ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিকের শিক্ষকদের সন্তানরা কিন্ডারগার্টেনে নয়

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

প্রাথমিকের শিক্ষকদের সন্তানরা কিন্ডারগার্টেনে নয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাদেশের সকল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অভিন্ন লেসন প্ল্যান বা পাঠ পরিকল্পনা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। নতুন এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে একই সময়ে সকল স্কুলে একই পাঠদান হবে। এছাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের সন্তানদের কিন্ডারগার্টেন বা এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পড়া বন্ধ করতে আগের একটি নির্দেশনাকে সক্রিয় করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে এসব উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেছেন, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত ও দুর্নীতি রোধে এসব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঢাকা জেলার সাভার, ধামরাই, দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা এবং শিক্ষকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন ও আকরাম-আল-হোসেন। এ সময় মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের বিষয়ে সচিবও কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বলেন, প্রাথমিকের শিক্ষকের সন্তান (শিক্ষার্থী) কেজিতে পড়তে পারবে না। এটা কঠিন। তবে আমরা এমন সিস্টেম চালু করতে চাই যাতে কেজির শিশুরা আমাদের এখানেই আসে। আপনাদের অনেক সমস্যা আছে আমি জানি। শিক্ষকদের মা-বাবার ভূমিকায় আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা তাদের ভালভাবে তৈরি করতে পারলে আগামী বাংলাদেশ ভালভাবে তৈরি হবে। আমি লক্ষ্য করছি প্রাইমারিতে পড়ে না খালি কেজি স্কুলের দিকে যায়। এটার মানে কী? কেজি স্কুলের মাস্টাররা তো বেতনও পায় না, আপনারা যতটা পান। আমার দাদা প্রাইমারির শিক্ষক ছিল, ভাঙ্গা সাইকেল, বেড়ার সঙ্গে লাগানো থাকত। সব সাইকেল নিতাম, ওই মাস্টারের সাইকেল নিতাম না, কিছু দূর গেলে চেইন পড়ে যেত। আজকে আপনাদের সেই ভাঙ্গা সাইকেল নাই। এখন সবার মোটরসাইকেল। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা হালাল রুজি করতে চাই, হালাল খেতে চাই। আমাদের দায়িত্বগুলো অন্তত পালন করি। আমরা সঠিক সময়ে স্কুলে যেতে চাই, ঠিক সময়ে স্কুল থেকে আসতে চাই। আমাদের ছেলেমেয়েদের ভাল শিক্ষা দিতে চাই। যাতে তারা নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। শিক্ষকদের তিনি বলেন, আমি লক্ষ্য করেছি আপনাদের বদলি নিয়ে টিও অফিসে ঝুট-ঝামেলা হয়। অনেক দালাল-ফালাল আপনাদের পেছনে লাগানো আছে। আমি এগুলো টলারেট করব না। কোন শিক্ষা কর্মকর্তা যদি আমার শিক্ষকদের হয়রানি করেন, আমি তাদের ক্ষমা করব না। কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপনাদের মাথা তারা যেন নষ্ট করতে না পারে। আমি দেখছি এই শিক্ষককে এখানে বদলি করে, ওখানে বদলি করে, এর ভিতর দিয়ে টাকা-পয়সা নেয়া হচ্ছে। আবার শিক্ষকদের ভিতরে কিছু শ্রেণী আছে তারা আবার টিও সাহেবের বগলে সুন্দরভাবে বসে আরেক শিক্ষকের কিভাবে ক্ষতি করা যায়- করে না? মন্ত্রী আরও বলেন, আমি সরকারী কর্কচারী-কর্মকর্তা না, আমি আপনাদের ভোটে নির্বাচিত লোক, সরাসরি আমার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলবেন। আমার দরজা সকলের জন্য খোলা থাকবে। যে কোন সমস্যা নিয়ে, আমার বিরুদ্ধে হলেও আমাকে বলবেন। ভবিষ্যতে যেন কেজি স্কুলের ছেলেরা আপনার স্কুলে যেতে চায়, আপনার স্কুলের ছেলেরা কেজিতে যেতে না চায়। ধন্যবাদ আপনাদেরকে। আর যে স্কুল এটা করতে পারবেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে পুরস্কৃত করব। বইয়ের বোঝা কমানোর কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, একটা শিশুর পক্ষে এতগুলো বই। বইগুলো নিতে ওদের কষ্ট হয়। আমরা চাচ্ছি মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করলে কেজির বইয়ের ভার কমবে। শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য কমানোর উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বেতন বৈষম্য কেন থাকবে। আপনাদের অনেক সমস্যা আছে আমি জানি। জানা গেছে, দেশের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সপ্তাহের কোন দিন, কোন বিষয়ের কতটুকু অংশ পড়ানো হবে তা নির্ধারণ করে দেয়া হবে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই অনুসরণ করবে সেই ‘পাঠ পরিকল্পনা’ বা লেসন প্ল্যান। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) এই পাঠ পরিকল্পনার একটি খসড়া এরই মধ্যে তৈরি করেছে। মঙ্গলবার অনুষ্ঠানে সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেছেন, ওই লেসন প্ল্যান চূড়ান্ত করে প্রত্যেক স্কুলে পাঠিয়ে দেব। বাংলাদেশের প্রত্যেক স্কুলের লেসন প্ল্যান হবে এক রকম। সারাদেশে একই লেসন প্ল্যানে পড়ানো হবে। নেপকে দিয়ে লেসন প্ল্যান তৈরি করিয়েছি। এটা চূড়ান্ত করার পরে প্রত্যেক স্কুলে পাঠিয়ে দেব। ঢাকার নীলক্ষেত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যে পাঠদান হবে পঞ্চগড়ের একটা প্রত্যন্ত স্কুলের বাংলায় সেই একই পাঠ হবে। এতে মনিটরিং সহজ হবে জানিয়ে সচিব বলেন, স্কুলে গিয়ে কর্মকর্তারা মনিটরিং করবেন যে টিচারের কোনটি পড়ানোর কথা ছিল, তিনি কোথায় পড়াচ্ছেন। মনিটরিংয়ের মাধ্যমে করাপশনকে জিরো করার জন্য এ পদ্ধতি অবলম্বন করেছি। মনিটরিং সুবিধার জন্য এমনটি করা হবে জানিয়ে সচিব বলেন, মনিটরিং কার্যক্রমটা জোরদার করতে হবে। উপজেলায় যেসব কর্মকর্তা আছেন, তাদের একেকটা স্কুলের মেনটর নিয়োগ করতে পারি। এই দায়িত্ব অর্পণ করা হলো। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা প্রত্যেক জেলায় একজন করে মেন্টর নিয়োগ করেছি। নিজের জেলা মাগুরা ও পাশের জেলা যশোরের দায়িত্বে সচিব। প্রত্যেক কর্মকর্তাকে নিজ জেলা অথবা তার পাশের জেলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পাবনা জেলায় মহাপরিচালককে দায়িত্ব দিয়েছি। সচিব আরও বলেন, জিরো টলারেন্স এ্যাগেইনস্ট করাপশন- এটা মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষকদের সন্তানরা পড়তে পারবে না কেজিতে এমন মন্তব্য করে সচিব বলেন, আমাদের সার্কুলার আছে যে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তান যারা আছে তারা প্রাথমিক বিদ্যালয়েই পড়তে হবে, আমরা সেটা আবারও তাদের স্মরণ করিয়ে দেব। অর্থাৎ আমরা আবার নিশ্চিত করব যে, কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিচারদের ছেলেমেয়ে কিন্ডার গার্টেনে পড়তে পারবে না। এটা কঠিন হলেও আমরা করব।
×