ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

থাইল্যান্ডে ক্ষমতা নিয়ে নিচ্ছেন রাজা

প্রকাশিত: ০৭:০১, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

থাইল্যান্ডে ক্ষমতা নিয়ে নিচ্ছেন রাজা

থাইল্যান্ডের একদিকে সেনাবাহিনী ও রাজনীতিকরা নিজেদের মধ্যে বিবাদে লিপ্ত, অন্যদিকে রাজা ভাজিরালোংকর্ন অধিক থেকে অধিকতর ক্ষমতা করায়ত্ত করছেন। বর্তমান রাজা দু’বছর ধরে সিংহাসনে আসীন। গোড়া থেকেই তিনি তার প্রায় ৭ কোটি প্রজাকে বিচলিত ও অস্বস্তিকর অবস্থান রেখেছেন। মাহা ভাজিরালোংকর্নের বাবা রাজা ভুমিবল ২০১৬ সালে মারা গেলে ৯ সপ্তাহ তিনি সিংহাসন গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান যদিও এই সিংহাসনটির জন্য তিনি কয়েক দশক অপেক্ষা করেছিলেন। এই বিলম্বের উদ্দেশ্য প্রয়াত রাজার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনই শুধু ছিল না, এর মাধ্যমে তিনি সামরিক জান্তাকে এই সঙ্কেতও পাঠিয়েছিলেন যে তিনি নিজেই তাঁর নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে বদ্ধপরিকর। মাত্র ক’দিন আগে তাঁর অভিষেকের তারিখ ধার্য হয়েছে ৪ মে এবং সেটা তার নিজের সিদ্ধান্ত অনুসারে। রাজা ভাজিরালোংকর্ন বেশিরভাগ সময় বিদেশে কাটিয়ে থাকেন এবং সেটা করেন মিউনিখের কাছে অতীব ব্যয়বহুল এক বাসভবনে। গণভোটে ইতোমধ্যে নতুন সংবিধান অনুমোদিত হওয়ার পরও তিনি এতে সংশোধনী আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছেন যাতে করে ওই সংশোধনী বলে দূর থেকেও তার পক্ষে দেশ শাসন করা সহজতর হয়। প্রয়াত রাজা ভুমিবল ৭০ বছর সিংহাসনে ছিলেন। রাজশাসনের প্রতি তার একাগ্রতা ও নিষ্ঠার কোন অভাব ছিল না। অংশত এই কারণে এবং অংশত নিজেদের বৈধতাকে জোরদার করার একটা উপায় হিসেবে সামরিক সরকারগুলো রাজতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাবনত ছিল বলেই রাজা ভুমিবল সর্বজনশ্রদ্ধেয় ছিলেন। নতুন রাজার প্রতি আনুষ্ঠানিক আনুগত্য এখনও অটুট আছে। তবে আড়ালে অনেকেই তাঁকে গালিগালাজ করে। তার ব্যক্তিগত জীবন নোংরামিতে ভরা। অসংখ্য নারীর সঙ্গে তিনি প্রেমের জোয়ারে ভেসেছেন। কারও কারও গর্ভে তার সন্তান হলেও নিজের পিতৃত্বকে অস্বীকার করেছেন। এমনকি এক প্রেমিকার আত্মীয়স্বজনকে জেলেও পুরেছেন। রাজার প্রতি শিষ্টাচার কেমন হওয়া উচিত সে ব্যাপারে তিনি পূর্ণ সচেতন যদিও তার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধাবোধ কারোর আছে কিনা সন্দেহ। নিজের এক পদলেহী ব্যক্তিকে পদোন্নতি দিয়ে তিনি এয়ার চীফ মার্শাল বানিয়েছেন। তার মদের প্রতি আসক্তি সর্বজনবিদিত। ফিতা কাটা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী প্রদান করার মতো বাজার গতানুগতিক কাজগুলো তিনি তার চেয়ে ঢের জনপ্রিয় বোনের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। থাইল্যান্ডে রাজার সম্পর্কে এমন কিছু লিখতে যাওয়া বিপজ্জনক। তিন থেকে ১৫ বছরের জেল হতে পারে। এ সংক্রান্ত আইনটি অতি