ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গোলরক্ষক তৈরির কারিগর নয়নের ভাবনা...

প্রকাশিত: ০৭:০২, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

গোলরক্ষক তৈরির কারিগর নয়নের ভাবনা...

এই ক্রীড়া ভুবনের ক্রীড়ামঞ্চে অসংখ্য ক্রীড়ার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কোন্টি? সবাই এক কথায় জবাব দেবেন ফুটবল। এ খেলার অনুরাগীদের দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকে তাদের ওপর- যারা গোল করেন। কিন্তু গোলরক্ষক যদি বিপক্ষের আক্রমণকে প্রতিহত না করতেন, তাহলে দল হারবে। কাজেই স্ট্রাইকার-মিডফিল্ডার-ডিফেন্ডারদের চেয়ে কোন অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নন একজন গোলরক্ষক। গোলপোস্টের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে যুগে যুগে খ্যাতিমান হয়েছেন অনেকেই। বাংলাদেশের বিখ্যাত গোলরক্ষকের মধ্যে আছেন সান্টু, মোতালেব, কানন, মোহসীন, আমিনুল, বিপ্লবরা। এদের কাতারে অধিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা জাগিয়ে লড়াইয়ে আছেন আশরাফুল ইসলাম রানা, আনিসুর রহমান জিকো, শহীদুল আলম সোহেল, রাসেল মাহমুদ লিটনসহ অনেকেই। কিন্তু আসলেই কি তারা যোগ্য গোলরক্ষক? ঘরোয়া আসরে তাদের পারফরম্যান্স কেমন? তাদের ভুলত্রুটি কেমন হয়? বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে সব গোলরক্ষকেরই রয়েছে টেকনিকে সমস্যা, এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের গোলরক্ষক কোচ, ৩৯ বছর বয়সী নুরুজ্জামান নয়ন। রীতিমতো গবেষণা করে তিনি জানিয়েছেন দেশীয় অতন্ত্র প্রহরীদের নৈপুণ্যে রয়েছে প্রচুর সমস্যা। সেগুলো কিভাবে সমাধান করা যায়, বাতলে দিয়েছেন সেটাও। কদিন আগে অনুষ্ঠিত স্বাধীনতা কাপ ফুটবলে মোট গোল হয়েছে ৪৪টি। নয়ন গবেষণায় ধরা পড়েছেÑ এর মধ্যে ২৬টি গোল হয়েছে গোলরক্ষকদের টেকনিক্যাল ও ট্যাকটিক্যাল ও অন্যান্য ভুলে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোল হয়েছে গোলরক্ষকদের পজিশনাল মিসটেকের কারণে। বিষয়টি আরেকটু ভেঙ্গে বললে বলতে হয় ওয়াইড এ্যাঙ্গেল থেকে এবং সেন্টার থেকে যে শুটিংগুলো হয়, সেক্ষেত্রে গোলরক্ষকদের পজিশন ঠিক ছিল না। এরকম গোল তারা হজম করেছে ১৫টি। এছাড়া ওয়ান ভি ওয়ান (১: ১) সিচুয়েশনে গোল হয়েছে ৪টি। জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে নয়ন বলেন, ‘আমার কোচিং অভিজ্ঞতায় দেখেছি, এরকম পরিস্থিতিতে আমাদের দেশের গোলরক্ষকরা গোল বাঁচাতে তাদের প্রপার টেকনিকটা ইউজ করে না। এখনকার মডার্ন