ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন

চতুর্থ মেয়াদে জনবন্ধু শেখ হাসিনা ॥ সবিনয়-প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

চতুর্থ মেয়াদে জনবন্ধু শেখ হাসিনা ॥ সবিনয়-প্রত্যাশা

রাজনীতি সুশাসন ও গণতন্ত্র * ২০২৪ সালের (জানুয়ারি) নির্বাচনের প্রস্তুতি সূচনা হয়ে গেছে। * প্রতিটি নিবন্ধিত দলে অন্তত এক-চতুর্থাংশ নারী পদধারী হওয়া বাঞ্ছনীয়। * দ্বাদশতম নির্বাচনে প্রতিটি দলের অন্তত এক-পঞ্চমাংশ আসনে নারী প্রার্থীর মনোনয়ন চাই। * একাদশ সংসদেই ডিপুটি স্পীকার ও পাবলিক এ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান পদে বিরোধীদলীয় প্রার্থীকে নির্বাচন করার বিবেচনা। * সংসদীয় কমিটির ক্ষমতা বৃদ্ধি। * রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি ও শাসন কাজে ভারসাম্য আনা। সংসদ নেতা ও বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে পরামর্শ করে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, কম্পট্রোলার এবং অডিটর জেনারেল, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, সিকিউরিটি এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি ও সকল সাংবিধানিক পদে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিতে পারার ক্ষমতা। * সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদ কেবল সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ও অর্থবিল তথা জাতীয় বাজেট পাস ক্ষেত্রে প্রযোজ্য রাখা। * সংসদ সদস্যগণের জন্য অর্থনীতি ও পরিকল্পনাবিদ, প্রযুক্তি এবং সংসদীয় রীতিনীতি বিষয়ক বিশেষ প্রশিক্ষণ এবং সার্বক্ষণিক বিশেষজ্ঞ নিয়োগ। * রাজনৈতিক দলের সভাপতি ছাড়া বাকি সব পদে সরাসরি ভোটে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। * অঙ্গ সংগঠনসমূহের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক শিথিল করা। * দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের সুপারিশ বিবেচনা করা। * জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বৈধ প্রার্থীগণের জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ সহায়তা প্রদান মাধ্যমে নির্বাচনী খরচের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দ্বার উন্মোচন করা। * জাতীয় সংসদে নতুন সদস্যগণের শপথের দিন থেকে এক বছরের মধ্যে নির্বাচন সংক্রান্ত সব আপত্তি ও মতবিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য আরপিও সংশোধন এবং হাইকোর্ট বিভাগ পর্যায়ের ট্রাইব্যুনাল গঠন। * দুর্নীতি দমনে দৃশ্যমান অগ্রগতি তথা স্বচ্ছতা ও নৈতিক শক্তির জয়গান আনা। পরিকল্পিত উন্নয়ন ও অর্থনীতি * বাজার ব্যবস্থায় থেকে ও অর্থনৈতিক সম্প্রসারণে একটি নিয়ামক কাঠামো সৃষ্টি করা। * মন্ত্রী পদমর্যাদার একজন ডেপুটি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে অর্থনীতিব্যাপী সমন্বিত এবং সকল খাত একে অন্যের পরিপূরক এ কথা মাথায় রেখে বর্তমান পাঁচশালা পরিকল্পনার হলিস্টিক পরিবর্তন করা। * প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের প্ল্যানিং সেলের ক্ষমতায়ন করা। * কঠিন আর্থিক শৃঙ্খলা মান্যকারী পরিবীক্ষণ, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা সৃষ্টি করা। * প্রকল্পের সময় নির্ঘণ্টক