ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কোহিনূর আক্তার

আপন আলোয় জ্বলছেন হ্যারি কেন

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

আপন আলোয় জ্বলছেন হ্যারি কেন

হ্যারিকেনের আলো মিটিমিটি। তবে টটেনহ্যাম হটস্পারের ইংলিশ স্ট্রাইকার ব্যতিক্রম। এই হ্যারি কেনের আলো যেন বিদ্যুতের গতিতে ছুটে চলছে। জাতীয় দল কিংবা ক্লাব ফুটবল সর্বত্রই দুর্দান্ত গতিতে আলো ছড়াচ্ছেন স্পার্শদের এই ইংলিশ তারকা। ইংলিশ লীগ কাপের সেমিফাইনালের প্রথম লেগেও নায়কের ভূমিকায় ছিলেন হ্যারি কেন। কেননা, পেনাল্টিতে করা তার একমাত্র গোলেই যে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে টটেনহ্যাম হটস্পার। চেলসির বিপক্ষে করা গোলটি ছিল সব ধরনের প্রতিযোগিতায় চলতি মৌসুমের ২০তম গোল। এই গোল করেই স্পার্শদের ইতিহাসে জায়গা করে নেন তিনি। টটেনহ্যাম হটস্পারের ক্লাব ইতিহাসের একমাত্র ফুটবলার হিসেবে টানা পাঁচ মৌসুমে ২০ কিংবা তারও বেশি গোল করার রেকর্ড গড়লেন হ্যারি কেন। ক্লাবটির এ যাবৎকালের ইতিহাসে যা পারেনি আর কোনো ফুটবলার। ২০০৯ সালে টটেনহ্যাম হটস্পারের সিনিয়র দলে যোগ দিয়েছিলেন হ্যারি কেন। তবে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ক্লাবে ধারে খেলেছেন তিনি। টটেনহ্যামে ২০১৪-১৫ মৌসুম থেকেই পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসেন হ্যারি কেন। সে বছরে স্পার্শদের জার্সিতে ৩১ গোল করেন তিনি। পরের মৌসুমে তার গোলসংখ্যা ২৮টি। ২০১৬-১৭ এবং ২০১৭-১৮ মৌসুমে তা ক্রমেই বাড়তে থাকে। গত দুই মৌসুমে যথাক্রমে ৩৫ এবং ৪২ গোল করেন হ্যারি কেন। এবার মাঝপথেই হ্যারি কেনের গোলসংখ্যা ২০! এবার কোথায় গিয়ে থামবেন রাশিয়া বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুটজয়ী এই স্ট্রাইকার? ফুটবলপ্রেমীদের অপেক্ষা এখন সেটাই দেখার। অন্যান্য মৌসুমের চেয়ে এবার অনেক বেশি ধারাবাহিক হ্যারি কেন। গত রবিবার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জাল খুঁজে না পেলেও টটেনহ্যামের জার্সিতে এর আগের ছয় ম্যাচের সব ক’টিতেই গোলের দেখা পান তিনি। সিনিয়র ক্যারিয়ারে ইতোমধ্যেই ১৮৫ গোল করেছেন স্পার্শদের এই ইংলিশ স্ট্রাইকার, যা বেলজিয়ামের এডেন হ্যাজার্ডের চেয়েও ৩৪টি বেশি। অথচ, হ্যাজার্ডের তিন বছর পর অভিষেক ঘটেছিল হ্যারি কেনের। শুধু তা-ই নয়, চেলসির বিপক্ষে করা গোলের সৌজন্যে টটেনহ্যামের ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ গোলদাতাও এখন হ্যারি কেন। স্পার্শদের জার্সিতে তার গোল এখন ১৬০। চলতি মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে সর্বোচ্চ গোলদাতা মোহাম্মদ সালাহ। লিভারপুলের মিসরীয় ফরোয়ার্ডের গোলসংখ্যা ১৪টি। ১৮৪৮ মিনিট খেলে প্রতিপক্ষের জালে এই গোল করেন তিনি। গত দুই মৌসুম ধরে দুর্দান্ত সময় পার করা সালাহ গড়ে ১৩২ মিনিটে একটি গোল করেছেন। তার এ্যাসিস্ট সংখ্যা সাতটি। সালাহর পরেই রয়েছেন টটেনহ্যাম হটস্পারের হ্যারি কেন। ১৮৮৭ মিনিট খেলে সালাহর সমান ১৪টি গোল করেন তিনি। হ্যারিকেন গড়ে ১৩৫ মিনিটে একটি গোল করেছেন। এ্যাসিস্ট সংখ্যা চারটি। টটেনহ্যাম হটস্পারের এই ইংলিশ স্ট্রাইকারের টার্গেট শট ৬৩ ভাগ। হ্যারিকেনের পারফর্মেন্সের উপর ভর করে টটেনহ্যামও উড়ছে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে হারের আগে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের দুই নম্বরে অবস্থান করছিল