ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বেনাপোল স্থলবন্দরে রফতানি ৫০ লাখ আমদানি সাড়ে ৫ কোটি টন

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ১৪ জানুয়ারি ২০১৯

 বেনাপোল স্থলবন্দরে রফতানি ৫০ লাখ আমদানি সাড়ে ৫ কোটি টন

আবুল হোসেন (স্টাফ রিপোর্টার), বেনাপোল ॥ দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরসহ চলমান ১১টি স্থলবন্দর দিয়ে পাঁচ অর্থবছরে প্রতিবেশী ভারতসহ চারটি দেশে ৪৯ লাখ ৬৯ হাজার মেট্রিক টন বাংলাদেশী পণ্য রফতানি করা হয়েছে। আমদানি করা হয়েছে ৫ কোটি ৬৭ লাখ মেট্রিক টন পণ্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক সময় বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর দেশ হিসেবে পরিচিত থাকলেও এখন রফতানিকারক হিসেবেও সুনাম অর্জন করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও বৈধ সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হলে এ খাতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ আরও বাড়বে। বন্দরগুলোতে অবকাঠামোসহ সব ধরনের সুবিধা বাড়াতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলে জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। স্থলবন্দরের পরিসংখ্যান সূত্রে জানা যায়, দেশে সর্বমোট অনুমোদিত ২৩টি স্থলবন্দর রয়েছে। এর মধ্যে সচল মাত্র ১১টি। এর ৬টিতে সরকারী ও ৫টিতে বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলছে। অন্যান্য ১২টি স্থলবন্দর দিয়ে এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। বন্দরগুলো-বেনাপোল, বাংলাবান্ধা, সোনা মসজিদ, হিলি, বিরল, টেকনাফ, বুড়িমারী, আখাউড়া, ভোমরা, দর্শনা, তামাবিল, বিবিরবাজার, কোবরাকুড়া-কড়ইতলী, নাকুগাঁও, রামগড়, সোনাহাট, তেগামুখ, চিলাহাটি, দৌলতগঞ্জ, ধানুয়া, শেওলা ও বাল্লা। স্থলপথে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, মিয়ানমার ও নেপালের বাণিজ্যিক কার্যক্রম সচল রয়েছে। বাইরের দেশ থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ আর রফতানি পণ্যের মধ্যে কাঁচা পাট ও পাটের তৈরি পণ্য। সূত্র বলছে, দেশের এ ১১টি বন্দর দিয়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ৬৮ লাখ ৬৬ হাজার ২৮৬ মেট্রিক টন পণ্য আর রফতানি হয়েছে ৭ লাখ ৩১ হাজার ৪৩৩ মেট্রিক টন পণ্য। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বন্দরে আমদানি হয়েছে ৭৭ লাখ ২৭ হাজার ৮০৪ মেট্রিক টন পণ্য আর রফতানি হয়েছে ১১ লাখ ৮১ হাজার ৭৪৮ মেট্রিক টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ৭২ লাখ ৮২ হাজার ৮৮৪ মেট্রিক টন পণ্য আর রফতানি হয়েছে ১২ লাখ ৮৭ হাজার ৪৭৩ মেট্রিক টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৮৬ হাজার ৫৬৫ মেট্রিক টন পণ্য আর রফতানি হয়েছে ৮ লাখ ৩২ হাজার ৯০৪ মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ২ কোটি ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৬৪ মেট্রিক টন পণ্য আর রফতানি হয়েছে ৯ লাখ ৩৫ হাজার ৪৪২ মেট্রিক টন। এসব বন্দরের মধ্যে ৫ বছরে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। আমদানির পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ৩০ লাখ ২ হাজার ২২৪ মেট্রিক টন পণ্য। একই সময়ে রফতানি হয়েছে ১৭ লাখ ৫০ হাজার ৩৩৪ মেট্রিক টন পণ্য। সবচেয়ে কম আমদানি, রফতানি হয়েছে তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে। ৫ বছরে এ বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে মাত্র ৭ লাখ ৮২ হাজার ৪৬৪ মেট্রিক টন পণ্য। রফতানি হয়েছে ১ হাজার ৬৯৯ মেট্রিক টন পণ্য। ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবকমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় যত্রতত্র বন্দর চালু হচ্ছে। এতে কেবল সরকারী অর্থ অপচয় হবে, বাণিজ্য গতিশীল হবে না। বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকেই উন্নয়ন কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে ওই সব সীমান্তে বর্ডার হাট খোলা যেতে পারে। সম্প্রতি যেসব বন্দর চালু হয়েছে সে সবে আমদানি-রফতানিতে ব্যবসায়ীদের তেমন সাড়া মিলছে না। কোটি কোটি টাকা খরচ করে অহেতুক অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়েছে। শুধু শুধু সেখানে বন্দর ও কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসিয়ে বেতন গুনতে হচ্ছে। অথচ যেসব সচল বন্দর দিয়ে ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যে আগ্রহী সেসব বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন সমস্যায় লোকসান গুনছে ব্যবসায়ীরা। এসব বন্দরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন হলে যেমন আমদানি বাড়বে তেমনি সরকারের রাজস্বও বাড়বে। বেনাপোল সিএন্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, দেশের স্থলপথে যে পণ্য আমদানি-রফতানি হয় তার ৬৫ শতাংশ হয়ে থাকে শুধু বেনাপোল বন্দর দিয়ে। এক সময় আমরা কেবল আমদানিতে আগ্রহী ছিলাম। এখন রফতানির দিকেও ঝুঁকছি। প্রতিবছর এ বন্দর থেকে সরকার প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। তবে, বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে হলে ব্যবসায়ীদের বৈধ সুযোগ-সুবিধা ও অবকাঠামো উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) প্রদোষ কান্তি দাস জানান, বাণিজ্য সম্প্রসারণে দেশের সব বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার আন্তরিক। ইতোমধ্যে অনেক বন্দরে উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্প শুরু হয়েছে। বেনাপোল বন্দরে ২৫ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আধুনিক দু’টি ওয়ারহাউস নির্মাণ করা হয়েছে। বন্দর এলাকা প্রশস্তকরণসহ আরও কিছু জায়গা অধিগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া সিসি ক্যামেরা ও চোরাচালান প্রতিরোধে স্কানিং মেশিন স্থাপন ও অটোমেশন পদ্ধতি চালু প্রক্রিয়াধীন। এসব উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হলে বন্দরটি একটি মডেল বন্দর হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিতি পাবে।
×