ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্টেডিয়ামে গিয়ে জাতির কাছে মাফ চাইতে বললেন ফখরুল

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

স্টেডিয়ামে গিয়ে জাতির কাছে মাফ চাইতে বললেন ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারচুপির জন্য সরকারকে স্টেডিয়ামে গিয়ে জাতির কাছে মাফ চাইতে বললেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার দুপুরে ছুরিকাঘাতে আহত যশোর সদরের যুবদল কর্মী ফয়সালকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সংলাপের পরিবর্তে শুভেচ্ছা বিনিময়ের কথা বলে প্রতারণা করছে আওয়ামী লীগ। ফখরুল বলেন, সংলাপ নয়, শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য সব দলকে প্রধানমন্ত্রী ডাকবেন বলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক যে কথা বলেছেন তাতে মনে হয় ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে একেক সময় একেক কথা বলছে ক্ষমতাসীনরা। ফখরুল বলেন, প্রত্যেক জেলায় বিরোধী মতের যারা আছে তাদের খুঁজে খুঁজে বের করা, তাদের ওপর অত্যাচার করা, শারীরিক নির্যাতন, খুন, তাদের বাড়িঘর দখল করা, লুট করাসহ চারম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তাদের এই অপকীর্তি, নির্বাচনকে পক্ষে নেয়ার জন্য যত অপকৌশল তারা নিয়েছে সেটা প্রকাশ হয়ে আসছে। প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছা বিনিময় করতে ডাকলে যাবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদের সাহেবকে গিয়ে বলেন, জাতির সঙ্গে যে ভয়াবহ প্রতারণা করেছেন, জাতিকে বঞ্চিত করেছেন সেটা যেন তারা স্টেডিয়ামে গিয়ে মাফ চান। তারপর অন্যান্য দল, মত সবার সঙ্গে আলোচনা করার একটা পথ তৈরি হবে। তিনি বলেন, পুনর্নির্বাচনের যে দাবি আমরা করেছি এজেন্ডায় তা না থাকলে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ডাকার কোন মানে হবে না। তিনি বলেন, রাজনীতিতে যে ব্যালান্স থাকে, সেটা নষ্ট হয়ে গেছে। ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ ফাঁকা মাঠে গোল দেবে এবং তা কেউ জানবে না- এরকম একটি নীলনক্সা করা হয়েছিল। কিন্তু জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তাদের অপকীর্তি এখন প্রকাশ পেয়ে গেছে। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে লজ্জা বলে একটা কথা থাকে, সেই লজ্জা-শরমও তাদের নেই। তাই বলছে মহাবিজয়। এমন মহাবিজয় যে, সারা দেশের মানুষের মুখে হাসি নেই কোথাও। আমি এখন পর্যন্ত কোথাও কোন হাসি দেখিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভোটের পরদিন ৩১ ডিসেম্বর যশোরে যুবদল কর্মী ফয়সালের ওপর হামলার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মীরা দায়ী। তিনি বলেন, গোটা দেশ এখন হাসপাতালে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার জোর করে ক্ষমতা দখল করেছে। এরপর তারা প্রত্যেকটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নে বিরোধী মতের লোকজনকে খুঁজে খুঁজে বের করে অত্যাচার করছে, তাদের বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট দখল করছে। এর মাধ্যমে একটা চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। ফখরুল বলেন, ফয়সালকে ছুরিকাঘাত করেছে কয়েক জায়গায়। চিকিৎসকরা বললেন, প্রায় আট ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসা দেয়া না গেলে তার ক্ষতি হতে পারে। নির্বাচনের দিন নিহত এক বিএনপি কর্মীর পরিবারকে সান্ত¦না দিতে সোমবার সিলেটের বালাগঞ্জ সফরে যাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন সেখানে নেতাকর্মীদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, মহিলাদের ওপর গুলি করা হয়েছে, এ বিষয়গুলো জাতির সামনে উঠে আসছে। এ সময় বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, যশোর সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আজম প্রমুখ। সংলাপের পরিবর্তে শুভেচ্ছা বিনিময়ের কথা বলে প্রতারণা করছে আওয়ামী লীগ- রিজভী ॥ সংলাপের পরিবর্তে শুভেচ্ছা বিনিময়ের কথা বলে আওয়ামী লীগ প্রতারণা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের কথা ও কাজে মিল নেই। তারা একবার বলে সংলাপ, পরে আবার বলে শুভেচ্ছা বিনিময়। এটি জনগণের সঙ্গে সরাসরি প্রতারণা। তিনি বলেন, সরকার গার্মেন্টস নিয়ে বিপজ্জনক খেলায় মেতেছে। এ শিল্পকে ধংসের দিকে ঠেলে দেয়ার পাঁয়তারা করছে তারা। গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন ঠেকাতে হত্যা, লাঠিচার্জে ক্ষতবিক্ষত করা ও ব্যাপক গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে কোন সমাধান আসবে না। অবিলম্বে দেশের রফতানি আয়ের প্রধান উৎস এই গার্মেন্টস শিল্পকে রক্ষা করতে সব পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু অলীক তৃতীয় পক্ষ বা অন্যের হাত আছে এসব বলে সঙ্কটের সমাধান হবে না। রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে সাজানো মামলায় বন্দী করার মূল কারণই ছিল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কারণ, খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে ভোট ডাকাতির এ রকম নির্বাচন সম্ভব ছিল না। খালেদা জিয়া দেশের জনগণের মাঝে উচ্চারিত একজন জনপ্রিয় নেত্রী। তিনি জীবনে কখনও নির্বাচনে পরাজিত হননি। পাঁচটি ও সবশেষে তিনটি আসনে তিনি দেশের যে প্রান্ত থেকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন সেখানেই তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এই জনপ্রিয়তাই তার জন্য কাল হয়েছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে মুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে রিজভী বলেন, মানুষের বিশুদ্ধ নিশ্বাস নেয়ার জন্য গণতন্ত্রের মুক্ত বাতাস প্রবাহিত করতে হবে। এ জন্য দেশের জনগণের ঐক্য ও সংহতি অপরিহার্য। আর জনগণের ঐক্যের প্রতীক খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার মধ্য দিয়েই গণতন্ত্রের বিজয় নিশ্চিত হবে। রিজভী বলেন, সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। গত কয়েকদিনে কয়েক দফা চালের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি চালের দাম এক সপ্তাহে বেড়েছে ছয় থেকে আট টাকা। সরকারদলীয় সিন্ডিকেটের লোকেরাই কারসাজি করে এই দাম বৃদ্ধি করছে। ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানোর কথা বলে আওয়ামী লীগ এক সময় ভোট চাইলেও বর্তমানে মোটা চালের দামও ৫০ টাকার নিচে নয়। অন্যান্য চাল ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
×