ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এখনও সব স্টলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি ॥ অগোছাল বাণিজ্য মেলা

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ১৪ জানুয়ারি ২০১৯

এখনও সব স্টলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি ॥ অগোছাল বাণিজ্য মেলা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা ২০১৯ শুরু হলেও সব স্টলের কাজ এখনও শেষ হয়নি। ছোট-বড় বহু স্টলেই শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জার কাজ চলছে। আর বিদেশী প্যাভিলিয়নগুলো এখনও ফাঁকা। এর কোনটিতে এখনও কাজই শুরু হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরোদমে এসব স্টলের কার্যক্রম শুরু হতে লাগবে আরও এক সপ্তাহ। এরইমধ্যে চলে গেছে একটি সাপ্তাহিক ছুটির দিন। এরপরও ২৪তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। মেলার উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম সব দিকেই রয়েছে অসম্পূর্ণ স্টল। ভিআইপি গেট থেকে সার্ভিস গেট পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় চলছে স্টল প্রস্তুতের কাজ। দর্শনার্থীদের কানে আসছে কাঠ, হাতুড়ি, পেরেকের ঠক ঠক আওয়াজ। কাজ শেষ না হওয়া এসব স্টলের মধ্যে বিদেশী প্রতিষ্ঠান যেমন আছে, তেমনি আছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানও। দেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সিংহভাগই ছোট প্রতিষ্ঠান। বড় প্রতিষ্ঠান দুই-একটি অসম্পূর্ণ থাকলেও বেশির ভাগই মেলার প্রথমদিন থেকেই বিক্রির কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। তবে সব স্টলের কাজ শেষ না হলেও মেলায় কমবেশি দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেছেন। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর উপ-পরিচালক ও বাণিজ্যমেলার সদস্য সচিব আবদুর রউফ বলেন, বিদেশী স্টলের কার্যক্রম শুরু হতে সবসময় একটু দেরি হয়। বিদেশী মালপত্র আনতে কাস্টমসে যেন কোন সমস্যা না হয়, সেদিকে আমাদের নজর রয়েছে। আমরা এরই মধ্যে কাস্টমসকে চিঠি দিয়েছি। আশা করি আগামী সপ্তাহের মধ্যে সবাই পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। মেলা ঘুরে দেখা গেছে, দেশীয় নামীদামী বহু স্টল পুরো প্রস্তুত। এসব স্টল থেকে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ক্রেতাদের মনযোগ আকর্ষণের চেষ্টা। কোন কোন স্টলে চলছে মালপত্র সাজানোর কাজ। প্যাভিলিয়ন বা স্টল তৈরির কাজও করছেন কর্মীরা। কয়েকটি স্টলের কর্মকর্তারা জানালেন, কিছু কিছু স্টল প্রস্তুত করতে আরও তিন থেকে চারদিন লাগবে। মেলায় ঘুরতে আসা মিরপুরের বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, প্রায় গোটা মেলা ঘুরে দেখলাম। এখনও সব স্টল প্রস্তুত নয়। তবে মেলার পরিবেশ দেখে ভালোই লাগছে।’ ফার্মগেট থেকে আসা তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী নবনিতা বলেন, বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে এসেছি। সবাই মিলে আনন্দ করছি। তবে সব স্টল বা প্যাভিলিয়নের কাজ শেষ হয়নি। ভিআইপি গেট দিয়ে প্রবেশ করে পশ্চিম দিকে একটু অগ্রসর হলেই চোখে পড়বে থাইল্যান্ড, চীন ও ভারতীয় পণ্যের একটি প্যাভিলিয়ন। সেখানে তিন দেশের পণ্য পাওয়া গেলেও এখনও স্টল গোছানোর কাজ শেষ হয়নি। সেখানে কথা হয় মোঃ সাইদুর নামের একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা একটু দেরিতে কাজ শুরু করেছি। সাধারণত মেলার প্রথম দিকে বিক্রি খুব একটা হয় না। তবে আমাদের সব কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। দুই-এক দিনের মধ্যেই সব স্টলের কাজ শেষ হয়ে যাবে। সেখান থেকে একটু দক্ষিণ দিকে এগিয়ে দেখা যায়, সারি সারি বেশ কয়েকটি স্টলের কাজ চলছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন এসব স্টলে দেশী পণ্য প্রদর্শন করা হবে। স্টল প্রস্তুতের কাজে ব্যস্ত খাইরুল বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। মেলায় সব থেকে বেশি অপ্রস্তুত স্টল দেখা গেছে সার্ভিস গেটের পাশে বা পশ্চিম দিকে। ওই অংশে বেশিরভাগ স্টলেরই কাজ শেষ হয়নি। একটি স্টলের মেরামত কাজে ব্যস্ত ফারুক হোসেন বলেন, আমরা কাজ শুরু করেছি মেলা শুরু হওয়ার পরে। আমাদের যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে। শুধু ছোট স্টল না বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ও কিছু স্টলের কাজ এখনও শেষ হয়নি। মেলার প্রায় মাঝ বরাবর দেখা যায় দৃষ্টিনন্দনভাবে চলছে একটি প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়নের নির্মাণ কাজ। তবে ওই প্যাভিলিয়নটি কোন প্রতিষ্ঠানের তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজে ব্যস্ত একজন বলেন এটি সম্ভবত মার্ক বাংলাদেশের। নিজের নাম না জানিয়ে তিনি বলেন, এ সপ্তাহের মধ্যেই প্যাভিলিয়নের সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। কাজ শেষ হলে প্যাভিলিয়নটি যে কোন দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কাড়বে। মেলায় মেট্রো রেলের আদলে তৈরি মূল ফটক দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়বে ডিজিটাল এক্সিপেরিয়েন্স সেন্টার। চারটি টাচ স্ক্রিন কম্পিউটার রয়েছে এতে। দিকনির্দেশনা দিতে রয়েছেন একজন কর্মকর্তাও। এই সেন্টারে ঢুকে যে স্টল বা প্যাভিলিয়নে যেতে চান তার অবস্থান জেনে নেয়া যাবে সহজে। ডিজিটাল উন্নয়নকে জানান দিতে আধুনিক এই পদ্ধতির সংযোজন এবারের মেলায়। এছাড়া, দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সবই তুলে ধরা হয়েছে মেলায়। গতবারের মতো এবারও আছে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন। এর সামনে সারি সারি সাজানো নৌকা। ভেতরেও এবার স্থান বেশি। বরাবরের মতোই এবারের মেলাতেও ইপিবি’র তথ্যকেন্দ্র, বিশ্রামস্থল, রক্তদান ও প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রও রয়েছে। মেলা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২২ দেশের ৫২ প্রতিষ্ঠান এবার মেলায় অংশ নিয়েছে। দেশগুলো হলো, থাইল্যান্ড, ইরান, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, হংকং, সিঙ্গাপুর, মারিশাস, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান। ইপিবি জানিয়েছে, ৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া মেলা শেষ হবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। মেলা চলবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। এবারের মেলায় স্টল ও প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ৬০৫। দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য মেলায় রয়েছে পর্যাপ্ত সবুজ চত্বর। বিশ্রামের জন্য আছে আরামদায়ক ও শোভন বেঞ্চ। মেলা প্রাঙ্গণ হকার ও ভিক্ষুকমুক্ত। শিশুদের বিনোদনের জন্য আছে শিশু পার্ক। রয়েছে মা ও শিশু কেন্দ্র। আর খাদ্যদ্রব্যের মান নিয়ন্ত্রণে আছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে পৃথক বুথ। মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, এবারের মেলায় আছে রেডিমেড গার্মেন্টস পণ্য, হোমটেক্স, ফেব্রিকস পণ্য, হস্তশিল্প, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহস্থালি ও উপহারসামগ্রী, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। এছাড়াও তৈজসপত্র, সিরামিক, প্লাস্টিক পলিমার পণ্য, কসমেটিক্স হারবাল ও প্রসাধনী সামগ্রী, খাদ্য ও খাদ্যজাত পণ্য, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, ইমিটেশন ও জুয়েলারি, নির্মাণ সামগ্রী ও ফার্নিচার সামগ্রী কিনতে পারবেন ক্রেতারা।
×