ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এবার শফীর নারীবিরোধী বক্তব্যে সমালোচনা ফখরুলের কণ্ঠে

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৪ জানুয়ারি ২০১৯

 এবার শফীর  নারীবিরোধী  বক্তব্যে  সমালোচনা  ফখরুলের কণ্ঠে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিক্ষা নিয়ে হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর নারীবিরোধী বক্তব্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশীদের বিব্রত করবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। রবিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। ফখরুল বলেন, মেয়েদের পঞ্চম শ্রেণীর বেশি স্কুলে পড়ান যাবে না বলে সম্প্রতি হেফাজত আমিরের বক্তব্যে আমি হতবাক ও বিস্মিত হয়েছি। আমরা মনে করি, একবিংশ শতাব্দীতে এ ধরনের বক্তব্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের মর্যাদাহানি হবে। নারীবিরোধী এ বক্তব্য অনাকাক্সিক্ষত, অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেকই নারী। প্রাচীন প্রথা ও কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে এসে জাতি গঠনমূলক ও জাতীয় অর্থনীতিতে তাদের যথার্থ ভূমিকা পালনের প্রধান শর্ত হচ্ছে নারী শিক্ষা। এটি বিএনপি ঘোষিত নীতি। আহমদ শফীর বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে তিনি বলেন, নারী শিক্ষার সঙ্গে ধর্মের কোন বিরোধ নেই। সন্তানের প্রাথমিক শিক্ষালাভ ঘটে মায়ের কাছ থেকেই। নৈতিক ও অক্ষরজ্ঞান পরিচয়ের প্রথম পাঠশালাই হলো মায়ের সাহচর্য। ফখরুল বলেন, মা সুশিক্ষিত না হলে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানটি ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত হয় না। সামাজিক অন্যায় ও বৈষম্য দূর করার জন্য অবশ্যই নারীর শিক্ষা অপরিহার্য। শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হলে ইসলামের অন্তর্নিহিত মর্মবাণীও বুঝা সম্ভব হবে না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, নারীরা শিক্ষিত না হলে তারা সমাজে অমানবিক নষ্টবুদ্ধির মানুষদের প্রতারণা, লাঞ্ছনা ও শোষণ-বঞ্চনা থেকে রক্ষা পাবে না। নিগ্রহ ও অসম্মানের হাত থেকে বাঁচতে দেশের অক্ষরহীন নারীদের অবশ্যই লেখাপড়া করতে হবে। না হলে আমাদের দেশ ও সমাজ অগ্রসরমান পৃথিবী থেকে অনেক পেছনে অবস্থান করবে। উল্লেখ্য, শুক্রবার চট্টগ্রামের হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার ১১৮তম বার্ষিক মাহফিলে মাদ্রাসা মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফী মেয়েদের পড়ালেখা না করানোর জন্য সেখানে উপস্থিত মুসল্লিদের ওয়াদা করান। তিনি বলেন, ‘আপনাদের মেয়েদের স্কুল-কলেজে দেবেন না। বেশি হলে ক্লাস ফোর বা ফাইভ পর্যন্ত পড়াতে পারবেন। কারণ, বিয়ে দিলে স্বামীর টাকাপয়সা, এগুলা হিসাব রাখতে হবে, স্বামীর কাছে চিঠি লিখতে হবে। আর বেশি যদি পড়ান, পত্রপত্রিকায় দেখতেছেন ক্লাস এইট, নাইন, টেন, বিএ, এমএ পড়ালে কিছুদিন পরে আপনার মেয়ে থাকবে না। অন্য কেহ নিয়ে যাবে।’ আহমদ শফী পরে অবশ্য দাবি করেছেন, তার বক্তব্য গণমাধ্যমে ভুলভাবে প্রচার করা হয়েছে। তিনি নারী শিক্ষার বিরোধিতা করেননি, আপত্তি করছেন ছেলে মেয়ের একসঙ্গে লেখাপড়া নিয়ে। প্রসঙ্গত, এক সময় হেফাজতের কর্মকান্ডের প্রত্যক্ষ সমর্থন দিত বিএনপি। মতিঝিলের শাপলাচত্বরে বসে যখন হেফাজতে ইসলাম আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ডাক দেন তখন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দলের নেতাকর্মীদের হেফাজতের কর্মসূচীতে অংশ নেয়া ও তাদের খাবার সরবরাহের আহ্বান জানান। খালেদা জিয়ার এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে দলের নেতাকর্মীরা হেফাজতের সঙ্গে শাপলা চত্বরের সমাবেশে যোগ দেন এবং তাদের খাবার সরবরাহ করেন। কিন্তু সদ্যসমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেফাজতের সমর্থন না পাওয়ায় বিএনপি এখন হেফাজতবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে। আর এ জন্যই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে বলেন, মেয়েদের স্কুল-কলেজে না পাঠানোর জন্য হেফাজত আমিরের বক্তব্যে আমি হতবাক ও বিস্মিত হয়েছি। মির্জা ফখরুল বলেন, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শিক্ষিত হওয়া ছাড়া ইসলামে সমাজকল্যাণ, অর্থনেতিক ও মানবিক সাম্যসহ ইসলামের অন্তর্নিহিত মর্মবাণী বুঝতে সক্ষম হবে না। সামাজিক অন্যায় ও বৈষম্য দূর করার জন্য অবশ্যই নারীর শিক্ষা অপরিহার্য। দেশের মোট জনসমষ্টির অর্ধেকই নারী। তাই প্রাচীন প্রথা ও কুসংস্কারের নিগড় থেকে বেরিয়ে এসে জাতি গঠনমূলক ভূমিকা পালনের প্রধান শর্ত নারী শিক্ষা। বিএনপি মনে করে নারী সুশিক্ষায় আলোকিত না হলে তাদের বিকাশ ও প্রকৃত ক্ষমতায়ন হবে না।
×