ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অতশী রহমান

আকাশছোঁয়া উচ্চতায় মেসি

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

আকাশছোঁয়া উচ্চতায় মেসি

রেকর্ডের সঙ্গে যাঁর নিত্য বসবাস, তাঁর রেকর্ড নিয়ে মাতামাতির কি আছে! সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রেকর্ড আর নিজের নামটি যেন সমার্থকে পরিণত করেছেন; খেলছেন রেকর্ড ভাঙ্গাগড়ার খেলা। মূলত গোলের গৌরবময় রেকর্ডই ঝুলিতে ভরছেন। বলা হচ্ছে লিওনেল মেসির কথা। বার্সিলোনার আর্জেন্টাইন সুপারস্টার আরও একটি গৌরবময় রেকর্ড গড়েছেন। ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার হিসেবে স্প্যানিশ লা লীগায় ‘৪০০’ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন পাঁচবারের ফিফা সেরা তারকা। ১৩ জানুয়ারি এইবারের বিরুদ্ধে লক্ষ্যভেদ করে এ কৃতিত্ব দেখান ৩১ বছর বয়সী মেসি। বার্সার মাঠ ন্যূক্যাম্পে ম্যাচের ৫৩ মিনিটে ডি বক্সে লুইস সুয়ারেজের পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কোনাকুনি শটে রেকর্ডগড়া ‘৪০০’ নম্বর গোলটি করেন মেসি। স্প্যানিশ লা লীগায় ৪৩৫ ম্যাচ খেলে অসাধারণ এই কীর্তি গড়েছেন তিনি। দুর্দান্ত এই পথচলায় ম্যাচ প্রতি গোল করেছেন প্রায় ০.৯২ হারে। এই সময়ে মেসি ৮৩ ম্যাচে গোল করেছেন দুটি করে আর হ্যাটট্রিক করেছেন ৩১ বার। ২০০৪ সালের অক্টোবরে এস্পানিওলের বিপক্ষে লা লীগায় অভিষেক হয় মেসির। পরের বছর ১ মে আলবাসেটের বিপক্ষে লীগে প্রথম গোলের দেখা পান। তখন মেসির বয়স ছিল ১৭ বছর। ২০১০ সালের ২০ নবেম্বর আলমেইরার বিপক্ষে করেন শততম গোল। ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি ওসাসুনার বিপক্ষে ২০০তম ও ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি স্পোর্টিং গিহনের বিপক্ষে ৩০০তম গোল করেন। বর্তমানে লা লীগায় খেলছে এমন ফুটবলারদের মধ্যে গোলের হিসেবে মেসির ধারে কাছে নেই কেউ। সবচেয়ে কাছে থাকা এ্যাথলেতিক বিলবাওয়ের আরিটজ আডুরিজের গোল ১৫৭টি। লা লীগার ৯০ বছরের ইতিহাসে সেরা গোলদাতাদের তালিকাতেও বেশ বড় ব্যবধানে এগিয়ে শীর্ষে আছেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। গত বছর ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ায় মাঠটা একেবারেই ফাঁকা হয়ে গেছে মেসির। লা লীগায় থাকলে মেসির প্রধান হুমকি থাকতে সি আর সেভেনেই। কেননা মেসির চেয়ে অনেক ম্যাচ কম খেলে লা লীগায় রোনাল্ডো করেছেন ৩১১ গোল। মাত্র ২৯২ ম্যাচে গোলগুলো করেন বর্তমানে জুভেন্টাসে খেলা পর্তুগীজ তারকা। আর মেসি ৪০০ গোল করতে খেলেছেন ৪৩৫ ম্যাচ। ইতিহাস গড়লেও মেসির রেকর্ড মানছে না ‘রিয়াল মাদ্রিদভিত্তিক সংবাদমাধ্যম’ হিসেবে পরিচিত মার্কা। তাদের দাবি মেসি লা লীগায় ৩৯৯ গোল করেছেন। এর পেছনে যুক্তিও তুলে ধরেছে মার্কা। ফের্নান্ডো আমোরেবিয়েটার একটি আত্মঘাতী গোল মেসির নামে গিয়েছে বলে জানায় তারা। ২০১২-১৩ সালে এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ৫-১ গলে জয় পায় বার্সা। ১৪তম রাউন্ডের ওই ম্যাচে মেসির একটি শট জালে ঢোকার আগে আমোরেবিয়েটার পায়ে লেগে দিক বদলে যায়। অথচ ম্যাচ শেষে রেফারি গোলটি মেসির নামেই রেকর্ড করেছেন। ওই ম্যাচের রেফারি এ্যান্টোনিও মিগুয়েল মাটেউ লাহেজের বিরোধিতা করেছিল মার্কা। কারণ একই মৌসুমে আগের বছর এ ধরনের একটি গোল ফার্নান্ডো লোরেন্টেরর নামে না দিয়ে জেরার্ড পিকের আত্মঘাতী গোল হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। তবে মার্কা যাই দাবি