ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্লাস-পরীক্ষা চালুর দাবিতে হাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১৫ জানুয়ারি ২০১৯

ক্লাস-পরীক্ষা চালুর দাবিতে হাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবিতে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষ হলেও নতুন কর্মসূচী দেয়নি শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন থেকে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করা হয়েছে মঙ্গলবার একাডেমিক কাউন্সিলে ক্লাস পরীক্ষা চালুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারও সাংবাদিকদের এসব কথা জানিয়েছেন। এদিকে সহকারী শিক্ষকদের লাঞ্ছিতকারীদের বিচার, বেতন বৈষম্য নিরসন, ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনকারী শিক্ষকের বিচারসহ কয়েকটি দাবিতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক শিক্ষক। সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষ হওয়ায় বিকেল ৩টায় তাদের নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়েছে, একাডেমিক কাউন্সিলে ক্লাস পরীক্ষা চালুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। এরপর দুপুর দেড়টার দিকে আন্দোলরত শিক্ষার্থী ফিরে যায়। এদিকে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক শিক্ষক। তাদের দাবির ব্যাপারে প্রশাসন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ নবেম্বর থেকে বেতন বৈষম্য দূরীকরণ, সহকারী অধ্যাপকদের লাঞ্ছিত ও নারী শিক্ষিকাদের শ্লীলতাহানিকারীদের বিচার, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, রেজিস্ট্রার ও ছাত্র উপদেষ্টার বহিষ্কার ও দুই সহকারী অধ্যাপকের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করছেন ৬১ জন সহকারী অধ্যাপক। তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামও। এতে করে গত প্রায় ২ মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আড়াই শতাধিক শিক্ষকের মধ্যে দেড় শতাধিক শিক্ষক আন্দোলনে থাকায় অধিকাংশ ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এদিকে ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবিতে বুধবার শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামলে বৃহস্পতিবার প্রশাসন প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম ও সহকারী অধ্যাপকদের সঙ্গে আলোচনায় বসে। তবে দিনভর আলোচনা করেও কোন সমাধান করতে পারেনি প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য অনুষদের লেভেল-৪, সেমিস্টার-২ এর শিক্ষার্থী আলমগীর হোসেন আকাশ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছিল। কিন্ত সেই সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন কর্মসূচী ঘোষণার কথা থাকলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়েছে মঙ্গলবারের একাডেমিক কাউন্সিলে ক্লাস পরীক্ষা চালুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তার জন্য সোমবার দুপুর পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত কাম্পিউটার সায়েন্স অনুষদের সহকারী অধ্যাপক নাহিদ সুলতান জানান, শিক্ষকদের যে দাবি সেজন্য এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এজন্য শিক্ষকরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। সহকারী শিক্ষকদের লাঞ্ছিতকারী ও নারী শিক্ষিকাদের শ্লীলতাহানিকারীদের বিচার দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, রেজিস্ট্রার ও ছাত্র পরামর্শকের বহিষ্কার, দুই সহকারী শিক্ষকের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং বেতন বৈষম্য দূর করা না হলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মমিনুল ইসলাম জানান, শিক্ষকদের যারা লাঞ্ছিত করেছে তাদের বিচার হোক এটি সবার কাম্য। যার কারণেই সকল শিক্ষক একত্রিত হয়ে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করছেন। ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ থাক এটা কারো কাম্য নয়, কিন্তু প্রশাসন তাদের সঙ্গে সুষ্ঠু আলোচনায় বসছে না। বৃহস্পতিবার আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর শুক্রবার আলোচনায় বসার কথা থাকলেও প্রশাসন আর বসেনি। তাই শিক্ষকরাও তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। তবে সমঝোতায় এসে এই পরিস্থিতির সমাধান কামনা করেন তিনি। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. শফিউল আলম জানান, বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য উপাচার্য ঢাকায় গেছেন। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। এছাড়া মঙ্গলবার একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক আছে। সেখানে ক্লাস পরীক্ষা চালুর জন্য শিক্ষকদের বলা হবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্কট সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
×