ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সুপার ওভারে জয় চিটাগং ভাইকিংসের

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

সুপার ওভারে জয় চিটাগং ভাইকিংসের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ এমনটা আগের পাঁচ আসরে কখনও ঘটেনি। শনিবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম সেই অভূতপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী হয়েছে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে নির্দিষ্ট ওভারের খেলায় চিটাগং ভাইকিংস ও খুলনা টাইটান্স ম্যাচ টাই হয়ে যায়। এরপর নিয়মানুসারে সুপার ওভারে গড়ালে শেষ পর্যন্ত ১ রানে খুলনাকে হারিয়ে দেয় চিটাগং। ফলে টানা চার ম্যাচেই হার দেখল খুলনা। বিপিএলের ইতিহাসে প্রথম ম্যাচ সুপার ওভারে নিষ্পত্তি হলো। সেজন্য অবশ্য রিয়াদের সিদ্ধান্তকেই অনেকে দুষছেন। শেষ ওভারে যখন চিটাগংয়ের ১৯ রান প্রয়োজন, সে সময় আরিফুল হকের হাতে বল তুলে দেন তিনি। সেই ওভারে ৩ ছক্কা হজম করা আরিফুল শেষ বলে আর ১ রান করতে দেননি চিটাগংয়ের দুই ছক্কা হাঁকানো ব্যাটসম্যান রবার্ট ফ্রাইলিঙ্ককে। কিন্তু তিনিই ছিলেন ম্যাচে সব নাটকীয়তার মূল নায়ক। ফলে ৬ উইকেটে ১৫১ রান করা খুলনার ইনিংস তাড়া করতে গিয়ে চিটাগং ৮ উইকেটে ১৫১ রানে শেষ করে। সুপার ওভারে ১ উইকেটে ১১ রান তুলেছিল চিটাগং, জবাবে দুটি উইকেটই হারিয়ে ১০ রান তুলে পরাজয় দেখে খুলনা। সুপার ওভারে দলের হয়ে ব্যাটিং-বোলিং করে দলকে জিতিয়েছেন চিটাগংয়ের ফ্রাইলিঙ্ক। টস জিতে আগে খুলনাকে ব্যাট করতে পাঠায় চিটাগং। এদিন মোহাম্মদ আশরাফুলকে বাইরে রেখে তরুণ ইয়াসির আলী রাব্বিকে নামায় তারা। আর খুলনা প্রথমবারের মতো নামায় পরিবর্তিত খেলোয়াড় হিসেবে দলে নেয়া পাক পেসার জুনাইদ খানকে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইনজুরি আক্রান্ত পেসার আলী খানের বিকল্প হিসেবে নামেন। এছাড়া খুলনার হয়ে অভিষেক ঘটে তরুণ মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের। ব্যাটিংয়ে নেমে খুলনাকে শুরুটা বেশ দুরন্ত গতির দিয়েছিলেন পল স্টারলিং ও জুনায়েদ সিদ্দিকী। মাত্র ২.৩ ওভারে ৩১ রান ওঠার পর স্টারলিংকে শিকার করেন ডানহাতি অফস্পিনার নাঈম হাসান। তিনি ১০ বলে ২ চার, ১ ছক্কায় ১৮ রান করেছিলেন। রানের মধ্যে থাকা জুনায়েদ আগের ম্যাচগুলোতেও নিজের ইনিংসকে বড় করতে পারেননি, এবারও তিনি ১৫ বলে ২ চার, ১ ছক্কায় ২০ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি রবি ফ্রাইলিঙ্কের বলে। দ্রুত দুই ওপেনারকে হারিয়ে ফেলার পরও সেটার প্রভাব দলীয় ইনিংসে পড়তে দেননি ইংলিশ তারকা ডেভিড মালান ও অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তৃতীয় উইকেটে তারা ৭৭ রান যোগ করেন। এতে ম্যাচে ফিরে আসে খুলনা। কিন্তু ফিরিত স্পেলে বোলিংয়ে এসে আবু জায়েদ রাহী ৪৩ বলে ৪৫ রান (৩ চার, ১ ছয়) করা মালানকে তুলে নিলে স্বস্তি ফেরে চিটাগং শিবিরে। পরের ওভারেই ৫ বলে ১টি করে চার-ছক্কায় ১২ রান করা কার্লোস ব্রেথওয়েটকে শিকার করেন সানজামুল ইসলাম। পরের বলেই তিনি দারুণ খেলতে থাকা রিয়াদকেও তুলে নেন। আগের ম্যাচগুলোয় ব্যর্থ রিয়াদ এবার ৩১ বলে ৪ চারে ৩৩ রান করেছিলেন। দ্রুত এ তিনটি উইকেটের পতনে প্রত্যাশামাফিক বড় হয়নি খুলনার ইনিংস মূলত সানজামুলের দারুণ বোলিংয়ে। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে ১৫১ রানে শেষ হয় খুলনার ইনিংস। চিটাগংয়ের বাঁহাতি স্পিনার সানজামুল ৩৭ রানে নেন ২ উইকেট। তবে সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলিং উপহার দেয়া নাঈম ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রানে নেন ১ উইকেট। জবাব দিতে নেমে তৃতীয় ওভারেই আফগান ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদের উইকেট হারায় চিটাগং। বিকল্প পেসার জুনাইদ তাকে সাজঘরে ফেরান (১০ বলে ১০)। তবে ক্রিশ্চিয়ান ডেলপোর্ট আর চলতি আসরে প্রথম খেলতে নামা