প্রকৃত অগ্রগতির সঙ্গে অর্থ ব্যয়ের মনিটরিং করার কথা। অহেতুকভাবে দীর্ঘায়িত ছোটখাটো প্রকল্প এক বছরের সম্প্রসারণ দিয়ে সমাপ্ত করা। প্রকল্প সংখ্যা চার পাঁচ শ’তে নামিয়ে এনে বাকি সম্পূরক উন্নয়ন কর্মকা- জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিকেন্দ্রীকরণ করা। * রেল ও জলপথকে ব্যাপক উন্নয়নমূলক অবকাঠামোসহ বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক করে তোলা। * বাহাদুরাবাদঘাট-ফুলছরিঘাট রেলসেতু নির্মাণ, ক্রমান্বয়ে রেলকে ব্রডগেজিকরণ ও ডবল লাইনে রূপান্তর করে নিরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুত ট্রেন চালিত করা। রেলপথকে টঙ্গী পর্যন্ত থামিয়ে দিয়ে ঘন ঘন চলা কমিউটার ট্রেন চালু করা। * মেট্রোরেল ও উড়াল সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি পাতাল এবং আকাশ রেল সম্পর্কে দৃঢ় পদক্ষেপে অগ্রসর হওয়া। * শিল্পায়ন তথা কর্মসংস্থানে আয়-রোজগার বৃদ্ধি, স্বয়ংক্রিয়ভাবে দারিদ্য্র হ্রাস এবং বৈষম্য বৃদ্ধির রাশ টেনে ধরা। * উৎপাদন ও রফতানিতে বহুমুখিতা আনয়নে চামড়া এবং চামড়াজাত শিল্প, ওষুধ শিল্প, মৎস্য রফতানিতে হিমায়িত কাঁচা মাছের বিপরীতে কৌটাভর্তি রান্না করা মাছ রফতানি, হাল্কা কারিগরি ও প্লাস্টিক শিল্প, সিরামিকস, খেলাধুলার সরঞ্জাম, মোটরসাইকেল, ফলের প্রক্রিয়াজাতকরণ, শাক-সবজি ও ফুলের আকর্ষণীয় প্যাকেজকরণে অগ্রাধিকারভিত্তিক মনোযোগ দেয়া। * প্রসার, গভীরায়ণ ও উদ্ভাবনী শক্তিতে পাটজাত দ্রব্য দেশে-বিদেশে বিশেষভাবে সমাদৃত হতে পারে। দেশে পলিথিন নিষেধাজ্ঞা কঠোরহস্তে বাস্তবায়ন করতে হবে। পাটসুতা প্রধান, তবে মিশ্রণ তন্তুকে আকর্ষণীয় করে বস্ত্র বয়ন এবং মোটরযানের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায় ব্যবহারযোগ্য মানে নিয়ে যাওয়া। * উচ্চ মজুরির কারণে চীন তৈরি পোশাক খাতে বিশ^ বাজার দখল করা অংশ ক্রমেই ছেড়ে দিচ্ছে। ভারত, পাকিস্তান আর তেমন প্রতিযোগিতায় নেই। সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী ভিয়েতনামও এতে আগ্রহ হারাচ্ছে। শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়া ও আফ্রিকা এখনও ছোট তরফ। সে সুযোগে গত চার দশকে সৃষ্ট বিশ^মানের উদ্যোক্তাগণ অকৃপণ হাতে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা ও মজুরি বৃদ্ধিতে সমন্বয় সাধন করে বাজার বৈচিত্র্য এবং ২০২৩ সাল নাগাদ ৬০০০ কোটি ডলারের রফতানি আনতে পারেন, উচ্চতর মান ও দামের তৈরি পোশাক এবং নতুন নতুন বাজারের সন্ধানও জরুরী। * ১০০টি বিশেষ শিল্প অঞ্চলের ১০টি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। তৈরি পোশাকে প্রদত্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ রাষ্ট্রীয় খরচে যে বিপুল প্রণোদনা রয়েছে তার সমতুল্য প্যাকেজে পৃথিবীর সপ্তম বৃহৎ বস্ত্র আমদানিকারক বাংলাদেশে বস্ত্রশিল্পের প্রসার এখন সময়ের দাবি। কাঁচা তুলা আমদানি সহজ বটে। অগ্রপশ্চাৎ সংযোগ মাধ্যমে বর্তমানে ১টির স্থলে ৩টি রুলস অব অরিজিন পালিত হয়ে অগ্রগামী বাংলাদেশকে সুবিধাজনক উচ্চতায় নিয়ে যাবে। * আলোকিত কৃষি বিজ্ঞানী সাত্তার ম-ল ফল উৎপাদনে বাংলাদেশে নীরব বিপ্লবের কথা উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে প্রক্রিয়াজাতকরণে অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোগে