অনিয়মের তথ্য তুলে ধরে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও ত্রুটিপূর্ণ বলে মন্তব্য করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। নির্বাচনে সবার ‘সমান সুযোগ নিশ্চিত না হওয়ায়’ এই ভোট প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত ছিল বলে পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করে তারা। এ নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের পক্ষে মত দেয় তারা। ওই অনুষ্ঠানেই ভোট ঘিরে নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার সমালোচনা করেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ‘লজ্জাজনক’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আগারগাওঁয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) এক অনুষ্ঠান শেষে এ বিষয়ে সিইসি নুরুল হুদার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। তখন তিনি বলেন, এটা অসৌজন্যমূলক বক্তব্য। তাদের এভাবে কথাগুলো বলা ঠিক হয়নি। নির্বাচন নিয়ে টিআইবির প্রতিবেদন বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের প্রতিবেদন পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করছি। টিআইবি অনিয়মের অভিযোগ তুললেও সেদিন গণমাধ্যম ও নির্বাচনের মাঠে থাকা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কাছ থেকে কোন ধরনের অনিয়ম হয়েছে বলে তথ্য পাইনি আমরা। নীলফামারীতে এক অনুষ্ঠানে ইসি সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ এ বিষয়ে বলেন, টিআইবির প্রতিবেদনকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর হঠাৎ করে এ রকম একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে অপ্রস্তুত করা হয়েছে। এটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে বলে মনে করি বলে তিনি উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে তারা উল্লেখ করেন নির্বাচনে প্রার্থীরা সমান সুযোগ না পাওয়াসহ বিভিন্ন ত্রুটির কারণে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত’ হয়েছে। এ ধরনের নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক নয়। ভোট নিয়ে ওঠা অভিযোগগুলোর বিচার বিভাগীয় তদন্ত করার দাবি করে তারা প্রতিষ্ঠানটির উল্লেখ করেছে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অনিয়ম হয়েছে। নির্বাচনে সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে পারেনি। প্রতিষ্ঠানের গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ৩০০টি আসনের মধ্যে ৫০টি আসন দৈবচয়নের ভিত্তিতে বেছে নিয়ে গবেষণা করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় সেখানে নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নেয়া হয়েছে। প্রধান দুটি জোটের এবং ক্ষেত্র বিশেষে তৃতীয় প্রার্থীর ওপর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করা হয়। মোট ১০৭ জন প্রার্থীর তথ্য নিয়ে এই প্রতিবেদন করা হয়েছে। এতে কমিশনের সমালোচনা করে বলা হয় কমিশন গুরুত্বপূর্ণ অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে সমর্থ হয়নি। নির্বাচন কমিশন সব দল ও প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে পারেনি। ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ আছে কি না তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে মতবিরোধ ছিল উল্লেখ করা হয়। বুধবার এর প্রতিক্রিয়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন।
×