ইয়াসির দারুণ খেলছিলেন। তাদের সাবলীল ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ১ উইকেটে ৪৭ রান তুলে ফেলে চিটাগং। কিন্তু সপ্তম ওভারেই ডেলপোর্টকে সাজঘরে ফিরিয়ে খুলনাকে আবার খেলায় নিয়ন্ত্রণ এনে দেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ১৬ বলে ১৭ রান করেছিলেন তিনি। এরপর অবশ্য ইয়াসিরকে দারুণ সঙ্গ দেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। এ জুটিতে আরও ৩৫ রান যোগ হওয়ার পর ইয়াসির ৩৪ বলে ২ চার, ২ ছক্কায় ৪১ রানে শরীফুল ইসলামের বলে সাজঘরে ফেরেন। পরের ওভারেই সিকান্দার রাজাকে (০) বোল্ড করে দেন ব্রেথওয়েট। ফলে ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় খুলনা। অবশ্য মোসাদ্দেক হোসেনকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান মুশফিক, যোগ করেন আরও ৩২ রান। মোসাদ্দেক ১২ বলে ১২ রান করে শরীফুলের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার পরের ওভারেই মুশফিক সাজঘরে ফেরেন ব্রেথওয়েটের দ্বিতীয় শিকার হয়ে। মুশফিক ২৬ বলে ১ চার, ২ ছক্কায় ৩৪ রান করেছিলেন। এরপরই চিটাগংয়ের জয়ের আশা প্রায় শেষ হয়ে যায়। তবে ফ্রাইলিঙ্ক আশা জিইয়ে রেখেছিলেন। এরপরও শেষ ওভারে ১৯ রান প্রয়োজন পড়ে চিটাগংয়ের জেতার জন্য। চলতি আসরে প্রথম জয়ের আশায় তখন নিশ্চিন্ত খুলনা অধিনায়ক রিয়াদ অনিয়মিত পেসার আরিফুলের হাতে বল তুলে দেন। প্রথম বল ডট করলেও পরের বলে তিনি ছক্কা হজম করেন নাঈম হাসানের কাছে। তৃতীয় বলে সাজঘরে ফেরান নাঈমকে। কিন্তু এরপর টানা দুই বলে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে দু’দলের রান সমান করে ফেলেন ফ্রাইলিঙ্ক। ১ বলে ১ রান জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে চিটাগংয়ে। হেরে যাওয়া ম্যাচে প্রায় নিশ্চিত জয়ের মুখে দাঁড়িয়ে ফ্রাইলিঙ্ক শেষ বলে ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি, এরপরও রান নিতে গিয়ে রানআউট হয়ে যান তিনি। ১৩ বলে ১ চার, ২ ছক্কায় ২৩ রান করেছিলেন তিনি। ৮ উইকেটে ১৫১ রানে থামে চিটাগংয়ের ইনিংস। ব্রেথওয়েট ৩০ রানে ও শরীফুল ৩১ রানে ২টি করে উইকেট নেন। টাই হয়ে যাওয়ায় বিপিএলের ইতিহাসে প্রথমবার নিষ্পত্তির জন্য সুপার ওভারে গড়ায় ম্যাচ। আবারও প্রথমে ব্যাট করতে নামে চিটাগং। তাদের হয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন ফ্রাইলিঙ্ক ও ডেলপোর্ট। বোলিংয়ে জুনাইদ। দু’জন মিলে দু’টি চার আদায় করতে পারলেও ফ্রাইলিঙ্ক আউট হয়ে যান এবং পরের দুই বলে আর ২ রান দিলে চিটাগং ১ উইকেটে ১১ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। ১২ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে খুলনা ব্যাটিংয়ে পাঠায় ব্রেথওয়েট ও মালানকে। চিটাগংয়ের হয়ে বোলিংয়ে আসেন ফ্রাইলিঙ্ক। পুরো ম্যাচকে এ পর্যন্ত আনার মূল নায়ক এ প্রোটিয়া পেসারকে মালান একটি চার হাঁকাতে পারলেও ব্রেথওয়েট রানআউট হয়ে যান। এরপর পল স্টারলিং এসে তিনিও রানআউট হয়ে গেলে ১০ রানে গিয়ে থামে খুলনার ইনিংস। ফ্রাইলিঙ্ক বীরত্বে ১ রানের নাটকীয় জয় পায় চিটাগং। স্কোর ॥ খুলনা টাইটান্স ইনিংস- ১৫১/৬; ২০ ওভার (স্টারলিং ১৮, জুনায়েদ ২০, মালান ৪৫, রিয়াদ ৩৩, ব্রেথওয়েট ১২, শান্ত ৬, আরিফুল ৯*, অঙ্কন ৪*; ফ্রাইলিঙ্ক ১/৩২, সানজামুল ২/৩৭, নাঈম ১/১৬, খালেদ ১/২৮, রাহী ১/২৯)। চিটাগং ভাইকিংস ইনিংস- ১৫১/৮; ২০ ওভার (শাহজাদ ১০, ডেলপোর্ট ১৭, ইয়াসির ৪১, মুশফিক ৩৪, সিকান্দার ০, মোসাদ্দেক ১২, ফ্রাইলিঙ্ক ২৩, নাঈম ৮, সানজামুল ০*; জুনাইদ ১/২৪, ব্রেথওয়েট ২/৩০, শরীফুল ২/৩১, তাইজুল ১/২৩, আরিফুল ১/১৮)। সুপার ওভার ॥ চিটাগং- ১১/১; ১ ওভার (ডেলপোর্ট ৬*, ফ্রাইলিঙ্ক ৪, মুশফিক ১*; জুনাইদ ১/১১)। খুলনা- ১০/২; ১ ওভার (মালান ৬*, ব্রেথওয়েট ১, স্টারলিং ২; ফ্রাইলিঙ্ক ০/৯)। ফল ॥ চিটাগং ভাইকিংস সুপার ওভারে ১ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ রবি ফ্রাইলিঙ্ক (চিটাগং ভাইকিংস)।
×