আত্মকর্মসহ ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা জরুরী। বছরে ১০ লাখ টন কাঁঠাল উৎপাদন হয়। এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও মজাদার ফল। কাঁঠালের স্বাদ ও পুষ্টি বছরব্যাপী মিলবে এবং কর্মসংস্থান হবে। এমনকি রফতানিও হতে পারে। তেমনিভাবে আম, কলা, পেঁপে, লিচু, পেয়ারা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে রফতানি ও কর্মসংস্থানে সবচেয়ে বেশি সুযোগ আছে আনারসের জেলি ও জ্যামে। এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের আগে চেষ্টা করা যায়। * শেখ হাসিনা সরকারের উৎসাহে লালমনিরহাট ও অন্যান্য প্রতিবেশী এলাকার কম উর্বর জমিতে ভুট্টা চাষের শুরু ১৯৯৭ সালে। এখন ফলন ১৭ লাখ টন। হাঁস, মুরগি সুরক্ষা ও গো-খাদ্যের বাইরে ভুট্টা অন্যান্য দেশের মতো প্রক্রিয়াজাত করা হলে বিশ^সেরাকরণ ভোজ্যতেল প্রস্তুত ও কর্মসংস্থান তথা সমৃদ্ধি বাড়াবে। * উন্নতমানের প্যাকেট করা ফালি পনির ও দুঁধের গুঁড়া তৈরিতে বাংলাদেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচানোর সম্ভাবনা আছে। আমদানি শুল্ক ও আগাম প্রস্তুতি ঘোষণা দরকার। * পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ক্যাশুনাট উৎপন্ন হয়। চার বছরের মাথায় গাছ ফলবতী হয়। বড় মাপ ও পরিধিতে ক্যাশু ফলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে শুকানো ও ভাজা হলে কর্মসংস্থান এবং ঘরে বসে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ব্যবস্থা হতে পারে। * বছরে আট লক্ষ টন আলু উৎপাদন হয় বাংলাদেশে- আপাত দৃষ্টিতে উন্নতমানের। অথচ পটেটো চিপস, ফেঞ্চ ফ্রাই এবং কর্ন ফ্লেক্সের কোনটাই এখানে তৈরি হয় না। যত দিন গড়াবে ততই মা-বাবা উভয়ে কর্মজীবী হবে। বাড়বে তৈরি খাবারের চাহিদা। আলুভিত্তিক খাবারে উদ্যোক্তা বিনিয়োগকারী সৃষ্টি করতেই হবে। কারণ একদিকে যেমন আলু কিষান কিষাণীর আয়-রোজগার বাড়াবে, অন্যদিকে তেমনি হবে বাড়তি কর্মসংস্থান। প্রয়োজন হলে ফ্লেক্স, ফ্রাই ও চিপস তৈরি উপযোগী আলুবীজ আমদানি করতে হবে। * গভীর সমুদ্রে ভারত ও মিয়ানমার বছরে ৮০ লাখ টন মাছ ধরে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে উদ্যোক্তাদের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হলে ব্লু ইকোনমির একটি সুবিধা মিলবে। পর্যটন শিল্পে কর্মসংস্থানের বিপুল সম্ভাবনা * বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের অগ্রগতি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সসীম নয় অসীম। প্রাথমিকভাবে ভৌতিক অবকাঠামো নির্মাণ পর্যায়ে কক্সবাজার, সৈয়দপুর ও বরিশালে আঞ্চলিক মানসম্পন্ন বিমানবন্দর নির্মাণ করা যায়। সিলেটে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পূর্ণ রূপ দেয়ার এখনই সময়। টাঙ্গাইলের শক্ত ভিত মাটি, যা দেশের কেন্দ্রে অবস্থিত, সীমান্ত থেকে দূরে, সেখানে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত এলাকায় সেনা ক্যান্টনমেন্ট হয়নি, সেখানে বিশাল মাপে ও মানের অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করার কাজ চিন্তা করা যেতে পারে। কক্সবাজারের ৮০ মাইল দীর্ঘ সোনালি বিচে ধনাঢ্য পরিব্রাজকের চাহিদা মেটাতে সক্ষম শতাধিক কটেজ এবং তিন-চারটি গল্্ফ কোর্স নির্মাণে ব্যক্তি খাতকে