ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে জয়ের স্বাদ পেল খুলনা টাইটান্স

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

অবশেষে জয়ের স্বাদ পেল খুলনা টাইটান্স

মিথুন আশরাফ ॥ এত অল্প রানের টার্গেট। অথচ এই টার্গেটই কিনা রাজশাহী কিংসের সামনে পাহাড়সহ মনে হয়েছে। এই রানই অতিক্রম করতে পারল না রাজশাহী কিংস। খুলনা টাইটান্স ১২৯ রানের টার্গেট দিয়েও ম্যাচ জিতে নিয়েছে। কিভাবে সম্ভব হয়েছে? স্পিনার তাইজুল ইসলাম যে জাদু দেখিয়েছেন। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এমনই ঘূর্ণি জাদু দেখান তাইজুল, ২৫ রানে হারে রাজশাহী। এই ম্যাচে জয় পেয়ে টানা চার হারের পর প্রথম জয় পেল খুলনা। ঢাকা পর্বে একের পর এক হারের তিক্ত স্বাদ থেকে সিলেট পর্বের প্রথমদিনেই মুক্তি পায় খুলনা। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের খুলনা শিবিরে স্বস্তিও ফেরে। ঢাকায় প্রথম পর্বে টানা চার ম্যাচ হেরেছে খুলনা। সিলেট পর্ব মঙ্গলবার শুরু হয়েছে। এই পর্বের প্রথম ম্যাচেই খেলতে নামে খুলনা। প্রতিপক্ষ থাকে রাজশাহী। ম্যাচটিতে টস জিতে আবার ব্যাটিংও নেয় খুলনা। বড় স্কোর গড়তে না পারলেও ভাগ্য বদল হয়েছে। আগে ব্যাট করে ৯ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১২৮ রান করতে পারে খুলনা। আরিফুল হক ২৬ রান করতে পারেন। মেহেদী হাসান মিরাজ ও ইসুরু উদানা ২টি করে উইকেট নেন। জবাব দিতে নেমে ১৯.৫ ওভারে ১০৩ রান করতেই গুটিয়ে যায় রাজশাহী। ৩টি করে উইকেট নেন তাইজুল ইসলাম ও জুনাইদ খান। ২টি উইকেট নেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তাইজুল ৪ ওভার বল করে ১০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরাও হন। এত কম স্কোর, ‘লো-স্কোরিং’ ম্যাচ, তাতেও রাজশাহীর বারোটা বাজে। দলের ব্যাটসম্যানরাও স্পিনার তাইজুল ও রিয়াদের ঘূর্ণি এবং পাকিস্তান পেসার জুনাইদের গতির সামনে কুলিয়ে উঠতে পারেননি। দেখতে দেখতে ৭৪ রানেই ৮ উইকেট হারিয়ে বসে রাজশাহী। মিরাজ (২৩) শুরুতে নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করেন। বাকিরা এমনই ব্যর্থ হন, রাজশাহীর হারই হয় নিয়তি। ৫৫ রানেই যখন ৬ উইকেট হারায় রাজশাহী, দলের সেরা ব্যাটসম্যান লরি ইভান্স, মুমিনুল হক, মিরাজ, সৌম্য সরকার, জাকির হাসান, রায়ান টেন ডয়েশ্চেটকে হারায়; তখনই আসলে রাজশাহীর হার দেখা হয়। ধারণাই করা হয়, এত অল্প টার্গেট নিয়েও এবার হারতে চলেছে রাজশাহী। শেষপর্যন্ত তাই-ই হয়। তবে ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় ও চতুর্থ বলে যখন মিরাজ ও সৌম্যকে আউট করে দেন তাইজুল, তখনই রাজশাহী ইনিংসের বারোটা বেজে যায়। শেষে গিয়ে যখন হার নিশ্চিতই হয়ে যায় রাজশাহীর, তখন জুনাইদ আরও ২টি উইকেট