স্পার্শরা। কিন্তু রেড ডেভিলদের কাছে হারায় তিনে নেমে গেছে মাউরিসিও পোচেত্তিনোর দল। মৌসুমের প্রথম ২২ ম্যাচ থেকে টটেনহ্যাম হটস্পারের সংগ্রহ ৪৮ পয়েন্ট। শীর্ষে যথারীতি লিভারপুল। স্পার্শদের সমানসংখ্যক ম্যাচ থেকে ৫৭ পয়েন্ট নিয়ে প্রিমিয়ার লীগের শীর্ষে অবস্থান করছে জার্গেন ক্লপের দল। আর দুই নম্বরে রয়েছে টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। হ্যারি কেন গত বছর রাশিয়া বিশ্বকাপেও নজর কাড়েন বিশ্ব ফুটবলের বিশেষজ্ঞদের। শেষ পর্যন্ত দল শিরোপা জিততে না পারলেও নিজে গোল্ডেন বুট জিতেছেন ঠিকই। হ্যারিকেনের একটা তথ্য অবশ্য অনেকের কাছেই হয়তো অজানা। ইংলিশদের সাবেক অধিনায়ক ডেভিড বেকহাম যে স্কুলে পড়ালেখা করেছেন, হ্যারি কেনও একই স্কুলে পড়েছেন। চিংফোর্ড ফাউন্ডেশন স্কুলে পড়ালেখা করেছিলেন তিনি। হ্যারি কেন সম্পর্কে ওই স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক জানান, ‘ছোটো বেলা থেকেই হ্যারি কেন খুব মেধাবী ও পরিশ্রমিক ছিলেন। আমরা যদি কোন খেলায় কোন কঠিন প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতাম, তাহলে বলতাম হ্যারির কাছে বল পাঠাও, গোল আসবে।’ তবে ফুটবল দুনিয়ায় শুরুর দিকে লড়াই করতে হয়েছে হ্যারি কেনকে। আজকের হ্যারি কেন একসময় আর্সেনাল কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন। এর ফলে রিডজি রোভারসের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। ডেভিড বেকহাম ও আন্দ্রোস টাউনসেন্ডও ওই ক্লাবের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। তবে তাকে দলে নিতে চায়নি আর্সেনাল ও টটেনহ্যাম। ভাল খেললেও, অতিরিক্ত ওজনের জন্যই তাকে দলে নিতে চায়নি ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের অন্যতম সেরা দুটি ক্লাব। পরবর্তীতে সেই হ্যারি কেনই এখন টনেটহ্যামকে টেনে নিচ্ছেন দুর্দো-প্রতাপে। শুধু কী তাই? এই হ্যারি কেনকে পেতে এখন বিশ্বের অনেক নামী-দামী ক্লাব ব্যাপক আগ্রহী! যার মধ্যে রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদের নামও। টটেনহ্যাম তারকা হ্যারি কেন স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদে আসছেন বলে দীর্ঘদিন ধরেই গুঞ্জন। ইংলিশ স্ট্রাইকারকে রিয়ালে যোগদানের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন বিশ^কাপজয়ী জার্মান অধিনায়ক লুথার ম্যাথিউসও। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, রিয়ালের দুর্দিনে হ্যারি কেনের বার্নাব্যুতে নাম লেখানোর সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এবার কেন যদি মাদ্রিদে না আসেন তবে আর আসতেও পারবে না। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে হ্যারি কেন বিশ^কাপ জয়ী ফুটবলারের কথা রাখেন কিনা। ম্যাথিউসের মতে, হ্যারি কেন পেরেজের দলে এলে নিজেকে আরও ভালভাবে মেলে ধরতে পারবে। তার মধ্যে যে সম্ভাবনা আছে সেটিও আরও বৃদ্ধি পাবে। কেননা, রিয়ালে কিছু বিশ^মানের ফুটবলার রয়েছে। তাই কেনের অনতিবিলম্বে স্প্যানিশ জায়ান্টে নাম লেখানো উচিত। সময়টা ভাল যাচ্ছে না ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদের। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ স্ট্রাইকার সমস্যা। গত বছরের আগস্টে বার্নাব্যু ছেড়েছেন পর্তুগীজ সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। তার প্রস্থানের পর বেল-বেনজেমারা নিজেদের ভালভাবে মেলে ধরতে পারছেন না।
×