প্রণোদনা দেয়া যেতে পারে। অনুরূপভাবে সিলেটের বড় চা বাগানগুলোতে গলফ কোর্স নির্মাণ করলে ওই অঞ্চলে গড়ে ওঠা চমৎকার সব রিসোর্টের আরও বেশি লাভজনক ব্যবহার নিশ্চিত হবে। আগামী দশকটি হবে উত্তর বাংলার চোখ ধাঁধানো অগ্রগতি। বগুড়ার টিএমএসএস দুটোর আদলে আরও পর্যটন আকর্ষণ করা টাওয়ার নির্মাণ করে সৈয়দপুরে নেমে প্রাচীন দীঘি, সাগর, মসজিদ, মন্দির ও স্থাপত্যের দর্শন আনন্দে ভ্রমণবিলাসীদের পাওয়া যাবে। অবশ্যই শান্তি ও আইনের শাসন হতে হবে নিñিদ্র। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দৈন্যদশা কাটিয়ে প্রায় অর্ধশত বিদেশী এয়ারলাইন্সের কাড়ি কাড়ি মুনাফা করার পর্যায়ে যেতে হবে। অন্তত পাঁচ বছরের জন্য বেসামরিক পরিবহনে ইউনিয়ন কর্মকা-কে নিয়ন্ত্রিত করার চিন্তা করা যেতে পারে। ৩৩ বছরের পুরনো রাডারটি আশা করি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ইমিগ্রেশন, মাল খালাস, যানবাহন ও সামগ্রিক নিরাপত্তা, এয়ার সার্ভিসে আনা শিল্প উপাদানের উৎপাতবিহীন দ্রুত ছাড়করণ এবং ‘টিকেট নেই’ অবস্থায় প্লেনে উঠে অর্ধেক সিট খালি ধরনের গ্লানি থেকে উদ্ধার পেতে হবে। উন্নতমানের ব্যবস্থাপনা চালু করার জন্য কৃতসঙ্কল্প পদক্ষেপ জরুরী। * বদ্বীপ পরিকল্পনা আলোচিত হচ্ছে। তবে যমুনা নদীবক্ষ মাঝে এক কিলোমিটার বিস্তারে রিভার ডিভাইডার মাধ্যমে দুষ্প্রাপ্য ভূমি সৃষ্টি করে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগে শিল্পায়ন তথা কর্মসংস্থানে ভূমি সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। দু’পাশে নদীর গভীরতা বৃদ্ধি ও নদী শাসনে বাঁধ দেয়া যেতে পারে। * অর্থ, ব্যাংকিং ও বীমা খাতে সমস্যা আছে, তবে সঙ্কট নেই। সদিচ্ছা থাকলে পুনর্তফসিলের বিধি যথা দুইবারের বেশি পুনর্তফসিল নয়, পুনর্তফসিলে স্বীকৃত পরিশোধের শতকরা ১০ ভাগ নগদে পরিশোধ করা হলে তবেই পুনর্তফসিল, শর্ত ভাংলেই পুনর্তফসিল বাতিল এবং খুবই বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া তৃতীয়বার পুনর্তফসিল হবে নাÑ এসব বিধান প্রয়োগ করা জরুরী। সুদ মওকুফে নৈতিক সঙ্কট আছে এবং রয়েছে এক ধরনের হঠকারিতা। মূল ঋণের অংশ বিশেষ মওকুফের প্রশ্নই আসে না। যার ঋণ মন্দ বা খেলাপী হয়ে যায় তিনি বা তার প্রতিষ্ঠান ওই ঋণগ্রস্ত প্রকল্পটির একটি নিজস্ব মূল্যায়ন করতে পারেন এবং তার সবচেয়ে সম্পূর্ণ অকলুষিত সম্পদে এবং ব্যক্তিগত গ্যারান্টি মাধ্যমে যেন ঋণটি বর্ণিত বিধি অনুসারে পুনর্তফসিল করান তার বিধান করা যায়। এছাড়া অন্যান্য সহজতর ফর্মুলায় ঋণ খেলাপী পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আয়ত্তে এনে নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করা ‘ভাল’ ঋণ গ্রহীতাদের শাস্তির হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে কারও তেমন ক্ষতি করতে হবে না। * ২০০০ সাল থেকে আলোচিত এক্কুইজেশন ও মার্জার আইন পাস করা জরুরী। * জানুয়ারি-ডিসেম্বর অর্থবছর চালুর বিষয়ে সুপারিশ বিবেচনা করা যায়। * অজনপ্রিয়তায় সর্বজনীন ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার করা যেতে পারে। অবকাঠামো নির্মাণ, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ * গত এক দশকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি চোখ ধাঁধানো এবং তা বিশ^কে চমকে