শিকার করে নেন। রাজশাহীর যে অবস্থা হয়েছে, তাতে ১০০ রান করাই কঠিন ছিল। শেষপর্যন্ত আরও ৩ রান বেশি করতে পারে। খুলনা শুরু থেকেই মহাবিপদে পড়ে। দলের ১৫ রানেই জহুরুল ইসলাম অমিকে হারায়। এরপর জুনায়েদ সিদ্দিকী ও ডেভিড মালান মিলে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু মিরাজ আর উদানার স্পিন জাদুর সামনে কুলিয়ে উঠতে পারেননি খুলনা ব্যাটসম্যানরা। দলের ৩৭ রানে জুনায়েদ ও ৪৯ রানে মালানকে আউট করে দেন মিরাজ। বিপদে পড়ে যায় খুলনা। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, কার্লোস ব্রেথওয়েট, আরিফুল হক, ডেভিড উইজ থাকায় স্কোরবোর্ড মজবুত হওয়ার ভরসাও থাকে। কিন্তু রিয়াদ, ব্রেথওয়েট ব্যর্থ হন। বিপর্যস্ত দলের ভরসা হয়ে উঠতে পারছেন না এ দুই ব্যাটসম্যান। ৮২ রানের মধ্যে আরও তিনটি উইকেট হারিয়ে বসে খুলনা। তাতে করে বড় স্কোর হওয়ার সবরকম আশাই শেষ হয়ে যায়। আরিফুল ও উইজ (১৩) যদি সপ্তম উইকেটে ৩৪ রানের জুটি না গড়তেন, তাহলে ১২০ রানের উপরেই খুলনা স্কোর গড়তে পারত না। খুলনার জুনায়েদ সিদ্দিকীই শুধু ভাল ব্যাটিং করছেন। তাও আহামরি কিছু করতে পারছেন না। বাকিরা তো নিজেদের মেলেই ধরতে পারছেন না। তাতে করে বারবার খুলনার হার হচ্ছে। এবার বোলারদের নৈপুণ্যে খুলনা সেই হার থেকে বের হতে পেরেছে। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা যদি এভাবেই ব্যর্থ হতে থাকেন, তাহলে শক্তিশালী দলগুলোর সামনে খুলনা কোনভাবেই কুলিয়ে উঠতে পারবে না। খুলনার যে এবার কী অবস্থা হচ্ছে। গত আসরে দলটি ‘প্লে অফ’ খেলেছে। শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলেছিল। এবার ঢাকা পর্বে দলটি টানা হারের শিকার হয়েছে। খুলনা শিবিরে অশান্তি যুক্ত হয়ে গিয়েছিল। সিলেট পর্বে প্রথমদিনেই সেই অশান্তি দূর করেছে খুলনা। ঢাকা পর্বে রাজশাহীর কাছে বড় ব্যবধানেই হেরেছিল খুলনা। ৭ উইকেটে হেরেছিল। সেই ম্যাচেও অল্প রানেই অলআউট হয় খুলনা। রাজশাহী অনায়াসেই জিতে। এবারও স্কোর মজবুত করতে পারেনি খুলনা। তবে তাইজুল এবার এতটাই দুর্দান্ত বোলিং করেন, তাতে প্রতিশোধ নেয়ার সঙ্গে লীগে প্রথম জয়ও তুলে নেয় খুলনা। স্কোর ॥ খুলনা টাইটান্স ইনিংস ১২৮/৯; ২০ ওভার (অমি ১৩, জুনায়েদ ১৪, মালান ১৫, রিয়াদ ৯, শান্ত ১১, ব্রেথওয়েট ৮, আরিফুল ২৬, উইজ ১৩, তাইজুল ০, শরিফুল ২*, জুনাইদ ১*; মিরাজ ২/২১, আরাফাত ২/২৫, উদানা ২/৩৬)। রাজশাহী কিংস ইনিংস ১০৩/১০; ১৯.৫ ওভার (মুমিনুল ৭, ইভান্স ০, মিরাজ ২৩, সৌম্য ২, ডয়েশ্চেট ১৩, জাকির ৭, জঙ্কার ১৫, উদানা ৬, আরাফাত ১৫, রাব্বি ১৩, মুস্তাফিজ ০*; তাইজুল ৩/১০, জুনাইদ ৩/২৬, রিয়াদ ২/১২)। ফল ॥ খুলনা টাইটান্স ২৫ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ তাইজুল ইসলাম (খুলনা টাইটান্স)।
×