ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিমানের লন্ডন ফ্লাইটে মাতলামি, দড়ি দিয়ে বেঁধে পুলিশে সোপর্দ

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

 বিমানের লন্ডন ফ্লাইটে মাতলামি, দড়ি দিয়ে বেঁধে পুলিশে সোপর্দ

আজাদ সুলায়মান ॥ ফ্লাইটের ভেতর মাতলামি করার অভিযোগে এক যাত্রীকে দড়ি দিয়ে বেঁধে লন্ডন থেকে সিলেট আনার পর পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। দীর্ঘ দশ ঘণ্টার আকাশ পথে ওই যাত্রীর উন্মত্ততায় ফ্লাইটের যাত্রীরা ছিলেন বিরক্ত। ব্রিটেন প্রবাসী এই সিলেটীর নাম জিয়া (৪০)। সিলেট নামার পর তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর ঘটে যাওয়া এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিমানের এমডি ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদ বলেছেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, বিমান অত্যন্ত ধৈর্য্যরে সঙ্গে সুকৌশলে ওই যাত্রীর মাতলামি সামাল দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য একটা বিব্রতকর ঘটনা। ওইদিন লন্ডন থেকে সরাসরি সিলেটের ফ্লাইটে (বিজি-০০২) উঠেই মাতলামি শুরু করেন ওই যাত্রী। তিনি ইকোনমি ক্লাসের যাত্রী হয়েও জোর করে বিজনেস ক্লাসে বসেন এবং সিভাস রিগ্যাল ব্র্যান্ডের হুইস্কি চান। কেবিন ক্রু তাকে এ ব্র্যান্ড নেই- জানানোর পর তিনি বেশ উচ্চবাচ্য শুরু করেন। তিনি গো ধরে বিজনেস ক্লাসেই বসে থাকেন। এক পর্যায়ে তাকে বিজনেস ক্লাস ছেড়ে ইকোনমি ক্লাসের (মিড রো) ৪২ নম্বর আসনে বসতে বাধ্য করা হয়। এরপরই তিনি অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। কেবিন ক্রুসহ পাশের দুই যাত্রীর সঙ্গেও তার বচসা চলে। এক পর্যায়ে জিয়া আরও ভয়ঙ্কর হয়ে পাশের এক যাত্রীকে ঘুষি মারেন, জামা ছিঁড়ে ফেলেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ক্যাপ্টেন মাকসুদ ককপিট থেকে ছুটে এসে জিয়াকে নিবৃত্তের চেষ্টা করেন। এতেও জিয়া দমেন নি। ক্যাপ্টেন তখন তাকে জার্মানিতে ফ্লাইট ল্যান্ড করার পর পুলিশে সোপর্দ করার মতো আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান। তখন জিয়া কিছুটা দমেন। কিন্তু আধা ঘণ্টা পরই তিনি আবার নিজের সিট ছেড়ে সবাইকে গালিগালাজ করতে থাকেন। তখন কেবিন ক্রু সিনহা ও আফসান শাহীনসহ অন্যরা ছুটে এসে তাকে সামলানোর চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে তারা ব্যর্থ হয়ে তাকে দড়ি দিয়ে বাঁধতে বাধ্য হন। এমন মাতলামির দৃৃশ্য মোবাইলে ধারণ করেছেন অর্ধ শতাধিক যাত্রী। শুক্রবার সকালে প্রথম এই ভিডিও আপলোড করা হয় ফেসুবকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ভিডিওটিতে দেখা যায়- জিয়া বার বার সিট থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে দৌড় দেয়ার চেষ্টা করেন। তখন তাকে পাশের আসনের যাত্রীসহ কেবিন ক্রুরা শান্ত করতে ব্যর্থ হন। তাকে জাপটে ধরে সিটে বসিয়ে রাখতে গিয়ে গলদঘর্ম হয়ে পড়েন তিন কেবিন ক্রু। এক পর্যায়ে ফ্লাইটের পেছন থেকে দড়ি এনে দুজন কেবিন ক্রু জোর করে তাকে বাঁধতে গিয়ে পড়ে যান। গায়ের জোরে তাকে ঘাড় চেপে সিটে বসিয়ে রাখার চেষ্টার সময় তিনি মাথা দিয়ে এক কেবিনক্রুর পেটে গুঁতো মারেন। অশ্লীল ভাষায় বকাবকি করতে থাকেন। এ বিষয়ে বিমানের কেবিন ক্রু আফসান শাহীন জনকণ্ঠকে বলেন, ওই যাত্রীর জন্য গোটা ২৮০ যাত্রীর ঘুম হারাম হয়েছে। বিমানের সব ক্রু তাকে সামলানোর কাজেই পেরেশানিতে ছিলেন। তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে বিঘ্নিত হয়েছে সব যাত্রীর সাধারণ সেবা, যেটা যাত্রীরাও অনুধাবন করে কেবিন ক্রুদের পাশে দাঁড়িয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। সিলেট নামার পর ডাকা হয়- বিমানসহ বিমানবন্দরের বিভিন্ন ইউনিটের নিরাপত্তাকর্মীদের। তাদের সবার উপস্থিতিতে জিয়াকে বিমানের নিরাপত্তাকর্মীর কাছে তুলে দেয়া হয়। এদিকে জিয়াকে দড়ি দিয়ে বাঁধার দৃশ্য ভাইরাল হওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একজন লিখেছেন, সভ্যতার এই যুগে এসে বিমানের ভেতর এক যাত্রীকে জোরপূর্বক কোরবানির গরুর মতো দড়ি দিয়ে বেঁধে সিটের নিচে শুইয়ে রাখার দৃশ্য চরম অমানবিক। এটা কিছুতেই মেনে নেয়ার মতো নয়। দড়ি দিয়ে না বেঁধে তাকে হাতকড়া লাগিয়েও সরাসরি পুলিশে দিতে পারতো বিমান। অপর একজন লিখেছেন, এক সময় উড়োজাহাজের ভেতর এ ধরনের উচ্ছৃঙ্খল যাত্রীদের সামাল দেয়ার জন্য দড়ি দিয়ে বাঁধার প্রচলন ছিল। কিন্তু আজকের এই ডিজিটাল বাংলাদেশে এসে এখনও মান্ধাতা আমলের মতোই দড়ি থেরাপি দেয়াটা সহ্য করার মতো নয়। বিমানের এমডি মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, বিমানে এখনও হ্যান্ডকাপ ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়নি, আগের মতো দড়ি দিয়েই এধরনের উচ্ছৃখল যাত্রীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়।
×