কঠোর। রাজতন্ত্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণœœ হতে পারে এমন যে কোন কিছু দমনের কাজে এই আইনটি প্রয়োগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে। এভাবে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে রাজা ভাজিরালোংকর্ন ব্যক্তিগত ক্ষমতা পুঞ্জীভূত করছেন। ২০১৭ সালে সরকার তাকে ক্রাউন প্রপার্টি ব্যুরোর (সিপিবি) ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দিয়ে দেয়। এই সংস্থাটি কয়েক দশক ধরে রাজকীয় ভূসম্পত্তি ও বিনিয়োগ দেখাশোনা করে আসছে। এই ভূসম্পত্তির মূল্যই হবে ৪ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি। ২০১৮ সালে সিপিবি ঘোষণা করে যে সব রাজকীয় পরিসম্পদ এখন থেকে বাজার ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে গণ্য হবে। এর ফলে রাজা থাইল্যান্ডের তৃতীয় বৃহত্তম ব্যাংক এবং অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় শেয়ার হোল্ডারে পরিণত হলেন। তা ছাড়া অন্যান্য ফার্ম তো আছেই। সিপিবির সহায়তায় রাজা প্রধান রাজমহলের কাছাকাছি মধ্য ব্যাংকের একটি এলাকাকে ঢেলে সাজাচ্ছেন। এর জন্য গত সেপ্টেম্বর মাসে বন্ধ হয়ে গেছে ১০২ বছরের পুরনো রেসকোর্স ময়দান রয়াল টার্ফ ক্লাব। একই কারণে একই সময় বন্ধ হয়ে গেছে পার্শ্ববর্তী ৮০ বছরের পুরনো চিড়িয়াখানা। কাছাকাছি অবস্থিত দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাগ্যে কি আছে তা অনিশ্চিত। সিপিবি এসব কর্মকা-ের ব্যাখ্যা না দিলেও থাইয়েরা ধরে নিয়েছে যে রাজা আরও বৃহত্তর পরিসরজুড়ে তার প্রাসাদ চান। রাজা ভাজিরালোংকর্ন প্রিভি কাউন্সিলের ওপরও হাত দিয়েছেন। অন্যান্য কাজের মধ্যে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী ঘোষণায়ও এই সংস্থার ভূমিকা আছে। কাউন্সিলে একসময় এমন সব ব্যক্তি ছিলেন যারা তাঁর রাজা হওয়ার দৃঢ় বিরোধিতা করেছিলেন। এখন এতে সামরিক বাহিনীর অনুগত লোকদের দিয়ে ঠাসা হয়েছে। রাজদরবার লৌহকঠিন শৃঙ্খলার দ্বারা পরিচালিত। তাই রাজার অনৈতিক বা গর্হিত আচরণ সম্পর্কে আর কোন তথ্য ফাঁস হচ্ছে না। সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল এমন কিছু ব্যক্তিকে স্থান নিতে হয়েছে কারাগারে ধর্মীয় ব্যবস্থার ওপরও রাজার কর্তৃত্ব বেড়েছে। ২০১৬ সালে সরকার তাকে থাই বৌদ্ধধর্মের সর্বোচ্চ সংস্থা সংঘ সুপ্রীম কাউন্সিলের সদস্য নিয়োগ করার এবং প্রধান পুরোহিত মনোনীত করার ক্ষমতা প্রদান করে। রাজা সেনাবাহিনীর ওপরও প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছেন। গত সেপ্টেম্বরে কমান্ডার-ইন-চীফ পদে নিযুক্ত আপিরাত কংসোমপং রাজার পছন্দের ব্যক্তি। আগামী দু’বছর তিনি একটি রেজিমেন্ট ও একটি ব্যাটালিয়নকে ব্যাংককের বাইরে নতুন কোন অবস্থানে সরিয়ে নেবেন। নগরীর নিরাপত্তা তখন ন্যস্ত হবে এলিটবাহিনী রয়াল গার্ড কমান্ডের ওপর যা হচ্ছে সরাসরি রাজার নিয়ন্ত্রণে। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×