ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চার ভ্রমণকন্যা এখন উত্তরবঙ্গে

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১৫ জানুয়ারি ২০১৯

চার ভ্রমণকন্যা এখন উত্তরবঙ্গে

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ নারী তার পায়ের বেড়ি ছিঁড়েছেন, সেটা বেশ পুরনো কথা। এবার ‘নারীদের চোখে বাংলাদেশ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে কনকনে শীত উপেক্ষা করে দেশের উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে প্রবেশ করেছে ওরা চার নারী। মাথায় হেলমেট লাগিয়ে দুটি স্কুটার চালিয়ে, সঙ্গে কাঁধে ব্যাগ-ল্যাপটপ নিয়ে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে অবিরাম ছুটে চলছে এই চারজন। ক্লান্তিকে ছুটি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো এবং শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার কৌশল শেখানোই তাদের লক্ষ্য। এরা হলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ডাঃ সাকিয়া হক, ডাঃ মানসী সাহা তুলি, ইডেন মহিলা কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী নাজমুন নাহার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী সিলভী রহমান। তারা ভ্রমণ কন্যা নামে পরিচিত। উত্তরবঙ্গের প্রতিটি এলাকা তাদের কাছে অচেনা। মানুষগুলোও অচেনা। সবি নতুন তাদের কাছে। তবে নিমিষেই হয়ে উঠে অচেনারা কতনা আপনজন। কখনও সেলফিতে কখনও বা প্রকৃতিতে অপরূপ সৌন্দর্য্য মুগ্ধ ভ্রমণকন্যারা। ওরা সাহসী, ওরা চৌকস। ভয়কে জয় করাই যেন ওদের কাজ। ট্রাভেলার্স অব বাংলাদেশ ভ্রমণকন্যা-সংগঠনের ব্যানারে তারা ছুটে চলছেন দেশের এক জেলা থেকে অন্য জেলায়। শহর ও মফস্বলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী শিক্ষার্থীদের আত্মরক্ষার কৌশল, নারীর ক্ষমতায়ন, বয়ঃসন্ধিকালে সমস্যা-সমাধান, খাদ্য ও পুষ্টি এবং সুরক্ষার কৌশল শেখান তারা। এছাড়া ও দেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং পর্যটন স্পর্ট নিয়েও মাল্টিমিডিয়া প্রদর্শন ও আলোচনা করছে। ভ্রমণের মাধ্যমে নারীদের সচেতন ও ভ্রমণ জগতে নারীদের সুস্থ পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে এই চারজন দেশের ৩৪টি জেলা অতিক্রম করার পর সোমবার এসে প্রবেশ করে ৩৫তম জেলা নীলফামারীতে। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা এবার ‘গ্রাম হবে শহর’। তাই ওই চারজন ভ্রমণকন্যা নীলফামারীর একটি গ্রামের স্কুলকেই বেছে নিল। সকাল সাড়ে ৯টা। ডোমার উপজেলার হরিণচরা ইউনিয়ন। কাঁচা রাস্তার পথ ধরে এগিয়ে গিয়ে পেয়ে গেল হংসরাজ দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ভ্রমণকন্যাদের কাছে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠে গ্রামের এই স্কুলের একঝাঁক বালিকারা। তারাসহ স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিরেন্দ্র চন্দ্র রায় তাদের বরণ করে নেন। তাদের এই ভ্রমণের মাধ্যমে তারা নারীদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন নিজের স্বাধীন ও সত্ত্বার অস্তিত্ব। তাদের মূল লক্ষ্য সমাজের যে সকল ক্ষেত্রে এখনও পুরুষের তুলনায় নারীরা পিছিয়ে আছে, এই স্বাধীন দেশে এখনও যারা সমাজের বাধা অতিক্রম করতে ভয় পায়, নিজের লালিত স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসতে পারছে না মূলত তাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। যার জন্য দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা। নিজেদের অর্থায়নে ঘুরে বেড়ান ভ্রমণকন্যারা। প্রতিটি জেলার প্রশাসক ও সংবাদকর্মীরা সহযোগিতা করছেন তাদের। বিশেষ করে স্কুলের মেয়েরা তাদের খুব আগ্রহ নিয়ে গ্রহণ করায় তখন সব বাধা ও ক্লান্তি তারা ভুলে গেছে। গ্রামের হংসরাজ স্কুলের বালিকারা প্রশিক্ষণে উচ্ছ্বসিত। নিভৃত গ্রামের সেই স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী মনোয়ারা,অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী রাজিয়া আক্তার, নবম শ্রেণীর ছাত্রী রানী আক্তার ও দশম শ্রেণীর ছাত্রী রুবা আক্তার এই চার ভ্রমণ কন্যাদের কাছে প্রশিক্ষণ শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তারা জানায়,আমরা আগে অনেক কিছুই জানতাম না। আজ এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অনেক কিছু শিখতে পারলাম, জানতে পারলাম। আমরা ধন্যবাদ জানাই এই আপুদের। ভ্রমণকন্যা ডাঃ সাকিয়া হক বলেন, ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ থেকে আমরা এসেছি। এটি মেয়েদের ভ্রমণের জন্য প্রথম কোন সংগঠন। আমরা স্কুটিতে ভ্রমণ করে প্রতিটি জেলায় একটি করে স্কুলে গিয়ে সেখানকার মেয়েদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের কর্মশালা করছি। আমরা চাই দেশের প্রতিটি নারী ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশের হাত ধরে নিজেদের দেশকে জানুক এবং দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখুক। তিনি জানান, আমরা চারজন গতবছরের ৬ এপ্রিল ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে যাত্রা শুরু করি। ইতোমধ্যে ৩৪টি জেলা পরিদর্শন করেছেন এই ভ্রমণকারীরা। স্থানগুলো হলো- নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নড়াইল, যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চাঁদপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও। সোমবার নীলফামারী ভ্রমণ শেষে আজ মঙ্গলবার হতে চার ভ্রমণকন্যা স্কুটার চালিয়ে ধাপে ধাপে যাবে উত্তরবঙ্গের অন্যান্য জেলা দিনাজপুর, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, বগুড়া, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা জেলায়।
×