ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাশরাফির রংপুর রাইডার্সের হার ৫ রানে

মুস্তাফিজ ‘ম্যাজিকে’ রাজশাহী কিংসের জয়

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ১৪ জানুয়ারি ২০১৯

মুস্তাফিজ ‘ম্যাজিকে’ রাজশাহী কিংসের জয়

মিথুন আশরাফ ॥ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বিপিএলের প্রথম পর্বের শেষমুহূর্তে নাটকীয় ম্যাচগুলোর দেখা মিলেছে। শনিবার চিটাগং ভাইকিংস-খুলনা টাইটান্স ম্যাচ ‘সুপারওভারে’ নিষ্পত্তি হয়েছে। রবিবার রাজশাহী কিংস-রংপুর রাইডার্স ম্যাচ শেষ ওভারে গিয়ে ফয়সালা হয়েছে। রংপুরের নিশ্চিত জেতা ম্যাচ ছিল। কিন্তু শেষ ওভারে ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমানের ‘ম্যাজিক’ বোলিংয়ে রংপুরকে ৫ রানে হারিয়ে দিয়েছে রাজশাহী। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নামে রাজশাহী কিংস। ৮ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৩৫ রান করতে পারে। উইকেটরক্ষক জাকির হাসান দলের হয়ে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৪২ রান করেন। মোহাম্মদ হাফিজের ব্যাট থেকে আসে ২৬ রান। ফরহাদ রেজা ও মাশরাফি বিন মর্তুজা ২টি করে উইকেট নেন। জবাব দিতে নেমে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে যায় রংপুর। মোহাম্মদ মিঠুনের (৩০) দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর রাইলি রুশোর (৪৪*) ধারাবাহিকতায় জেতার কাছে গিয়ে মুস্তাফিজ ঝলকে হেরেছে রংপুর। শেষ ওভারে জিততে রংপুরের ৯ রান দরকার ছিল। টি২০তে এই রান কোন বিষয়ই নয়। প্রথম বলে মুস্তাফিজ এক রান দিলেও পরের তিন বলে কোন রানই দেননি। একের পর এক বলে ফরহাদ রেজাকে বোকা বানিয়েছেন মুস্তাফিজ। এক রান নিয়ে রুশোকে ব্যাটিং করার সুযোগ করে দিতে পারলেই হয়তো জয় মিলত রংপুরের। কিন্তু মুস্তাফিজের অসাধারণ ‘কাটার’গুলোতে ফরহাদ এমনই ব্যর্থ হন, দল শেষপর্যন্ত হেরে যায়। পঞ্চম বলেও ফরহাদ ব্যাটে বল লাগাতে ব্যর্থ হন। কিন্তু রুশো দৌড়ে ১ রান নিয়ে নেন। তখন ১ বলে জিততে ৭ রানের প্রয়োজন পড়ে। তখনই যেন রাজশাহী জয় দেখা হয়ে যায়। রুশো শেষ বলে ছক্কা হাকালেও ম্যাচ ‘টাই’ হতো। তখন ম্যাচ ‘সুপারওভারে’ নিষ্পত্তি হতো। কিন্তু ১ রানের বেশি রুশোও নিতে পারেননি। তাতে করে রংপুর শেষপর্যন্ত ৬ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৩০ রানের বেশি করতে পারেনি। রুশো ৪৪ রানে থাকেন অপরাজিত। মুস্তাফিজ ৪ ওভার বল করে ১৭ রান দিয়ে কোন উইকেট নিতে পারেননি। তবে শেষ ওভারে যে মাত্র ৩ রান দিয়ে দলকে জেতান, সেখানেই পাদপ্রদীপের আলোয় এসে পড়েন মুস্তাফিজ। জাকির হাসান ম্যাচসেরা হন। তবে ম্যাচ জয়ের নায়ক সেই মুস্তাফিজই থাকেন। রংপুরের ইনিংসের শুরুতেই চমকের দেখা মিলে। ওপেনিংয়ে গেইলের সঙ্গে ব্যাট হাতে নেমে যান মাশরাফি। ওপেনার মেহেদী মারুফ এদিন একাদশে ছিলেন না। তার ব্যাটিং পজিশনের অভাব পূরণ করার সঙ্গে শুরুতেই যদি কিছু রান করা যায়, সেই আশাতেই নামেন মাশরাফি। কিন্তু কামরুল ইসলাম রাব্বির গতির সঙ্গে ধেয়ে আসা বাউন্স বলটিতে উইকেটরক্ষকের কাছে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন মাশরাফি। রানের খাতা খোলার আগেই আউট হয়ে যান রংপুর অধিনায়ক। যেদিন রংপুরের খেলা থাকে, সেদিন ক্রিস গেইলের ব্যাটিং ঝড় দেখতেই ক্রিকেটপ্রেমীরা স্টেডিয়ামে আসেন। গেইল দুই ম্যাচে (১ ও ৮ রান) কিছুই করতে পারেননি। কিন্তু রাজশাহীর বিপক্ষে ম্যাচটিতে যেন খোলস ছেড়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। রাব্বির করা দ্বিতীয় ওভারের প্রথম পাঁচ বলেই দুই ছক্কা, দুই চার হাঁকিয়ে দেন। ২০ রান নিয়ে নেন গেইল। কিন্তু ষষ্ঠ বলটিতেও ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ব্যাটে-বলে ঠিকমতো যোগাযোগ না হওয়াতে লং অনে ক্যাচ আউট হয়ে যান। ১৪ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় ২৩ রান করা গেইলকে আউট করে রাব্বি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচেন। আনন্দেও ফেটে পড়েন রাব্বি। গেইল ঝড় উঠে, তা দ্রুতই থেমেও যায়। তাতে করে ঢাকায় ‘ফ্লপ’ গেইলকেই দেখার মিলে। গেইল ‘ফ্লপ’ হলেও মোহাম্মদ মিঠুন দ্যূতি ছড়িয়ে যাচ্ছেন। গত ম্যাচে ৪৯ রান করার পর রাজশাহীর সঙ্গে ৩০ রান করে আউট হন। রাইলি রুশোকে নিয়ে ৪০ রানের জুটি গড়ে দলের ৭১ রানের সময় হাফিজের বলে লরি ইভান্সের অসাধারণ ক্যাচে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন মিঠুন। ১২ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হতেই হাফিজের শিকারে পরিণত হন রবি বোপারাও। ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় যেন রংপুর। তবে রাজশাহীর স্কোরবোর্ডে রান কম হওয়ায় রংপুরের জেতার আশা থাকে। আর ৯ রান যোগ হতেই বেনি হাওয়েল রান আউট হয়ে যান। তখন রংপুরের জিততে হলে যে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে ব্যাটসম্যানদের, সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়। রুশো উইকেটে থাকায় আবার হতাশাও যুক্ত হয়ে যায়নি। রুশো-নাহিদুল ইসলাম মিলে ম্যাচ জিতিয়েই মাঠ ছাড়বেন, এমনই ভাবা হয়েছিল। কিন্তু ১৯তম ওভারের শেষ বলে গিয়ে, দলের ১২৬ রানে গিয়ে নাহিদুল আউট হওয়াতেই যেন হারের শঙ্কায় পড়ে যায় রংপুর। শেষ ওভারে জিততে ৯ রান লাগে। তাও করা খুবই সম্ভব। কিন্তু রেজা যে মুস্তাফিজের টানা তিনটি বল ব্যাটেই লাগাতে পারবেন না, তা কী আর কেউ ভেবেছে! মুস্তাফিজের ‘কাটার’ এবার রংপুর শিবিরে ভারী হয়েই পড়েছে। শেষ ওভারে রুশো ২ বল খেলার সুযোগ পেলেন। তাতে ম্যাচ জেতাতে পারলেন না। জেতার সুন্দর সুযোগ থাকা ম্যাচ হেরে গেল রংপুর। তাতে পয়েন্ট তালিকাতেও দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় স্থানে নেমে গেল মাশরাফির দল। রাজশাহী খুব বড় স্কোর গড়তে পারেনি। ৩৬ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে। শুরুতেই ওপেনিংয়ে নামা মেহেদী হাসান মিরাজ সাজঘরে ফেরেন। এরপর মুমিনুল হক ও সৌম্য সরকার মিলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। মাশরাফির বোলিং দ্যূতির সামনে মিরাজ ও সৌম্যর ব্যাটিং ফিকে হয়ে ধরা দেয়। আর সোহাগ গাজীর স্পিন ঘূর্ণি বোঝার আগেই যেন মুমিনুল আউট হয়ে যান। কী দুর্দশায় পড়েছে রাজশাহী। চতুর্থ উইকেটে গিয়ে মোহাম্মদ হাফিজ ও জাকির হাসান মিলে যা এগিয়ে নিয়ে যান। দুইজন মিলে ৫৪ রানের জুটিটি না গড়লে ১০০ রান করাই রাজশাহীর জন্য কঠিন হয়ে পড়ত! দলের ৯০ রানে গিয়ে হাফিজ (২৬) রান আউট হয়ে গেলে পুরোই বিপাকে পড়ে যায় রাজশাহী। এরপর একেক ব্যাটসম্যান ব্যাট হাতে নামেন। একটু উইকেটে থাকার চেষ্টা করেন, আর আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন। অনেক কষ্টে রাজশাহী ১৩৫ রান করতে পারে। তবে ১৩৩ রানের মধ্যে আরও ৪টি উইকেট হারিয়ে ফেলে দলটি। ৮৯ রান পর্যন্ত ৩ উইকেট ছিল। সেখান থেকে আর ৪৩ রানের মধ্যে ৫ উইকেটের পতন ঘটে। তবে জাকির ঠিকই উইকেট আকড়ে থাকেন। তার সামনে দিয়ে পাঁচ ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যান। কিন্তু জাকির ঠিকই দলকে যতদূর পেরেছেন এগিয়ে নিয়ে গেছেন। শেষপর্যন্ত ৩৬ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ৪২ রান করে অপরাজিতও থাকেন জাকির। একাই যেন রংপুর বোলারদের সামনে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে সক্ষম হন। তার এমন ধৈর্য ধরে খেলায় ফলও পেয়েছে রাজশাহী। তবে শেষমুহূর্তে মুস্তাফিজের ‘ম্যাজিক’ বোলিং না হলে রাজশাহীর জয় কঠিনই ছিল। শেষপর্যন্ত রংপুরকে হারিয়ে রাজশাহী জিতে। স্কোর ॥ রাজশাহী কিংস ইনিংস ১৩৫/৮; ২০ ওভার (মুমিনুল ১৪, মিরাজ ০, সৌম্য ১৮, হাফিজ ২৬, জাকির ৪২*, ইভান্স ২, ডয়েশ্চেট ১৪, উদানা ৮, আরাফাত ১, কামরুল ১*; রেজা ২/১৭, মাশরাফি ২/২২)। রংপুর রাইডার্স ইনিংস ১৩০/৬; ২০ ওভার (গেইল ২৩, মাশরাফি ০, মিঠুন ৩০, রুশো ৪৪*, বোপারা ১, হাওয়েল ৪, নাহিদুল ১৬, রেজা ০*; হাফিজ ২/২২, রাব্বি ২/২২)। ফল ॥ রাজশাহী কিংস ৫ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ জাকির হাসান (রাজশাহী কিংস)।
×