ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আকিল জামান ইনু

তারুণ্যের উদ্যোগ ॥ রবিনহুড দ্য এনিমেল রেস্কিউয়ার

প্রকাশিত: ০৭:৪৫, ১৫ জানুয়ারি ২০১৯

তারুণ্যের উদ্যোগ ॥ রবিনহুড দ্য এনিমেল রেস্কিউয়ার

যান্ত্রিক এই নগরের সড়কগুলোতে প্রতিনিয়ত ছুটে চলা প্রচুর মানুষ ও যানবাহন। ব্যস্ত সড়কের মানুষগুলোও যেন খুব ব্যস্ত। কেউ যেন কারও দিকে তাকানোর সুযোগ পায় না। সেখানে রাস্তার পশু-পাখি তো কোন্ ছাড়। তবে ব্যতিক্রমও আছে। রাস্তায় অসহায় হয়ে পড়ে থাকা পশু-পাখির দিকে ঠিকই কারও না কার চোখ যায়। তারা সে সব প্রাণীদের রাস্তা থেকে কুড়িয়ে যত্ন-আত্মি করে থাকে। পর্যায়ক্রমে করে তুলে সুস্থ, তাও আবার নিজ খরচে এবং মনের তাগিদে। অনেক সময় নিরাপত্তার অভাবে প্রাণীগুলোকে আর রাস্তায় ফিরিয়ে দেয়াও সম্ভব হয় না। বাধ্য হয়েই আশ্রয় দিতে হয় নিজ বাসভবনে। এমনই প্রাণী বান্ধব কিছু তরুণের হাতে গড়া সংগঠন- রবিনহুড দ্য এনিমেল রেস্কিউয়ার। বনশ্রী সি ব্লক থেকে আল-আমিন নামে এক যুবক ফোন করে সাহায্য চায় রবিনহুড দ্য এনিমেল রেস্কিউয়ার (এনিমেল কেয়ার ট্রাস্ট বাংলাদেশ) প্রতিষ্ঠাতা আফজাল খানের কাছে। কোন এক ব্যক্তি রাস্তার এক কুকুরকে বিনা কারণে পিটিয়ে কোমড়ের হাড় ভেঙ্গে ক্ষতবিক্ষত করে রাখে এবং ওখানে তিন দিন যাবত পরে আছে কুকুরটি। জানতে পেরে আফজাল তার টিম নিয়ে এবং পুলিশ নিয়ে ছুটে যায় ওখানে। ওই দুর্বৃত্তকে খুঁজে না পেলেও, কুকুরটি উদ্ধার করে নিয়ে যায় চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে। টানা ট্রিটমেন্ট এবং দেখাশোনায় সুস্থ হয়ে ওঠা কুকুরটি এখনও রাখা আফজাল খানের আশ্রয়স্থলে। এ পর্যন্ত ৫২টি কুকুর এবং বিড়াল রয়েছে তার আশ্রয়স্থলে। প্রায় প্রত্যেকটি কুকুর বিড়ালের ট্রিটমেন্ট এবং সেবা প্রদানসহ খাবার-দাবারের সব দায়িত্ব নিজেরা বহন করছেন তারা। আর্থিকভাবে সাপোর্ট পেলে অনেক বড় পরিসরে কাজ করার পরিকল্পনা আছে তার। ফেসবুকে জড়নরহযড়ড়ফ ঞযব অহরসধষ জবংপঁবৎ নামে একটি গ্রুপ চালাচ্ছেন তিনি। সেখানে সব স্টোর করার কারণে সব কাজ দেখা যাবে এবং অপরিচিতরা চাইলে যোগাযোগ করে তাদের জায়গাটি পরিদশর্নও করার সুযোগ রয়েছে। আফজাল খান আরও জানান, সবার আগে আমাদের পরিবর্তন আনতে হবে মানসিকতার। বিশ্ব যেখানে রকেটের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে আমরা এখনও প্রাণীদের প্রতি সদয় হতে শিখিনি। অবলা প্রাণীদের প্রতি ঘৃণ্য মানসিকতা এখনও অনেকে দূর করতে পারেনি। যে কারণে এই প্রাণীরা রেপের শিকার পর্যন্ত হচ্ছে। আমাদের সংগঠন থেকে যতদূর পর্যন্ত পারছি সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করে যাচ্ছি। তবে এটা জাতীয় পর্যায় থেকে শুরু হলে ব্যাপক সাড়া পড়বে। তবে এটাও সত্যি দিন যত যাচ্ছে তত বৃদ্ধি পাচ্ছে সচেতন মানুষ। আবার অনেকেই এখনও এসব বিষয়ে তেমন অবগত নন। সে কারণে সচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোন উদ্যোগ নেয়া হয় আমরা সে উদ্যোগের সঙ্গে সর্বাঙ্গীণভাবে জড়িত থাকতে চাই। এখন পর্যন্ত আমরা যতটুকু পারছি করছি তবে এখন প্রাণীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, অনেকেই আমাদের কাছে রেখেও যাচ্ছেন তাদের পোষাপ্রাণী। কারণ তাদের বাসায় নাকি পশু পাখি কেউ পছন্দ করে না। আবার আদরের পোষাপ্রাণীটি ফেলে দিতেও মন সায় দেয় না। সে কারণে আমাদের কাছে এসে রেখে যান। আমরাও আশ্রয় দিচ্ছি। কিন্তু নিজেদের সঞ্চয় দিয়ে এতগুলো প্রাণীকে দিনের পর দিন লালন-পালন করতে গিয়ে আমাদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে। যে কারণে আমরাও পৃষ্ঠপোষকতা আশা করছি সবার কাছে। বিশেষ করে সরকারী কোন মহলের সুদৃষ্টি পড়লে আমাদের এই আশ্রয়কেন্দ্র আরও বড় হতে পারে। তবে আবার সবার কাছে অনুরোধ বোবা প্রাণীদের প্রতি সুদৃষ্টি যেন থাকে সবার।
×