দিয়েছে। ভৌতিক অবকাঠামো নির্মাণে সরকারপ্রধান জনবন্ধু শেখ হাসিনার অকুতোভয়, টেকসই, উদ্ভাবনী ও সামনে থেকে অসাধারণ নেতৃত্ব সৌভাগ্যে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় নবতর মাত্রা যুক্ত হয়েছে। * দরকার সঞ্চয় এবং বিনিয়োগযোগ্য তহবিল। বণ্টন কনসাল্টিং গ্রুপের প্রক্ষেপণে যে সোয়া কোটি লোকের মাথাপিছু আয় ৪০০০ মাকিন ডলার অন্তত তাদের কাছ থেকে আয়কর আদায় করা জরুরী। সমীক্ষা করে দেখা গেছে কর হার বনাম কর রাজস্ব স্থিতিস্থাপকতা এমন যে, বর্তমানে আয়কর ও কর্পোরেট করের স্তরগুলোকে পুনর্বিন্যাস করে করের হার কমালে কর রাজস্ব অনেক বেড়ে যেতে পারে। প্রয়োজন একটি করদাতাবান্ধব, আধুনিক, নিñিদ্র বাস্তবায়নযোগ্য, সহজ কর ব্যবস্থা। এর জন্য করজালের বিস্তার এবং মূসকের আদায় ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যাপক প্রশিক্ষণ ও বোঝানো সমঝানো প্রয়োজন। ২০২৩ সাল নাগাদ কর ঃ জিডিপি অনুপাত অন্তত শতকরা ২০ ভাগ এবং বিনিয়োগ ঃ জিডিপি বর্তমানের শতকরা ৩১ ভাগের বিপরীতে শতকরা ৩৮/৩৯ ভাগে না নিলে দু’অঙ্কের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অর্জন নাও হতে পারে। * সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ না কমিয়ে আগে এর ব্যাপক অপব্যবহার, দুর্নীতি ও কারচুপি রোধ করা জরুরী। * শতকরা ২ ভাগ ইকুইটি ছাড়া কোম্পানির পরিচালক নির্বাচিত হওয়া যাবে না এ বিধানটি রহিত করা যেতে পারে। সময় ও সুযোগ এখন বাংলাদেশের * অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে দৃষ্টিনন্দনভাবেই ঘটেছে সামাজিক অগ্রগতি। ৭২ এর ৪৩ বছর গড় আয়ু এখন ৭২ বছর। হাজার জন্মে শিশুমৃত্যু ২০০ থেকে ২৯-এ নেমেছ। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে মেয়ে শিশুর ভর্তি অনুপাত শতকরা ৫০ ভাগ। উচ্চ শিক্ষায় শতকরা ৪৩ ভাগ হলেও অগ্রগামী। ওয়ার্র্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলে দিচ্ছে লিঙ্গ সমতায় বাংলাদেশের সূচক ৪৮ এবং দক্ষিণ এশিয়াতে সর্বশীর্ষে। বাংলাদেশের আয়তন পৃথিবীতে ৮৪তম আর জনসংখ্যা ৮ম বৃহত্তম। দশক ঘুরতেই কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতি হবে পৃথিবীতে ২৪তম। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের ১৩৪ অনুচ্ছেদে সামাজিক সুরক্ষা বলয়ে উপকারভোক্তার সংখ্যা এবং ভাতার পরিমাপে প্রতিবছর শতকরা বিশ ভাগ হারে বাড়িয়ে ২০১৮-২৩ সালে আড়াই গুণ করা যেতে পারে। * গৃহস্থালি কাজকে জিডিপিতে আনা জরুরী। * বিশেষ করে আইনের শাসন দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করা, ভূমি ও জলাধার দখলকারীদের আইনের আওতায় আনা এবং আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, জরুরী যানবাহন নিয়ন্ত্রণে বাধ্যতামূলকভাবে ‘বাম লেনের গাড়ি বাঁয়ে যাবে’ নীতি চালু করা, ট্রাফিক বাতির মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ এক হাতে আনা, স্কুলভর্তি নিজ মহল্লায় ও স্কুলবাসে যাতায়াত বাধ্যতামূলক করা উচিত। সেবাসমূহের বিল ইন্টারনেট বা ব্যাংকে পরিশোধ করতে হবে। ঢাকায় সব প্রবেশপথে টোল মেশিনে ফি আদায় হবে। অফিস-আদালতে ফ্লেকসি টাইম চালু করা যেতে পারে। আনিসুল হক-সাঈদ খোকন ফর্মুলা বাস্তবায়নে ৬০০ বৃহদাকার বাস পুরনো সব লক্কড়-ঝক্কড় পাবলিক যানে প্রতিস্থাপন করতে পারে। একই