ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ তাদের এখন ভরসার স্থল প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ১৪ জানুয়ারি ২০১৯

সিডনির মেলব্যাগ ॥ তাদের এখন ভরসার স্থল প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রীর ইমেজ আর প্রজ্ঞানির্ভর দেশ ও সমাজ এখন বিশ্বায়নের আশীর্বাদপুষ্ট। বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে ধাবমান। সে যাত্রা যাদের গায়ে জ্বালা ধরায় তাদের এখন সামনে কোন্ পথ খোলা? কি করবে তারা? নির্বাচনের আগে দেশজুড়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল ঐক্যফ্রন্ট। যেভাবেই হোক সরব হয়ে উঠেছিল রাজনীতি। কিন্তু তার মেয়াদকাল বেশিদিন ছিল না। এখন আর ঐক্যফ্রন্টের নামে কেউ চমকায় না, এমনকি তাদের হাঁকডাক আর চিৎকারেও না। তাদের মাথার ওপর চেপে বসা ড. কামাল হোসেনকে সবাই মনে করেছিল একটা নতুন কিছু করার জন্য এসেছেন। সেটা যে কত বড় ভুল এখন তাদের সমর্থকরাও টের পাচ্ছে। ড. কামাল হোসেন সব সময়ই পলায়নপর মানুষ। আমাদের যৌবন থেকে দেখছি তাঁর কথা ও কাজের অসঙ্গতি। তিনি যত গর্জান তার সিকি ভাগও বর্ষাতে পারেন না। আর এখন তো তার ভাটার কাল। ভাটি সময়ে তিনি নাকি ফখরুলকে নিয়ে যাচ্ছেন লন্ডনে। যদি এই খবর সত্য হয় আর কিছু থাক বা না থাক ভয়ের কারণ আছে। কারণ, লন্ডন এখন বাংলাদেশের অপরাজনীতির এক আখড়া। যেখানে যুদ্ধাপরাধী থেকে বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘাতক থাকে। থাকে দেশবিরোধী শক্তি। তাদের সঙ্গে কি আলাপ? কি কথা বলবেন তারা? নতুন সরকার মাত্র এসেছে দেশ শাসনে। চমক দিতে চেয়েছেন শেখ হাসিনা। সে চমক এখনও ভিত পায়নি। তার আগেই যদি এমন ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে যায় তো দুর্ভাবনার কারণ আছে। এরা আর কিছু পারুক বা না পারুক নিজের নাক কেটে যাত্রা ভঙ্গের ওস্তাদ তারা। তারা সবুর করছে নতুন কোন চাল চেলে দেশ ও সমাজকে বিপাকে ফেলার। সরকারের যাত্রা ভঙ্গের এই আগাম বিপদ বার্তা তারা টের পান কি-না জানি না, আমরা পাই। এই আসম রব, কাদের সিদ্দিকী ও মান্নারা চেয়েছিল পরিবর্তন। পরিবর্তনের নামে তারা শেখ হাসিনার বিপদ ছাড়া আর কিছুই চায়নি। সেটা করতে না পারার যন্ত্রণা এখন বিপথগামী। ক’দিন আগে আমরা সাড়ম্বরে দশ জানুয়ারি পালিত হতে দেখেছি। সে দিনটিতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রহস্যজনকভাবে ফিরে এসেছিলেন কামাল হোসেনও। সেদিন আনন্দবিহ্বল জাতি তার আনন্দ আর সুখের সময়ে তাকে ভালভাবে ঠাহর করতে পারেনি। করলে বুঝতে পারত তার এই আগমন ছিল কুয়াশাম-িত। পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু কামাল হোসেন ফিরেছিলেন কোথা থেকে? কেউ জানতে চায়নি কোথায় ছিলেন তিনি নয় মাস। জানতে পারলে তখনই রহস্যের কিনারা হয়ে যেত। দেরিতে হলেও তাঁর মুখোশ খুলে গেছে। মুখে বঙ্গবন্ধু কথায় কথায় তাঁর দোহাই পাড়া তিনি যাচ্ছেন তারেক জিয়ার সঙ্গে মিলতে। এর চেয়ে করুণ, জঘন্য বাস্তবতা আর কি হতে পারে? তারেক জিয়া দেশে কোন্ শ্রেণীর নেতা সেটা তিনি বুঝতে না পারলেও মানুষ বোঝে। বোঝে বলেই এবারের নির্বাচনে তারা পরিবর্তন চেয়েছে শেখ হাসিনার কাছে। তিনি যে পরিবর্তন দেবেন সে বিশ্বাসেই তারা আস্থা রেখেছে। যারা এখনও মনে করে ভোট ঠিকমতো হলে নাকি ঐক্যফ্রন্ট জিতত তাদের জানা নেই যেভাবেই ভোট হতো বা হোক জিততো কিন্তু নৌকা। নৌকার পালে হাওয়া লেগেছিল ভোটের আগেই। সেটা ছিল মনে মনে। মানুষ যে মন্ত্রী-মিনিস্টারদের ওপর খুশি তা কিন্তু না। তারা বরং বিরক্ত। সে বিরক্তির পরও সাধারণ মানুষ নতুন কোন আপদ চায়নি। কারণ, এই আপদ দেশ ধ্বংস করে এমন নৈরাজ্য আর সর্বনাশ আনতে পারত- যা দেশকে পাকিস্তান বানিয়ে ছেড়ে দিত। কেন মানুষ সে সর্বনাশ মানবে? যেখানে পাকিস্তানের নেতা ইমরান খানকে সেদেশের বুদ্ধিজীবীরা বলছেন, দশ বছরে বাংলাদেশ বানিয়ে দেখাতে সেখানে আমাদের এই আহম্ম্ক বয়স্কজনেরা আছে নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। তাদের মাথা-মগজে মানুষের ভাল থাকলে তারা গণতন্ত্রের প্রাথমিক দিকটা মেনে নিতেন। নির্বাচনে জেতা হারা স্বাভাবিক বিষয়। কেউ জিতবেন কেউ হারবেন। যারা হেরেছেন তারা জনগণের কাছে গেলেই জবাব পেতেন। তাদের হয়ে কোথাও একটা মিছিল মিটিংয়ের খবর দেখেছেন কেউ? সব কি শুধু ভয়ে? দেশে আর দশটা বিষয় স্বাভাবিকভাবে হতে পারলে প্রতিবাদ হতে পারত না? সেটা কেন হলো না? আর যদি মানুষ ভয়ে চুপ করেও থাকে তা কি চিরজীবন চলবে, না চলতে পারে? সে সত্য বা বিশ্বাসে যাদের আস্থা নেই তারা দেশ ও জনগণকে কীভাবে উদ্ধার করবেন? নেতাদের কলহ নিজেদের ভেতর ভুল বোঝাবুঝি আর দোষারোপ মিডিয়ায় আসার পর গোপন থাকেনি। তাতে এটা স্পষ্ট তাদের ভেতর ঐক্য বলতে কিছু নেই। এর ওপর আছে মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে ঝামেলা। তারেক জিয়ার টাকা কামানোর খবরও এখন প্রকাশ্য। এই সুযোগে বিপুল টাকা হাতিয়ে নেয়া অর্থের জোর এখন দেশ থেকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এক সময়ের আওয়ামী লীগার কামাল হোসেনকেও। দুর্ভাগ্য, রাজনীতির। এদিকে গৃহদাহ না হলেও আছে ঘরে অশান্তি কিংবা অসন্তোষের ঈঙ্গিত। মূলত আওয়ামী ভোটনির্ভর মহাজোটের বাম নেতাদের কেউ কেউ এখন মুখ খুলছেন। দিলীপ বড়ুুয়ার দলের নামও শোনেনি ভোটাররা। শেখ হাসিনাই তুলে এনে তাঁকে