ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চুরি যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উদ্ধার শাহনাজের স্কুটি

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৭ জানুয়ারি ২০১৯

চুরি যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উদ্ধার শাহনাজের স্কুটি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চুরি যাওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শাহনাজ আক্তার পুতুল নামে এক নারীর জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। পুলিশ ইচ্ছা করলে যে অনেক কিছুই পারে, তা আরও একবার প্রমাণ হলো সাধারণ মানুষের কাছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো ঝড় বইছে। পুলিশের প্রশংসায় অনেকেই পঞ্চমুখ। বলছেন, পুলিশের সক্ষমতা বেড়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, এমন পুলিশই চাই। গ্রেফতার হয়েছে চোর জোবায়দুল ইসলাম জনি। তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। মঙ্গলবার দুপুরে ফার্মগেটের খামারবাড়ি থেকে শাহনাজ আক্তার পুতুল নামে ওই মেয়ের মোটরসাইকেলটি চুরি হয়। এ বিষয়ে শেরেবাংলানগর থানায় ৯১১ নম্বরে একটি জিডি হয়। জিডিটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, স্কুটিটির দাম ৫৮ হাজার টাকা। জনি (২৭) নামে এক পাঠাওচালকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। জনি তাকে চাকরি দেয়ার কথা বলেছিল। জনি তাকে ফার্মগেটের খামারবাড়িতে আসতে বলে। ওই বিষয়ে আলাপের এক পর্যায়ে জনি স্কুটিটি চালিয়ে দেখার কথা বলে নিয়ে পালিয়ে যায়। স্কুটি হারিয়ে যাওয়ার পর পুতুলের হৃদয়বিদারক কান্না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়। মঙ্গলবার রাতেই অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে স্কুটিটি উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতার হয় জোবায়দুল ইসলাম জনি। বুধবার দুপুরে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি কার্যালয়ে এক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বিভাগটির উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার জানান, জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন স্কুটিটি চুরি যাওয়ার পর মেয়েটির কান্না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো ঝড় তুলে। তিনি নিজেও মেয়েটির কান্না ফেসবুকে দেখেছি। স্কুটিটি উদ্ধার করতে তৎপরতা শুরু করি। শাহনাজ বলছিলেন, তিনি স্কুটিতে করে জনিকে নিয়ে এয়ারপোর্টসহ নানা স্থানে ঘুরে শেরেবাংলা নগর থানার রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় চা পান করতে যান। চা খাওয়ার একপর্যায়ে স্কুটি চালানোর বিষয়ে শাহনাজকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে জনি। এক পর্যায়ে স্কুটিটি চালিয়ে দেখতে চায়। সে সরল বিশ্বাসে জনির হাতে চাবি দেয়। জনি স্কুটি চালিয়ে পালিয়ে যায়। এক মাস ধরে উবারের মাধ্যমে মোটরবাইক চালাচ্ছেন তিনি। নারী হয়ে পুরুষদের নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ায় সম্প্রতি ফেসবুক ও বিভিন্ন পত্রিকায় তাকে নিয়ে ইতিবাচক রিপোর্ট হয়। পুতুল বলেন, হেলমেট যতক্ষণ আমার মাথায় ছিল, মনে হচ্ছিল বাইকটি আমার কাছেই আছে। হেলমেটকেই আমার বাইক মনে হয়েছে। তাই হেলমেট মাথা থেকে খুলিনি। এখন আমি আমার রিজিক ফেরত পেয়েছি। তিনি পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমার ভাবনার বাইরে ছিল পুলিশ চাইলে সবকিছু করতে পারে। একটা অসম্ভবকে তারা সম্ভব করেছে। আমি প্রতিদিন রাতে ইন্ডিয়ান চ্যানেলে ক্রাইম পেট্রোল দেখি। সেখানে এরকম দেখানো হয়। পুতুল আরও বলেন, বাইকটি চুরি যাওয়ার পর আমার মাও আমাকে বকা দিয়েছে। আমার দুই সন্তান। তাদের দেখার প্রকৃতপক্ষে কেউ নেই। সন্তানদের বাবাও আমি, মাও আমি। আমি সন্তানদের কষ্ট দিতে চাই না। এই বাইক চালিয়ে আমি আমার সন্তানদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করি। থানায় গিয়ে আমি পুলিশকে একই কথা বলেছি। যাতে তারা আমার গাড়িটি উদ্ধারে আন্তরিক হন। স্কুটি হারানোর পর দুদিন টাকা রোজগার করতে পারিনি। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব সরকার তার দুই সন্তানের জন্য ১০ হাজার নগদ টাকাও দেন। সংবাদ সম্মেলনে শেষে আবেগাপ্লুত শাহনাজ পায়ে হাত দিয়ে ডিসি বিপ্লব কুমার সরকারকে সালাম করেন। শাহনাজ ওড়না দিয়ে স্কুটিটি মোছেন। সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আবু তৈয়ব মোঃ আরিফ হোসেনসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×