ফুটবলে ওয়ান ভি ওয়ান সিচুয়েশনে গোলকিপারদের টেকনিকটা হচ্ছে ফাইভ পয়েন্ট ব্লক। এর মানে হচ্ছে শরীরের পাঁচটা অংশ দিয়ে একসাথে বল ব্লক করা। এই ব্লকটা হচ্ছে অনেকটা দেয়ালের মতো। এই পদ্ধতি ঠিকমতো প্রয়োগ করতে পারলে গোল হবার সম্ভাবনা ৭০ শতাংশ কমে যায়। সর্বশেষ স্বাধীনতা কাপে কোন গোলরক্ষককে ফাইভ পয়েন্ট ব্লক সিস্টেম প্রয়োগ করতে দেখিনি।’ এছাড়া নয়নের ভাষ্যমতেÑ ক্রস থেকে পজিশন সমস্যার কারণে (গোলরক্ষকরা বেশি ‘ইনে’ ছিল) স্বাধীনতা কাপে গোলকিপাররা রিসিভ করেছে আরও ২টি গোল। সেট পজিশন থেকে গোল হয়েছে ১টি। সবশেষে অন্যান্য কারণে আরও ৪টি গোল হয়েছে। স্বাভাবিক বা ভাল গোল হয়েছে ১৮টি। এখানে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্যÑ এই গোলগুলো সবগুলোই হজম করেছেন দেশীয় গোলরক্ষকরা। টোটাল গোলগুলোকে (৪৪) যদি শতকরা হিসেবে ধরা হয়, তাহলে দেখা যাবে এগুলোর মধ্যে ৫৯.০৯ শতাংশ গোল হয়েছে বাজে গোল (টেকনিক্যাল এ্যান্ড ট্যাকটিকাল কারণে)। এগুলোকে যদি আবার বিশ্লেষণ করা হয়, তাহলে দেখা যাবে এগুলোর মধ্যে ৩৪ শতাংশ গোল হয়েছে পজিশনাল কারণে। ফাইভ পয়েন্ট ব্লকের কারণে ৯ শতাংশ। ক্রস পজিশনাল কারণে গোল হয়েছে ৪.৫ শতাংশ, সেট পজিশনে ২ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণে ৯ শতাংশ। ‘যেহেতু আমি জাতীয় দলের গোলকিপার কোচ, তাই আমার পরিকল্পনা হচ্ছে হেড কোচ জেমি ডেকে স্বাধীনতা কাপের এই গোলগুলোর এ্যানালাইসিস জানানো এবং এ নিয়ে যতটা সম্ভব কাজ করা।’ যোগ করেন নয়ন। সেট পজিশন নিয়ে ব্যাখ্যা দেন নয়ন, ‘এক্ষেত্রে গোলরক্ষকরা বল ধরার আগে নিচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এতে তারা লো-ডাইভিংয়ের বলগুলো আয়ত্তে নিতে পারলেও টপ কর্নারের বলগুলো আয়ত্তে নিতে পারে না।’ মডার্ন গোলকিপিং প্রসঙ্গে নয়ন বলেন, ‘মডার্ন গোলকিপিং হচ্ছে স্পেস ম্যানেজমেন্ট, বলের গতি-প্রকৃতি অনুযায়ী অবিরাম দ্রুত নড়াচড়া এবং একইসঙ্গে গোল ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু আমাদের দেশে দেখছি শুধু গোল ম্যানেজমেন্ট নিয়েই কাজ করা হয়। অর্থাৎ ডিফেন্সের পেছনে যে জায়গাটা ফাঁকা থাকে, সেই স্থানটা কভার করা এবং গোল প্রটেক্ট করা হয় না। যারা কাজটা সফলভাবে করতে পারে, তারা হচ্ছে প্রো-এ্যাক্টিভ গোলকিপার। এ্যালিসন বেকার, ম্যানুয়েল নয়্যার, এ্যান্ডারসন, জনসন পিকফোর্ড ... এরা হচ্ছে মডার্ন ফুটবলের আইডল এবং বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা প্রো-এ্যাক্টিভ গোলকিপার। এদের মুভমেন্ট ও ফুটওয়ার্ক অন্যদের চেয়ে ভিন্নধাঁচের। এরা বক্সে বল এলে সেটা বিপজ্জনক হবার আগেই অংকুরেই বিনাশ করে দেন। আমাদের দেশে এ ধরনের গোলকিপারের বড়ই অভাব। এখনকার ফুটবলে প্রো-এ্যাক্টিভ গোলকিপারের খুবই গুরুত্ব। এ ধরনের প্রফেশনাল গোলকিপাররা ওয়ার্মআপের আগে দুই ভাগে (ফোম রোলার দিয়ে এবং শুধু হাতের ব্যায়াম) ১৫ মিনিটের বিশেষ একটি ‘প্রি-হ্যাব’ ট্রেনিং করে থাকে, যা তাদের অনেক কাজে লাগে, ম্যাচে তারা অনেক শক্তি অনুভব করেন।’ আরেক ধরনের গোলকিপার আছেন, যারা পজিশন ধরে রেখে বলটা প্রতিপক্ষ ফরোয়ার্ডদের মারার সুযোগ দেন এবং নিজের স্কিলের ওপর ভরসা করে বল সেভ করেন। এরা হচ্ছেন রি-এ্যাক্টিভ গোলকিপার। এ ধরনের গোলকিপিং হচ্ছে সেকেলে ধাঁচের। অথচ এ ধরনের গোলকিপারই বেশি দেখা যায় বাংলাদেশে! অস্ট্রেলিয়া থেকে এএফসি লেভেল-২ কোর্স করার পর (ভবিষ্যতে গোলকিপিং কোচিংয়ের শেষ ধাপ প্রো-লাইসেন্স কোর্স করার পরিকল্পনা আছে) নয়নের পরিকল্পনা হচ্ছে অচিরেই জাতীয় দলে প্রো-এ্যাক্টিভ গোলকিপিং নিয়ে কাজ করা। তবে একটা কাজ ঠিকই করেছেন নয়ন। জাতীয় দলের গোলরক্ষকদের মানসিক শক্তি বাড়াতে কাজ করা। সেটারই ফল দেখেছেন স্বাধীনতা কাপে। সেখানে চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোর টানা দ্ইু ম্যাচে টাইব্রেকারে মোট ৪টি শট আটকে দেয়া এবং নিজেরও পেনাল্টিতে গোল করা প্রসঙ্গে বলেন, ‘মানসিক শক্তি বা আত্মবিশ্বাস না থাকলে গোলকিপার পেনাল্টি শট মারতে পারবে না। জাতীয় দলে জিকোকে নিয়ে কাজ করেছি। তারই সক্ষমতা সে দেখিয়েছে স্বাধীনতা কাপে। এটা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।’ আরেকটি পরিকল্পনার কথা জানান নয়ন, ‘গত মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগের খেলা সব দলের গোলরক্ষকের খেলা পর্যবেক্ষণ করেছি। তাদের টেকনিকে বিস্তর দুর্বলতা ধরা পড়েছে আমার চোখে। এ নিয়ে আমার পরিকল্পনা হচ্ছেÑ বাফুফের সম্মতিতে ও তাদের আর্থিক সহায়তায় চার-পাঁচ কোচ মিলে লিগের ১৩ দলের ২৬ গোলকিপার নিয়ে দুই বেলা সেশনে সপ্তাহখানেকের একটি সংক্ষিপ্ত একটি ট্রেনিং কোর্স বা আবাসিক ওয়ার্কশপ (মনোবিজ্ঞানের ক্লাসসহ) করানো।’ নয়ন আরও যোগ করেন, ‘এই ওয়ার্কশপ করলে আসন্ন লিগে ওই গোলকিপাররা আর সেই ভুলগুলো করবে না, যেগুলো তারা গত লিগে করেছিল। ফলে তাদের এই পারফরম্যান্সে ক্লাবগুলো উপকৃত হবে এবং জাতীয় দলেও এর সুপ্রভাব পড়বে।’ তবে কোন কারণে এই ট্রেনিং কোর্স সম্ভব না হলেও প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, তৃতীয় বিভাগ ও পাইওনিয়ার ফুটবলের গোলকিপারদের নিয়ে করতে চান নয়ন। ‘যেকোন লেভেলে গোলরক্ষক সৃষ্টি করাটাই হলো মূল কথা, যাতে লাভবান দেশের ফুটবল।’ ফেডারেশন ও স্বাধীনতা কাপের খেলাগুলো দেখে নয়নের মনে হয়েছে আগের চেয়ে আমাদের গোলরক্ষকদের সাহস-আত্মবিশ্বাস এবং উইনিং মেন্টালিটি অনেক বেড়েছে। এটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। এর সুপ্রভাব জাতীয় দলেও পড়েছে। স্বাধীনতা কাপে ৪৪ গোলের মধ্যে ২৬টিই বাজেভাবে খেয়েছে গোলকিপাররা। তার মানে মোট গোলের অর্ধেকেরও বেশি। একজন গোলকিপার কোচ হিসেবে এটা নয়নকে অবশ্যই ভাবায়। অবশ্যই এর উত্তরণের উপায় আছে। তিনি বলেন, ‘কোচ হিসেবে শুধু আমি আমার জায়গা থেকেই কাজ করলে হবে না। এক্ষত্রে সবার সমষ্টিগতভাবে কাজ করার কোন বিকল্প নেই। গোলকিপিং অনেক টেকিনিক্যাল একটি বিষয়। তাই স্পেশালাইজেশন কোচ (আধুনিক কোচিং জ্ঞানসম্পন্ন) ছাড়া এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। কারণ একজন গোলরক্ষক যদি ভুল টেকনিক শিখে প্রিমিয়ার লিগের মতো আসর খেলে ১০-১৫ বছর ধরে, তাহলে সেই টেকনিকগুলো তার মস্তিষ্কে গেঁথে যায়, তাতে সে অভ্যস্ত হয়ে যায়। যতই তাকে নতুন বা শুদ্ধ কৌশল শেখানো হোক না কেন, সেগুলো সে আয়ত্ত করতে পারবে না। ফলে তার ওই ভুল কৌশলের জন্য তার ক্লাব ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এর চরম মাসুল দেয়। আমাদের ক্লাব ফুটবলে এটাই হচ্ছে গোলকিপারদের সমস্যা।’ কাজেই উপায় একটাইÑ শুদ্ধ টেকনিক শেখাতে হবে তৃণমূল পর্যায়ের বা একেবারে অল্পবয়সী গোলকিপারদের। ১২ বছরের এক বালককে ট্রেনিং দিলে সেটা শিখতে তার খুব অল্প সময় লাগবে, অথচ ২২-২৫ বয়সীদের সেটা আত্মস্থ করতে প্রচুর সময় লাগবে অথবা তারা সেটা শিখতেই পারবে না! অল্প বয়সী যারা, তাদের ফুটবলটা শুধু হাত-পা দিয়েই খেললে চলবে না, খেলতে হবে মাথা দিয়ে। মাথা মানে মেধা বা বুদ্ধি দিয়ে। গোলকিপারদের আধুনিক কোচিং করিয়ে জাতীয় দলকে লাভবান করানোর জন্য যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তা হচ্ছে ন্যাশনাল কারিকুলাম। উন্নত ফুটবল দেশগুলোতে বা ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে এই ন্যাশনাল কারিকুলাম আছে। এটা হচ্ছে কোচিং গাইডেন্সের লিখিত রূপ, যা বই আকারে ফুটবল ফেডারেশনে সংরক্ষিত থাকে। নির্দিষ্টভাবে কোন বয়সের, কেমন ফিটনেসের গোলকিপারদের কোন্ পরিকল্পনা অনুযায়ী বা কোন্ পদ্ধতিতে কোচিং-ট্রেনিং করানো হবে, সেগুলোর লিখিত ম্যানুয়েল হচ্ছে এই ন্যাশনাল কারিকুলাম। নয়ন বলেন, ‘আমাদের দেশে এরকম কিছু নেই। আমাদের এখানে যা হয়, তা হচ্ছে ধরুন অ-১৪ লেভেলে হয়তো যতটুকু ট্রেনিং করানো দরকার, তার চেয়ে বেশি করানো হচ্ছে বা অ-১৬ লেভেলে যতটুকু ট্রেনিং করানো দরকার, তারচেয়ে হয়তো একটু কম করানো হচ্ছে। এর ফলে ঘাটতি নিয়ে একজন ফুটবলার যখন আরও ওপরের লেভেলে খেলবে, তখন একটা গ্যাপ কিন্তু থেকেই যাবে। ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তার পারফরম্যান্সে। প্রিমিয়ার লিগের বেলাতেও একই কথা প্রযোজ্য। এই সমস্যা উত্তরণে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) উদ্যোগ নিতে পারে। এখানে যারা টেকনিক্যাল ডিরেক্টর আছেন, অভিজ্ঞ-সিনিয়র কোচ বা জাতীয় দলে যারা গোলকিপিং কোচিং করিয়েছেন, তাদের দিয়ে ন্যাশনাল কারিকুলাম বইগুলো লিখিয়ে নিতে পারে। তাহলে বইগুলো বাফুফে এবং দেশের ফুটবলের জন্য পরম সম্পদ হয়ে থাকবে। এই বইয়ে অবশ্যই আধুনিক কোচিংয়ের সর্বশেষ পদ্ধতিগুলো থাকতে হবে। তাছাড়া এখন প্রতিনিয়তই বিশ্বজুড়ে গোলকিপিং কোচিংয়ের ধরণ পাল্টে যাচ্ছে। বইয়ে সেগুলোর আপডেট দিতে হবে। বাফুফে যদি অন্যদের মতো আমাকেও এরকম কোন দায়িত্ব দিতে চায়, তাহলে নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে কাজটা সানন্দেই করতে রাজি আছি। তাছাড়া ভবিষ্যতে নিজ উদ্যোগে এরকম কিছু করার পরিকল্পনাও আমার আছে। আমার অনেক খারাপ অনুভূতি হয়, যখন দেখি কোন গোলরক্ষক গায়ের শক্তি দিয়ে বল সেভ করতে যায়। অথচ একটা ছোট স্টেপ দিয়েই কিন্তু এটা করা যায়। এগুলো দেখেই গোলকিপিং কোচিং কারিকুলাম লেখার উপলব্ধিটা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে গোলকিপারদের জন্য গাইডলাইন হিসেবে কাজে দেবে।’ বিভিন্ন কোচিং কোর্স করার সুবাদে নয়ন জেনেছেন, কোন বয়সের গোলকিপারকে কি ধরনের এবং কতটা ট্রেনিং দিতে হবে। বাচ্চাদের ট্রেনিং করানোর ধরনটা হলো ‘লার্ন উইথ ফান।’ অনুশীলনে বা ম্যাচে ভুল হলে তাকে গঠনমূলক সমালোচনা (নেতিবাচক সমালোচনা করতে হবে ইতিবাচকভাবে, নয়তো শুধু নেতিবাচক সমালোচনা করলে সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়বে, আত্মবিশ্বাস কমে যাবে এবং আরও খারাপ খেলবে ও ভুলের পরিমাণও বাড়বে) করতে হবে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বা পরিপক্ব হবার সঙ্গে সঙ্গে তাকে সমালোচনা করার হার বাড়িয়ে দিতে হবে। তবে নয়ন একটু দুভার্গা, কারণ সময়-সুযোগের অভাবে ছোটদের নিয়ে কখনই কাজ করতে পারেননি, ‘আমার কোচিং ক্যারিয়ারই শুরু হয়েছে ক্লাব ফুটবল বা সিনিয়র ফুটবলারদের নিয়ে। তবে অদূর ভবিষ্যতে কেউ যদি প্রপার প্ল্যান নিয়ে আমাকে এ বিষয়ে কাজে লাগাতে চায়, তাহলে ছোটদের নিয়ে অবশ্যই কাজ করার ইচ্ছে আছে।’
×