সঙ্গে ১৫ বছরের পুরনো সকল গণপরিবহনের ওপর রোড ট্যাক্সের হার দ্বিগুণ করা যেতে পারে। বাংলাদেশে এখন অগ্রাধিকার শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান * বাংলাদেশে এখনই বিকেন্দ্রীকরণের উপযুক্ত সময়। জনবন্ধু শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী গ্রামকে শহরের অনুরূপ করতে হলে অন্যান্য ক্ষেত্র ছাড়াও কৃষি উৎপাদন ও বিপণন সমবায়ে খাদ্য মজুদ, সৌরবিদ্যুত ও অতিশয় সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা যায়। * ঢাকা থেকে কয়েকটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, পরিদফতর, খেলার মাঠ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঢাকার বাইরে স্থানান্তরের চিন্তা করা যায়। * ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগের দিন ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি যিনি এখন চতুর্থ মেয়াদে প্রজাতন্ত্রের সরকারের প্রধানমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেন যে, বৈষম্য দূর করা হবে। অর্থাৎ বাজার ব্যবস্থাধীনে দ্রুতগতি সামষ্টিক অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের অপরিহার্য অনুযঙ্গ হিসেবে আয়, সম্পদ ও সুযোগে যে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করতে সরকার বদ্ধপরিকর। জাতির পিতা ও তার কন্যা যিনি নিজ গুণেই অসাধারণ নেতা কল্যাণ রাষ্ট্রে একটি সমতাপ্রবণ সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলতে যে স্বপ্ন সাধনা করেছেন ২০১৯-২০২৩ সময়ে তাই যেন সম্ভব হয়। ১৯৯৬-২০০১ সালের ‘গ্রোথ উইথ ইকুইটি’ সে পথ প্রদর্শন করে গেছে বটে। * বাংলাদেশের সামনে এখন জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী । কাজেই কাজ করতে হবে অবিরাম। * সফল নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা যেমন বাংলাদেশে অপরিহার্য, তেমনি এর অগ্রযাত্রাও অবধারিত। তবে বাজার অর্থনীতি ও ব্যক্তি খাত একটি অগ্নিপরীক্ষার সামনে দাঁড়িয়ে। দেশের বিনিয়োগের সিংহভাগই (সাধারণভাবে শতকরা ৭৫-৮০ ভাগ) ব্যক্তি খাতে, তবে কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী শিল্প উৎপাদনের থেকে ব্যবসা বাণিজ্যে নজর বেশি। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ হালে কেন স্থবির তার দায়ভার সমভাবে সরকার ও বেসরকারে ন্যস্ত। দেশের ৭৫-৮০ ভাগ ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যক্তি মালিকানায়। একাদশতম সংসদ সদস্যের শতকরা ৬১ ভাগ ব্যবসায়ী-শিল্পপতি। অর্থ, বাণিজ্য, শিল্প এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোর দায়িত্বে এখন ব্যক্তি খাতের শিরোমণিরা। * চলমান বাজার ও ব্যাংকিং বাবস্থাধীনে নীতি কৌশলে গতি এনে সরকারের অপেন পিট কয়লা আহরণে আরও সমৃদ্ধ হবে অবকাঠামো সুবিধার উৎপাদনশীল খাত। ‘ইটলস’ বিজয় পরবর্তী সময়ে গ্যাসের অনুসন্ধানে ১২ নং কূপে ৫ নং কাঠামোতে বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ ও কর্মসংস্থান তথা দারিদ্র্য নিরসন এবং বৈষম্য হ্রাস করে ব্যক্তি খাত এখন অত্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থানে। এটি বেসরকারী খাতের নেতৃত্বের একটি অগ্নিপরীক্ষাও বটে। লেখক : অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ এবং সমাজকর্মী
×