ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বেতন বাড়ল গার্মেন্টসে ॥ মালিক-শ্রমিক ও সচিব কমিটির ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৪ জানুয়ারি ২০১৯

বেতন বাড়ল গার্মেন্টসে ॥ মালিক-শ্রমিক ও সচিব কমিটির ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ টানা শ্রমিক বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর ছয়টি গ্রেডে বেতন বাড়িয়েছে সরকার। এতে সর্বোচ্চ মূল বেতন বেড়েছে ৫২৫৭ টাকা। সে হিসাবে প্রথম গ্রেডের একজন শ্রমিক ১৮ হাজার ২৫৭ টাকা বেতন পাবেন। আর সর্বনিম্ন ২৭০০ টাকা হিসাবে সপ্তম গ্রেডে একজন শ্রমিক সর্বনিম্ন বেতন পাবেন ৮ হাজার টাকা। রবিবার শ্রম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মালিক-শ্রমিক ও সচিব কমিটির ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। ত্রিপক্ষীয় ওই বৈঠক শেষে নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান। এদিকে আগামীকালের (আজ সোমবার) মধ্যে শ্রমিকরা কাজে ফিরে না গেলে সব পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে বিজিএমইএ। রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি জানায়, যেসব শ্রমিক কারখানায় ফিরবেন না তাদের কোন মজুরি দেয়া হবে না। অন্যদিকে দুপুরে বিজিএমইএর সংবাদ সম্মেলন আশুলিয়া ও সাভারে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কারখানায় ইট-পাটকেল ছুড়ে ভাংচুর চালায়। এ সময় আহত হন অন্তত ২০ শ্রমিক। বন্ধ ঘোষণা করা হয় শতাধিক কারখানা। রবিবার ঘোষিত সংশোধিত মজুরি কাঠামো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রথম গ্রেডের একজন কর্মী এখন থেকে সব মিলিয়ে ১৮ হাজার ২৫৭ টাকা বেতন পাবেন। ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে এই গ্রেডের মজুরি ছিল ১৩ হাজার টাকা। ২০১৮ সালের নবেম্বরে যে গেজেট প্রকাশ হয়, তাতে ১৭ হাজার ৫১০ টাকা করা হয়েছিল। এবার সংশোধিত নতুন মজুরি কাঠামো অনুসারে প্রথম গ্রেডে ৭৪৭ টাকা বেড়ে মূল মজুরি দাঁড়িয়েছে ৫২৫৭ টাকা। দ্বিতীয় গ্রেডের সর্বমোট বেতন ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৪১৬ টাকা। ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে এই গ্রেডের বেতন ১০ হাজার ৯০০ টাকা এবং ২০১৮ সালে মজুরি কাঠামোর গেজেটে তা ১৪ হাজার ৬৩০ টাকা ছিল। এই গ্রেডে ৭৮৬ টাকা বেড়ে মূল মজুরি দাঁড়িয়েছে ৪৫১৬ টাকা। তৃতীয় গ্রেডের সর্বমোট বেতন ঠিক হয়েছে ৯ হাজার ৮৪৫ টাকা, যা ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে ৬ হাজার ৮০৫ টাকা এবং ২০১৮ সালের গেজেটে ৯ হাজার ৫৯০ টাকা করা হয়েছিল। তৃতীয় গ্রেডে ২৫৫ টাকা বেড়ে মূল মজুরি দাঁড়িয়েছে ৩০৪০ টাকা। চতুর্থ গ্রেডের সর্বমোট বেতন ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৩৪৭ টাকা। ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে এই গ্রেডের বেতন ৬ হাজার ৪২০ টাকা এবং ২০১৮ সালে মজুরি কাঠামোর গেজেটে তা ৯ হাজার ২৪৫ টাকা করা হয়েছিল। চতুর্থ গ্রেডে ১০২ টাকা বেড়ে মূল মজুরি দাঁড়িয়েছে ২৯২৭ টাকা। পঞ্চম গ্রেডে সর্বমোট বেতন ঠিক হয়েছে ৮ হাজার ৮৭৫ টাকা, যা ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে ৬ হাজার ৪২ টাকা এবং ২০১৮ সালের গেজেটে ৮ হাজার ৮৫৫ টাকা করা হয়েছিল। পঞ্চম গ্রেডে ২০ টাকা বেড়ে মূল মজুরি দাঁড়িয়েছে ৪৫১৬ টাকা। ষষ্ঠ গ্রেডের সর্বমোট বেতন ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪২০ টাকা। ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে তা ছিল ৫ হাজার ৬৭৮। আর ২০১৮ সালে মজুরি কাঠামোর গেজেটে তা করা হয়েছিল ৮ হাজার ৪০৫ টাকা করা হয়েছিল। ষষ্ঠ গ্রেডে ১৫ টাকা বেড়ে মূল মজুরি দাঁড়িয়েছে ২৭০০ টাকা। আর সপ্তম গ্রেডের মজুরি সব মিলিয়ে গেজেটের মতোই আট হাজার টাকা রাখা হয়েছে। ২০১৩ সালের কাঠামোতে সর্বনিম্ন গ্রেডের বেতন ছিল ৫৩০০ টাকা। সভা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, দু’একদিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। সংশোধিত এই কাঠামো গত ডিসেম্বর থেকেই কার্যকর ধরা হবে। ফেব্রুয়ারির বেতন থেকে তা সমন্বয় করা হবে। বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শ্রম সচিব আফরোজা খান, বাণিজ্য সচিব মফিজুল ইসলাম, পোশাক কারখানা মালিকদের পক্ষে বিজিএমই সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সালাম মুর্শেদী এমপি, আতিকুল ইসলাম, শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, এ কে আজাদ এবং শ্রমিকদের পক্ষে নাজমা আকতার, ফজলুল হক মন্টু, আমিরুল ইসলাম আমিন উপস্থিত ছিলেন। এর আগে শ্রম সচিব আফরোজা খানের নেতৃত্বে পোশাক কারখানা মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আফরোজা খান বলেন, শ্রমিকবান্ধব সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডের সঙ্গে ১ এবং ২ নং গ্রেডের মজুরি সমন্বয়েরও নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে সমন্বয়ের পর প্রতিটি গ্রেডেই মজুরি যৌক্তিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সে সঙ্গে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টসহ বাড়ি ভাড়া ৪০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ করে সবপক্ষের সহযোগিতায় কমিটি একটি সন্তোষজনক সমাধানে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে। দেশে গার্মেন্টস শিল্পের উন্নয়ন এবং শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবেন বলে আশা করছে সরকার। পরে বৈঠক শেষে নতুন মজুরি কাঠামো অনুমোদন করে তাতে শ্রমিক নেতারা স্বাক্ষর করেন। বৈঠকে এফবিসিআইয়ের সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, শ্রমিক আন্দোলনের নামে যারা নৈরাজ্য করেছে, ভাংচুর চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। অপরদিকে শ্রমিক প্রতিনিধি আমিনুল হক আমিন বলেন, আমরাও ভাংচুর-হামলার বিপক্ষে। বহিরাগত যারা ভাংচুর করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থার নেয়ার পক্ষে আমরা। তবে নিরীহ কোন পোশাক শ্রমিক হয়রানির শিকার যাতে না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। উল্লেখ্য, নতুন মজুরি কাঠামো অনুযায়ী বেতন পরিশোধের দাবিতে গত ৭ জানুয়ারি থেকে আন্দোলন করে আসছেন ঢাকা ও আশপাশের এলাকার পোশাক শ্রমিকরা। এক সপ্তাহের টানা আন্দোলনের ফলে পোশাক শিল্পে অচলাবস্থা তৈরি হয়। কোথাও কোথাও পোশাক শ্রমিকদের পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবিও মোতায়েন করা হয়। শ্রমিকদের দাবি পূরণের বিষয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়। কাজে ফিরে না গেলে কারখানা বন্ধের ঘোষণা বিজিএমইএর ॥ শ্রমিকরা আন্দোলনে মজুরি নয় আগামীকাল (আজ সোমবার) থেকে যেসব শ্রমিক কারখানায় ফিরবেন না তাদের কোন মজুরি দেয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর পক্ষ থেকে। এছাড়াও আগামীকালের (আজ সোমবার) মধ্যে শ্রমিকরা কাজে ফিরে না গেলে সব পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। রবিবার পোশাক শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিজিএমইএর সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়। শ্রমিকদের উদ্দেশে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আপনার কর্মস্থলে ফিরে যান। উৎপাদন কাজে অংশগ্রহণ করুন। শ্রমিকরা আগামীকাল (আজ সোমবার) থেকে কাজ শুরু না করলে কারখানা বন্ধ করা হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, শ্রম আইনের ১৩/১ ধারা মোতাবেক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হবে। এ সময় সরকারের কাছে ব্যবসায়ী মালিকদের জান ও মালের নিরাপাত্তা চান বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, শ্রমিকদের মজুরি বোর্ডে বৈষম্য আছে বলে তাদের আন্দোলনে নামিয়েছে একটি কুচক্রী মহল। পোশাক শিল্পের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে একটি মহল চক্রান্ত করছে। বৈষম্যের কথা বলে শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে, ভয়ভীতি দেখিয়ে, কর্মবিরতি করতে প্ররোচিত করা হচ্ছে। বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, আমরা একাধিকবার শ্রমিকদের অনুরোধ করেছি কাজে ফিরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তারা কাজে ফেরেনি। নতুন বেতন কাঠামোয় বৈষম্য আছে এই উস্কানি দিয়ে পোশাক খাতের শ্রমিকদের অশান্ত করা হচ্ছে। পোশাক শিল্প খাতকে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। সিদ্দিকুর রহমান আরও জানান, ৮ জানুয়ারি সরকার-মালিক ও শ্রমিকদের ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। মজুরি গ্রেডের ৩, ৪ ও ৫ যদি সমন্বয়ের প্রয়োজন থাকে তা বিবেচনা করে সুপারিশ করবে সেই কমিটি। সেদিনের সভায় সবাই একমত হন বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট সমন্বয়ের পর তা কোন শ্রমিকের মূল অথবা মোট মজুরির কম হবে না। এই ঘোষণা দেয়ার পরও শ্রমিকরা কাজে ফেরেনি। তারা কারখানা ভাংচুর করছে, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করছে, জনজীবনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। বিজিএমইএর সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী এমপি, সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। আশুলিয়া ও সাভারে শ্রমিক বিক্ষোভে আহত ২০ ॥ এদিকে সরকার ঘোষিত মজুরি কাঠামোতে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে টানা ৭ম দিনের মতো রবিবার আশুলিয়া ও সাভারে বিক্ষোভ করে তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কারখানায় ইট-পাটকেল ছুড়ে ভাংচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শ্রমিকদের বাধা প্রদান করলে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ২০ জন শ্রমিক। এ ছাড়া, শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জামগড়া, নরসিংহপুর, জিরাবো, কাঠগড়াসহ বিভিন্ন এলাকার শতাধিক কারখানা একদিনের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে মালিকপক্ষ। সাভারেও কয়েকটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। জানা যায়, আশুলিয়ার ইয়ারপুর এলাকায় একবার শ্রমিক অসস্তোষ শুরু হলে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়। অন্যান্য এলাকায় শ্রমিকরা আন্দোলন করলেও সরকারী হস্তক্ষেপে তার সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু জামগড়া এলাকায় অন্যান্য জায়গার তুলনায় ভূইফোর শ্রমিক সংগঠন গজিয়ে উঠায় এখানকার আন্দোলন সহজে দমানো সম্ভব হয় না। অভিযোগ উঠেছে- এসব শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় ঝুট ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে থাকে। যে কারণে তারা অবৈধভাবে টাকা-পয়সা এবং ক্ষমতা খাঁটিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলনে উস্কানি দেয় এবং শ্রমিকরা সহজেই সেই ফাঁদে পা দিয়ে পোশাক শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। ইতোপূর্বে কয়েকবার এসব এলাকায় বড় ধরনের পোশাক শিল্পে বড় ধরনের অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছিল। আশুলিয়ায় বিক্ষোভ অব্যাহত ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা সাভার থেকে জানান, সরকার ঘোষিত মজুরি কাঠামোতে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে টানা ৭ম দিনের মতো রবিবার আশুলিয়া ও সাভারে বিক্ষোভ করে তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কারখানায় ইট-পাটকেল ছুঁড়ে ভাংচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শ্রমিকদের বাধা প্রদান করলে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ২০ জন শ্রমিক। এছাড়া, শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জামগড়া, নরসিংহপুর, জিরাবো, কাঠগড়াসহ বিভিন্ন এলাকার শতাধিক কারখানা একদিনের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে মালিকপক্ষ। সাভারেও কয়েকটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। শ্রমিকদের এ আন্দোলনের ঘটনায় সরকার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চ পর্যায়ের একটি গঠন করা হলে গাজীপুর, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকার শ্রমিকরা কাজে যোগদান করেছে। তবে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় শ্রমিকদের আন্দোলনে ঘি ঢেলে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন ভূঁইফোর শ্রমিক সংগঠন, স্থানীয় ঝুট ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি এবং পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। জানা যায়, আশুলিয়ার ইয়ারপুর এলাকায় একবার শ্রমিক অসন্তোষ শুরু হলে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়। অন্যান্য এলাকায় শ্রমিকরা আন্দোলন করলেও সরকারী হস্তক্ষেপে তার সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু, জামগড়া এলাকায় অন্যান্য জায়গার তুলনায় ভূইফোর শ্রমিক সংগঠন গজিয়ে উঠায় এখানকার আন্দোলন সহজে দমানো সম্ভব হয় না। অভিযোগ উঠেছে- এসব শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কাজে লাগিয়ে স্থানীয় ঝুট ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে থাকে। যে কারণে তারা অবৈধভাবে টাকা-পয়সা এবং ক্ষমতা খাটিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলনে উস্কানি দেয় এবং শ্রমিকরা সহজেই সেই ফাঁদে পা দিয়ে পোশাক শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। ইতোপূর্বে কয়েকবার এ সকল এলাকায় বড় ধরনের পোশাক শিল্পে বড় ধরনের অরাজাগতার সৃষ্টি হয়েছিল। রবিবার সকালে টানা সপ্তম দিনের মতো আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এ সময় শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করে কাজে যোগ না দিয়ে শুধু হাজিরা কার্ড পাঞ্চ করে বের হয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা সড়কে অবস্থান নিয়ে যানবাহন ভাংচুরের চেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় পুলিশ বাধা দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও জলকামান ব্যবহারসহ লাঠিচার্জ করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এভাবে উভয়পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় চলা সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। পুলিশ জানায়, টানা শ্রমিক অসন্তোষের সপ্তম দিন রবিবার সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের বেশ কয়েকটি কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে মালিকপক্ষ। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধের চেষ্টা করলে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া, যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ ও বিজিবি টহলের পাশাপাশি প্রতিটি কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
×