ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিনোদনের পাশাপাশি ইতিহাস জানার সুযোগ থাকছে

বাণিজ্যমেলায় এবার ব্যতিক্রমী বঙ্গবন্ধু স্মৃতি প্যাভিলিয়ন

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৫ জানুয়ারি ২০১৯

বাণিজ্যমেলায় এবার ব্যতিক্রমী বঙ্গবন্ধু স্মৃতি প্যাভিলিয়ন

ওয়াজেদ হীরা ॥ ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় দর্শনার্থীরা ঘোরাফেরা বিনোদন কেনাকাটার পাশাপাশি ইতিহাস জানারও সুযোগ পাচ্ছে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম যারা বঙ্গবন্ধুকে দেখেনি কিংবা বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী পড়েনি তাদের জন্য বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ নামে ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি প্যাভিলিয়নে’ থাকছে ইতিহাস জানার মহাসুযোগ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে মেলা কর্তৃপক্ষ প্যাভিলিয়নটি তৈরি করেছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ প্যাভিলিয়নটি ঘুরে দেখছেন। কেউ কেউ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছেন বঙ্গবন্ধুর সে সময়ের নানা ছবি। তরুণ প্রজন্মের পাশাপাশি মধ্যবয়সী এমনকি প্রবীণরাও ঘুরে দেখছেন। মেলার মূলফটক দিয়ে ঢুকে একটু সামনে গেলেই ডান পাশে চোখে পড়বে ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি প্যাভিলিয়ন’। মেলার অন্যতম আকর্ষণ এ প্যাভিলিয়ন। কয়েক বছর ধরেই মেলায় আসা দর্শনার্থীদের বিশেষ আকর্ষণ করছে প্যাভিলিয়নটি। এবারও ভিন্নভাবে সাজানো হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় এবার কিছুটা ব্যতিক্রমভাবে তুলে ধরা হয়েছে। নতুন রূপে নতুন সাজে প্যাভিলিয়নে এবার রাখা হয়েছে প্রবেশ ও বের হওয়ার দুটি পথ। গত কয়েক বছর প্যাভিলিয়নটি প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য শুধু উত্তর দিকে পথ রাখা হয়েছিল। এবার উত্তর ও দক্ষিণ দুই প্রান্তে দুটি পথ রাখা হয়েছে। প্যাভিলিয়নটিতে প্রবেশ ও বের হওয়ার দুটি পথের সামনেই বড় করে লেখা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ’। লেখার পাশেই আছে বঙ্গবন্ধুর ছবি। তার পাশেই ব্যবহার করা হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) লোগো। প্যাভিলিয়নের সামনে স্থাপন করা হয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান। লাল ও হলুদ রঙের অসংখ্য ফুল সৌন্দর্যবৃদ্ধি করেছে। তার পাশেই রয়েছে একটি লেক। সেই লেকে ভেসে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট নৌকা। সবুজ রঙের ছোট ছোট নৌকাগুলো ভেসে বেড়ানোর দৃশ্যও অসাধারণ। কয়েক বছর ধরে আঙুল উঁচু করে প্যাভিলিয়নটির সামনেই দাঁড়িয়ে থাকা মহাপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য থাকলেও এবার এ ভাস্কর্য নেই। ভাস্কর্য না থাকলেও প্যাভিলিয়ন ঘেঁষে থাকা লেকে বঙ্গবন্ধুর দুই হাত উপরে তুলে ধরা বড় একটি ছবি টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। তার নিচে লেখা ‘২৩ মার্চ, ১৯৭১’। এর নিচেই রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বড় ছবি। প্যাভিলিয়নের বাইরে ভেতরে বঙ্গবন্ধুর জীবনের বিভিন্ন ঘটনার খ-চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ছবি আকারে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিষয়ের ওপর গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন। মেলায় ঘুরতে এসে এ প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখেন না এমন দর্শনার্থী খুব কমই পাওয়া যাবে। মেলায় ঘুরতে আসা ফাহমিদা বলেন, প্রতিবছরই বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নে একটু সময় নিয়ে দেখি। যতবারই দেখি ততবারই নতুন মনে হয়। প্রবীণ হাসান আবব্দুল্লাহ বলেন, নাতি আমাকে জোর করে মেলায় নিয়ে এসেছে। এখানে বঙ্গবন্ধুর পুরনো ছবিগুলো মনে করিয়ে দিল আমার তারুণ্যের কথা। আমি যেন চোখের সামনে সেই সময়ে বঙ্গবন্ধুকেই দেখলাম। প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখা যায় নানা বয়সী দর্শনার্থী বঙ্গবন্ধুর পুরনো নানা ছবি মুগ্ধ হয়ে দেখছেন। কেউ কেউ প্যাভিলিয়নের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছেন। প্যাভিলিয়নের ভেতরে বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনের তথ্য সংক্ষিপ্ত আকারে দেয়া আছে। কবে কোথায় কোন মামলায় বঙ্গবন্ধু কতদিন জেলে ছিলেন তালিকা থেকে তা দর্শনার্থীরা জেনে নিচ্ছেন। প্যাভিলিয়নের ভেতরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ত্রো, সংযুক্ত আরব আমিরাতের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান, জাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট কেনেথ কাউন্ডা, ইংল্যান্ডের রানী এলিজাবেথ ও প্রিন্স ফিলিপসহ বিভিন্ন দেশের রাজনীতিক ও খ্যাতিমান ব্যক্তিদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছবি প্রদর্শন হচ্ছে প্যাভিলিয়নের দেয়ালে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর বেশ কিছু পারিবারিক ছবি ও মুক্তিযুদ্ধকালীন অনেক দুর্লভ ছবি রয়েছে প্রদর্শনীতে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিময় এসব ছবির পাশাপাশি ডিভিডিতে বঙ্গবন্ধুর নানা ভিডিওফুটেজ সেখানে বসে দেখার ব্যবস্থাও রয়েছে। যুদ্ধকালীন এবং এর আগে-পরে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন ভিডিও দেখে যেন ইতিহাসের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারেন দর্শনার্থীরা, সেজন্যই এ ব্যবস্থা। পরিবার নিয়ে মেলায় ঘুরতে আসা ছানোয়ার হোসেন তার সন্তানকে নানা তথ্য দিচ্ছিলেন আর বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন ফুটেজ দেখাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, আমরা যদি আমাদের পরের প্রজন্মকে না জানাই না চেনাই তাহলে তারা ইতিহাস কি করে শিখবে? বাচ্চাদের নিয়ে এসেছি, মেলাও দেখলাম ওরা ইতিহাসও জানল। সহপাঠীদের নিয়ে মেলায় ঘুরতে আসা জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৌরভ আহসান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক জানার আছে আমাদের। উদ্যোগগুলো খুবই ভাল। এতে অনেক অজানা বিষয় আমরা জানতে পারি। এখানে এসে নতুন কিছু জানলাম। প্যাভিলিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেলা চলাকালীন প্রতিদিনই সব বয়সী দর্শনার্থীদের সমাগম আছে প্যাভিলিয়নে। প্যাভিলিয়নে বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের নানা অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন সেবা দিতে হেল্প লাইন ৯৯৯ নম্বর, ফোরজি নেটওয়ার্ক, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১, সাবমেরিন, পদ্মা সেতুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন, মেট্রোরেলসহ আগামী লক্ষ্যমাত্রা দেখানো হয়েছে ছবির মাধ্যমে। উল্লেখ্য, গত ৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ২৪তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার উদ্বোধন করেন। চলবে মাসব্যাপী, ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও ২৫ দেশের ৫২ প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।
×