শিল্পমন্ত্রী করেছিলেন। সেটা তারা কেন মনে করবেন এটা তাদের প্রাপ্য ছিল? তথ্যমন্ত্রীও খুশি না। ভোটের আগে তিনি যেমন কথা বলতেন বেশি ভোটের পরও সরকার গঠন নিয়ে এমনভাবে বলছিলেন যেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক কেউ। এই ওভার কনফিডেন্স ভাল না। তাই হয়ত তার আশা ভঙ্গের বেদনাও বেশি। সেটা কারও ব্যক্তিগত বিষয় হতেই পারে। কিন্তু তার মানে এই না যে- এটাই মানতে হবে সরকারপ্রধানকে। তিনি তাঁর ক্যাবিনেট কাদের নিয়ে গঠন করবেন কারা তাঁকে সামনে যেতে সাহায্য করতে পারে সেটা তিনি ভাল জানেন। তিনি সেভাবেই তা সাজিয়েছেন। এ নিয়ে এখনই অসন্তোষের কিছু নেই। এখন সাবধানতার সময়। আরও একটু সময় লাগবে সামলে নিতে। দেশ তাকিয়ে আছে শেখ হাসিনার মুখের দিকে। তিনি এবার তাদের দেবেন নতুন এক দুর্নীতিমুক্ত সরকার। যে সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা আকাশ সমান। যেসব তরুণরা এসেছে সরকারে তাদের মুখেই আছে ভরসার আলো। তাদের কাছে চমকের পাশাপাশি মানুষ চায় কাজের ঝলক। গতবারে কিছু মন্ত্রীর অতি ভাষণ আর আচরণগত সমস্যায় মানুষ বিরক্ত। তাই সকল ষড়যন্ত্রের মূল উৎপাটন জরুরী। আরও জরুরী চোখ-কান খোলা রাখা। চোখ-কান কেবল শেখ হাসিনার খোলা থাকলে চলবে না। সবার সজাগ দৃষ্টি আর সচেতন মনোভাবই পারে ষড়যন্ত্র রুখতে। আমরা চরম মূল্য দেয়া জাতি। এখন আমরা যত আফসোস করি না কেন আমাদের জীবনে বঙ্গবন্ধু চার জাতীয় নেতা আর ফিরবেন না। বহু বছর পর আবার বাঙালী নির্ভর করার মতো একজনকে পেয়েছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা। তাঁকে এ জায়গায় আসতে বা সে জায়গা নিতে কম সময়, কম পথ পাড়ি দিতে হয়নি। এখন তিনি মেধা ও প্রজ্ঞায় দেশবরেণ্য। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তিনি সমান জনপ্রিয়। তাঁকে বা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখতে জনগণের ঐক্য আর ভালবাসাই হোক আমাদের পাথেয়। সম্প্রতি সৈয়দ আশরাফের প্রয়াণ ও তাঁর বিদায়ে আমরা দেখেছি মানুষ কেমন শোক বিহ্বল আর ঐক্যবদ্ধ ছিল। জানাজায় মানুষে ঢল ছিল ঐতিহাসিক। সৈয়দ আশরাফের প্রয়াণ জানাজা ছিল দেশের জন্য এক বিশাল ঘটনা। আওয়ামী লীগের জন্য এক মহাশক্তি। এতে প্রমাণিত হয়েছে মানুষ সৎ আন্তরিক নিষ্ঠাবান সাধারণ নেতাদেরই ভালবাসে। তাদের অন্তরে আছে আদর্শ আর নিষ্ঠার প্রতি দুর্বলতা। এখনকার নেতা ও মন্ত্রীরা যদি সেদিকে মনোযোগ দেন তো ভাল করবেন। আর তাতেই আছে সব ষড়যন্ত্রের উত্তর। কামল হোসেন বা মির্জা ফখরুলের মতো নেতারা যাই করুক না কেন, তাতে কিছুই যায় আসে না। সবার ওপর মানুষ আর দেশ। আর তাদের সঙ্গে আছেন শেখ হাসিনা। [email protected]
×