ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রেক্সিট ॥ পার্লামেন্টে ঐতিহাসিক ভোট

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

ব্রেক্সিট ॥ পার্লামেন্টে ঐতিহাসিক ভোট

যুক্তরাজ্যে অপ্রত্যাশিত ব্রেক্সিট-গণভোটের ফল থেকে শুরু করে টেরেসা মের ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে অজনপ্রিয় বেক্সিট চুক্তির ওপর মঙ্গলবারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভোট ৪৬ বছর পর সংস্থাটি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ব্রিটেনের সামনে এগিয়ে যাওয়ার কঠিন পথে এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। খবর এএফপি। ব্রিটেনবাসী ২৮ জাতিভুক্ত ইইউয়ের সদস্য পদের অবসান ঘটাতে চাইলে ২০১৬ সালের ২৩ জুন এক গণভোটে অংশ নেয়। ৫২-৪৮ শতাংশ ভোটে ব্রেক্সিট পক্ষ জয়লাভ করে। রক্ষণশীল দলের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পরদিন পদত্যাগ করেন। গণভোটের আয়োজন করেন তিনিই এবং ইইউতে থাকার জন্য প্রচার অভিযানে নেতৃত্ব দেন। ব্রেক্সিট প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বরিস জনসন প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর প্রতিযোগিতা থেকে দূরে গেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টেরেসা মে ১৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি অবশ্য এর আগে সংস্থায় থেকে যাওয়ার পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। মে ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই তার ব্রেক্সিট কৌশলের ওপর এক ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ব্রিটেন অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশে ইউরোপের একক বাজার থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করবে। তিনি সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেন, তিনি ইইউয়ের সঙ্গে আলোচনা থেকে দূরে থাকতে চান। তিনি বলেন, কোন মন্দ চুক্তির চেয়ে চুক্তিহীনতা ব্রিটেনের জন্য অধিকতর ভাল। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট ১৩ মার্চ ইইউ চুক্তির ৫০ অনুচ্ছেদ প্রয়োগে মেকে ক্ষমতা দিতে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। এ অনুচ্ছেদে সংস্থা ত্যাগের প্রক্রিয়ার উল্লেখ রয়েছে। ইইউ- প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্কের কাছে ২৯ মার্চ লেখা এক চিঠিতে ইইউ ত্যাগের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। ৫০ অনুচ্ছেদ অনুসারে দু’বছর সময়ের মধ্যে ব্রিটেন সংস্থা ত্যাগ করতে সমর্থ হবে। সে হিসেবে ব্রেক্সিটের তারিখটি উল্লেখ করা হয় ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ। মে বিরোধী দল লেবার পার্টির দুর্বলতার কথা ভেবে এবং ব্রেক্সিট আলোচনায় তার অবস্থান সুদৃঢ় করার জন্য ২০১৭ সালের ৮ জুন এক আগাম নির্বাচন দেন। কিন্তু তিনি জুয়ায় হেরে যান। তার কনজারভেটিভ পার্টি পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাল। উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) সঙ্গে একটি চুক্তি করার জন্য তাদের চাপ দেয়া হলো। ব্রেক্সিটের পর উত্তর আয়ারল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্রের মধ্যে এক উন্মুক্ত সীমান্ত রাখার জন্য ব্রিটেনের নিশ্চয়তার বিষয়টি আলোচনায় এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াল। ব্রিটেন ও ইইউ ব্রেক্সিট প্রশ্নে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ৮ ডিসেম্বর এক খসড়া চুক্তিতে পৌঁছল এবং এ ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে, ইউনিয়নের সঙ্গে ব্রিটেনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, নাগরিক অধিকার ও আইরিশ সীমান্ত। ব্রেক্সিটের পর ব্রিটেন সংস্থার সঙ্গে কীভাবে বাণিজ্য অব্যাহত রাখবে তাসহ ব্রেক্সিট আলোচনার পরবর্তী পর্যায়ে অগ্রসর হতে সম্মতি দেন ইইউ নেতারা। ইইউ ত্যাগের সিদ্ধান্তের ওপর একটি বিল পাস হয় ২০১৮ সালের ২৬ জুন। মে ২০১৮ সালের ৬ জুলাই ইউকে ইইউয়ের মধ্যে অবাধ বাণিজ্য ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া পার্লামেন্টে একটি চুক্তি স্বাক্ষরে সমর্থ হন। কিন্তু এর দু’দিন পর সংশয়বাদী ব্রেক্সিট মন্ত্রী ডেভিড ডেভিস পদত্যাগ করে বলেন, মে অত্যন্ত সহজেই অগ্রসর হচ্ছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনসন পদত্যাগ করেন ৯ জুলাই এবং মে’র পরিকল্পনার নেতৃস্থানীয় সমালোচকের অবস্থান নেন। ইইউ নেতারা ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর সলজবার্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। তারা মেকে বলেন, তার ব্রেক্সিট প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয় এবং পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন রয়েছে। ‘ইইউ ১৩ নবেম্বর ব্রেক্সিটের ওপর কোন চুক্তি নয়’ এর ওপর একটি সম্ভাব্য পরিকল্পনা প্রকাশ করে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পর মের অফিস থেকে জানানো হয়, আলোচকরা ব্রেক্সিটের জন্য একটি খসড়া চুক্তিতে পৌঁছেছেন। তার মন্ত্রিপরিষদ ১৪ নবেম্বর চুক্তিটির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে।
×