ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পুলিশ সপ্তাহে দেয়া হতে পারে

৬৪ জেলার পুলিশ সুপারের পদকের জন্য আবেদন

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

৬৪ জেলার পুলিশ সুপারের পদকের জন্য আবেদন

শংকর কুমার দে ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য পুরস্কার হিসাবে এবার পুলিশ সপ্তাহ ’১৯-তে পদক পাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন সারাদেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি)। তাদের যুক্তির পক্ষে দাবি, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বড় ধরনের কোন নাশকতা ছাড়াই সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সফলভাবে উপহার দিয়েছেন তারা একটি জাতীয় নির্বাচন। পুরস্কার হিসাবে পদক দাবি করে এই বিষয়টি অবহিত করেছেন পুলিশ সদর দফতরে। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সপ্তাহ ’১৯ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ সদর দফতরে খোলা হয় ‘আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং সেল’। দেশের ৬৪ জেলার ৩শ’ জাতীয় সংসদ এলাকাকে ৪ অঞ্চলে ভাগ করে এই সেলের মাধ্যমে নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করবে পুলিশ সদর দফতর। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সন্ত্রাসী, মস্তান, রংবাজ, ক্যাডাররা সহিংসতা ঘটালে তাৎক্ষণিক কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণসহ প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয় পুলিশের মনিটরিং সেল। ভাটাররা যাতে অবাধে, শান্তিপূর্ণভাবে, নির্ভয়ে, নির্বিঘেœ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে এ জন্য পুলিশ সদর দফতরের উদ্যোগে গঠিত মনিটরিং সেল পরিচালনা করেন ৮ জন উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা। দেশের ৬৪ জেলা পুলিশ সুপারকে পদক দেয়া হলে মনিটরিং সেল গঠন করে যারা সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন সেই ৮ পুলিশ কর্মকর্তাকেও পদকে ভূষিত করে পুরস্কৃত করা হতে পারে বলে জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশকে ৪টি অঞ্চলে ভাগ করে ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারকে নিয়ন্ত্রণকারী ৮ উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা হচ্ছেন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন, রংপুর মেট্রোপলিটন, রাজশাহী ও রংপুর রেঞ্জে দায়িত্ব পালন করেন র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ও হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি মোঃ আতিকুল ইসলাম। ঢাকা মেট্রোপলিটন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন, ঢাকা রেঞ্জ ও ময়মনসিংহ রেঞ্জে দায়িত্ব পালন করেন ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া এবং ডিএমপি সিটিটিসি স্পেশাল এ্যাকশন গ্রুপের উপ-পুলিশ কমিশনার প্রলয় কুমার জোয়ারদার। খুলনা মেট্রোপলিটন, বরিশাল মেট্রোপলিটন, খুলনা ও বরিশাল রেঞ্জের দায়িত্ব পালনকারী দুজন হলেন এসবি’র অতিরিক্ত আইজি মীর শহীদুল ইসলাম এবং ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন, সিলেট মেট্রোপলিটন, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ও সিলেট রেঞ্জে দায়িত্ব পালন করেছেন এ্যান্টি টেররিজম ইউনিউটের অতিরিক্ত আইজি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি (এএ্যান্ডডি) হাবিবুর রহমান। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সেল কমিটির সভাপতি করা হয় ইন্সপেক্টর জেনারেল (মহাপরিদর্শক) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীকে। সহসভাপতি অতিরিক্ত আইজি (এ্যাডমিন এ্যান্ড অপারেশনস), সদস্য অতিরিক্ত আইজি (ফিন্যান্স এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট), সদস্য অতিরিক্ত আইজি (টিএ্যান্ডআইএম), সদস্য-সচিব ডিআইজি (অপারেশনস) ও সদস্য এআইজি (অপারেশনস)। আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং সেল ও কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠনের আদেশে বলা হয়েছে, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স উল্লেখিত সেলকে সব ধরনের দাফতরিক, প্রশাসনিক ও লজিস্টিকস্ সহায়তা দেবে ওই কমিটি। রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ কমিশনাররা তাদের এলাকার জন্য গঠিত মনিটরিং ও কো-অর্ডিনেশন সেলে পদাধিকারবলে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং সেল ও কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠনের আদেশে এলাকাভিত্তিক সেলের কার্যপরিধি ভাগ করে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিচালকের (ইন্সপেক্টর জেনারেল) নেতৃত্বে গঠিত কমিটি এলাকাভিত্তিক সেলের কার্যপরিধি সার্বিক কার্যক্রম তদারকি করবে ও সময়ে সময়ে প্রযোজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, এবার পুলিশ সপ্তাহ‘১৯-তে পুলিশ পদক পাওয়ার মাধ্যমে পুরস্কৃত হওয়ার দাবিদারের সংখ্যা প্রায় ৩শ’ হবে। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারিতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের পুলিশ সপ্তাহে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য পুরস্কার হিসাবে পদক প্রদানের বিষয়টি অনুমোদন পেলে এবারই সর্বোচ্চ সংখ্যক পুলিশ কর্মকর্তাদের পদক দেয়া হবে বলে জানা গেছে। ২০১৮ সালের পুলিশ সপ্তাহে পদক দেয়া হয়েছিল ১৮২ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে। এর আগের বছর ২০১৭ সালে পদক পেয়েছিলেন ১৩২ পুলিশ সদস্য। এর আগের বছর পেয়েছিলেন ১০২ জন। কর্মক্ষেত্রে সাহসিকতা, বীরত্ব, দক্ষতা ও প্রশংসনীয় কাজের জন্য পুলিশ বাহিনীতে প্রতিবছর পদক দেয়ার রেওয়াজ রয়েছে। সেবা, সাহসিকতা ও কর্মদক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যদের মধ্যে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক’ (বিপিএম) ও ‘রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক’ (পিপিএম) এবং পুলিশ সেবা পদক ও রাষ্ট্রপতি সেবা পদক দেয়া হয়ে থাকে। পুলিশ সদর দফতর থেকে পুলিশ সদস্যদের পদক প্রদানের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর তা পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলেই পদক প্রাপ্তদের তালিকা চুড়ান্ত হয়। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী ওমরাহ হজ পালনের জন্য সোমবার রাতে সৌদী আরব গেছেন। আইজিপির সৌদী আরব যাওয়ার আগেই তার কাছে দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারের পদকে পুরস্কৃৃত করার দাবির বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারগন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে তাদের নিয়ন্ত্রণকারী মনিটরিং সেলের ৮ উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তার কাছে পদক দাবির বিষয়টি অবহিত করেছেন। পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী ওমরাহ হজ পালনের জন্য সৌদী আরব যাওয়ার প্রাক্কালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনিটরিং সেলের উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেছেন, ওমরাহ হজ্ব পালন শেষে দেশে ফিরে এসে দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারদের পদক দেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে সুপারিশ আকারে ফাইল পাঠাবেন প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য।
×