ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রেনেড হামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপীল শুনানির জন্য গৃহীত

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১৪ জানুয়ারি ২০১৯

 গ্রেনেড হামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপীল শুনানির জন্য গৃহীত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহুল আলোচিত বর্বরোচিত ভয়াবহ একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার আপীল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে হাইকোর্ট। রবিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোরশেদ। তবে এ সময় আসামিপক্ষে কোন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। এর আগে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া দুই মামলার রায়সহ প্রায় ৩৭ হাজার ৩৮৫ পাতার নথি ২০১৮ সালের ২৭ নবেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে পৌঁছে। ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল থেকে এ নথি হাইকোর্টে সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠানো হয়। নথির মধ্যে এই হত্যা মামলার রায় ৩৬৯ পাতা এবং বিস্ফোরক আইনের মামলার রায় ৩৫৬ পাতা। আর অন্যান্য নথির মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের সাক্ষীর জবানবন্দী ও জেরা, তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে দেয়া সাক্ষীদের জবানবন্দী, যুক্তিতর্ক, আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য, আদালতে দেয়া আসামিদের স্বীকারোক্তি, ট্রাইব্যুনালে দেয়া আসামি, রাষ্ট্রপক্ষের হাজিরা ও দরখাস্ত । ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন মামলা দু’টিতে রায় ঘোষণা করেন। সে হিসেবে রায় ঘোষণার ৪৮ দিন পর নথি হাইকোর্টে পাঠানো হলো। ১০ অক্টোবর একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ১১ আসামির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড হয়। আদালত ১৯ আসামিকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করে। তারা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর (উপস্থিত), বিএনপি-জামায়াত জোটের সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু (উপস্থিত), তার ভাই মাওলানা তাইজউদ্দিন (পলাতক), হুজির সাবেক আমির মাওলানা শেখ আবদুস সালাম (উপস্থিত), কাশ্মীরি জঙ্গী আব্দুল মাজেদ ভাট (উপস্থিত), আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জিএম (উপস্থিত), মাওলানা শওকত ওসমান (উপস্থিত), মহিবুল্লাহ ওরফে অভি (উপস্থিত), মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডাঃ জাফর (উপস্থিত), আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল (উপস্থিত), মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (উপস্থিত), হাফেজ মাওলানা আবু তাহের (উপস্থিত), হোসাইন আহম্মেদ তামিম (্উপস্থিত), মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে আবু জান্দাল (উপস্থিত), মোঃ রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ (উপস্থিত), মোঃ উজ্জল (উপস্থিত), এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী (উপস্থিত), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আবদুর রহিম (উপস্থিত), হানিফ পরিবহনের মালিক হানিফ (উপস্থিত)। এই আসামিদের দন্ড বিধি ৩০২, ১২০ খ, ৩৪ ধারায় হত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। দন্ডবিধি ৩০৭ ধারায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গুরুতর জখম করার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। বিস্ফোরক আইনের ৩ ও ৬ ধারায় হত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। বিস্ফোরক আইনের ৪ ও ৬ ধারায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গুরুতর জখম করার দায়ে ২০ বছরের কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। সব মিলিয়ে এই ১৯ আসামির ক্ষেত্রে কেবল মৃত্যুদন্ডের শাস্তিই কার্যকর হবে। মৃত্যু পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাদের দন্ড কার্যকর করতে বলা হয়েছে রায়ে। এ মামলায় ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। তারা হলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (পলাতক), খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী (পলাতক), বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (পলাতক), হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল (উপস্থিত), মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু হোমাইরা ওরফে পীর সাহেব (উপস্থিত), মাওলানা সাব্বির আহমেদ আহম্মেদ ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির (উপস্থিত), আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আব্দুর রাজ্জাক (উপস্থিত) , আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার (উপস্থিত), মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ (উপস্থিত), হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া (উপস্থিত) মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন (পলাতক), আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন (পলাতক), মোঃ খলিল (পলাতক), জাহাঙ্গীর আলম বদর (পলাতক), মোঃ ইকবাল, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন (পলাতক), মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই (পলাতক), রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু (পলাতক)। তাদের দন্ড বিধি ৩০২, ১২০ খ, ৩৪ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। দন্ড বিধি ৩০৭, ১২০ খ, ৩৪ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড, ৫০ হাজার টাকা জনিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩ ও ৬ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। বিস্ফোরক আইনের ৪ ও ৬ ধারায় ২০ বছরের কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। সব সাজা একযোগে কার্যকর হবে বলে এই ১৯ আসামির ক্ষেত্রে কেবল যাবজ্জীবন কারাদন্ড কার্যকর হবে। এছাড়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোঃ আশরাফুল হুদা (উপস্থিত)ও শহুদুল হক (উপস্থিত), খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব) সাইফুল ইসলাম ডিউক (উপস্থিত), লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার (পলাতক), মেজর জেনারেল (অব) এটিএম আমিন (পলাতক), ডিএমপির সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান (পলাতক), আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান (পলাতক), সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী (উপস্থিত), সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার মোঃ রুহুল আমিন (উপস্থিত), সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ (উপস্থিত), সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান (উপস্থিত)কে দুই বছর করে কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদন্ড প্রদান করে আদালত।
×