করুক, লা লীগা কর্তৃপক্ষ আগেই ওই গোলের স্বীকৃতি দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই তাই মেসির ৪০০ গোলের স্বীকৃতিও মিলেছে। শুধু তাই নয়, প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এক লীগে ৪০০ দেওয়ার রেকর্ড গড়ায় মেসিকে অভিনন্দনও জানিয়েছে তারা। দু’একজন নিন্দুক থাকলেও প্রায় সবাই মেসির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বার্সিলোনা কোচ আর্নেস্টো ভালভার্ডে বলেছেন, এটা সত্যিকার অর্থেই অসাধারণ। বলতে সহজ হলেও দীর্ঘ সময় ধরে একের পর এক গোল করে যাওয়া সত্যিই অসাধারণ। তার এই গোল সংখ্যা অতি অসাধারণ। আসলেও সে অন্য জগতের মানুষ। তিনি আরও বলেন, মেসির পরিসংখ্যান আকাশছোঁয়া, এগুলো অবিশ্বাস্য। শুধু গোলগুলো নয়, যেসব কীর্তি সে গড়েছে, তাতে মনে হয়, সে অন্য গ্যালাক্সি থেকে এসেছে। এদিকে মেসিকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের দল চেলসির হয়ে খেলা বেলজিয়ামের তারকা ফরোয়ার্ড ইডেন হ্যাজার্ড। মেসির প্রশংসা করতে গিয়ে তিনি আবার তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে কৌশলে খোঁচাও মেরেছেন। হ্যাজার্ডের দৃষ্টিতে, ফুটবল বিশ্বে এখন দুজন নয়, বরং ‘গোট’ একজনই। ‘সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় দুজন নয়, বরং একজন। আর সেটা আর কেউ নয়, তাঁর নাম মেসি।’ বিশ্বের তাবৎ ফুটবলপ্রেমীরা যেখানে মেসি, রোনাল্ডো দু’জনকেই ‘গোট’ মানেন, সেখানে রোনাল্ডোকে এড়িয়ে মেসিকে সেরা বলেছেন হ্যাজার্ড। গত ২০১৭-১৮ মৌসুমে মেসির সঙ্গে দুবার দেখা হয়েছিল হ্যাজার্ডের। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের দ্বিতীয় রাউন্ডে। দেখা হওয়ার স্মৃতিটা তেমন সুখকর ছিল না। স্মৃতি স্মরণ করে হ্যাজার্ড বলেন, বার্সিলোনা আর মেসির বিপক্ষে খেলতে পেরে আমি বেশ খুশি ছিলাম। কিন্তু ম্যাচ শেষের অভিজ্ঞতাটা আর সুখের থাকেনি আমার জন্য। ম্যাচের ফলাফল আমাদের পক্ষে ছিল না, বেশ আশাহত হয়েছিলাম। দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম লেগে চেলসির মাঠ স্টামফোর্ড ব্রিজে ১-১ গোলে ড্র করে আসার পর নিজেদের মাটিতে হ্যাজার্ডদের ৩-০ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল মেসি বার্সিলোনা। গত নবেম্বরে চেলসি ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন হ্যাজার্ড। চেলসিতে সাত মৌসুম খেলা হ্যাজার্ড গত দল বদলেও ক্লাব ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়ার ইচ্ছার কথা সরাসরিই জানিয়েছিলেন তিনি। স্পেনের ক্লাবটিও তাকে পেতে আগ্রহী ছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সেটা সম্ভব হয়নি। পরে চেলসির সঙ্গে ২০২০ পর্যন্ত নতুন চুক্তি করেন ২৭ বছর বয়সী এই ফুটবলার। তবে চুক্তি নবায়ন করলেও শেষ পর্যন্ত ব্লুজ শিবির ছাড়তে যাচ্ছেন তিনি। সেটা হতে পারে আগামী বছর। এক সাক্ষাতকারে এমন বলেছেন হ্যাজার্ড। তিনি বলেন, এখন আমি চেলসিতে থাকছি। যদি আমি চুক্তির মেয়াদ না বাড়াই তাহলে এটা সম্ভব। তবে আমি জানুয়ারিতে চলে যাব, এমন কোন সম্ভাবনা নেই। আমি ক্লাব ও সমর্থকদের সঙ্গে এমনটা করব না। হ্যাজার্ড বলেন, আগামী গ্রীষ্মে একটা সম্ভাবনা আছে। তবে এটাও সম্ভব যে আমি ক্যারিয়ারের বাকিটা সময় চেলসিতে কাটিয়ে দিলাম। হতে পারে আগামী বছর আমি চলে যেতে পারি। রিয়ালের যাওয়ার গুঞ্জনের মধ্যেই পিএসজিতে যাওয়ার সম্ভাবনার কথাও রটেছিল। তবে তেমন কিছু উড়িয়ে দিয়েছেন হ্যাজার্ড। জানিয়েছে ফ্রান্সে ফিরলে পুরনো ক্লাব লিলেই ফিরবেন।
×