ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনে কারচুপির প্রশ্নই আসে না ॥ ফেসবুক পোস্টে জয়

আওয়ামী লীগ বিএনপি থেকে ৪ কোটি ৯০ লাখ বেশি ভোট পেয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

 আওয়ামী লীগ বিএনপি থেকে ৪ কোটি ৯০ লাখ বেশি ভোট পেয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল জয় নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলেছেন, পরিসংখ্যান দিয়ে তাদের জবাব দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। ভোট কারচুপির অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, সদ্য অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিএনপি থেকে প্রায় ৪ কোটি ৯০ লাখ বেশি ভোট পেয়েছে। এত বড় ব্যবধানের জয় কখনই কারচুপির মাধ্যমে আদায় করা সম্ভব না। তাছাড়া এখনও পর্যন্ত কেউ কোন কারচুপির প্রমাণও দেখাতে পারেনি। এর মাধ্যমে প্রমাণিত নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। সাধারণ মানুষ শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে। শনিবার সজীব ওয়াজেদ জয় তাঁর নিজের ফেসবুক পাতায় এক পোস্টে আওয়ামী লীগের বিজয় ও ঐক্যফ্রন্টের পরাজয়ের কারণ তুলে ধরার পাশাপাশি যারা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাদেরও সমালোচনা করেন। জয় লিখেছেন, নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টকে বাংলাদেশের মানুষ পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই তারা এখন তাদের ‘বিদেশী প্রভুদের’ কাছে নালিশ করছে ও সাহায্য চাইছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যোগাযোগ ও লবিংয়ের মাধ্যমে তারা প্রমাণ করতে চাইছে যে, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। যা পরিসংখ্যান মোতাবেক একবারেই অসম্ভব। তিনি পোস্টে আরও লিখেছেন, কোন আসন থেকেই জিততে পারবেন না এটা জানতেন বলেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন নিজে নির্বাচনই করেননি। কিন্তু তারা আমাদের কিছুটা অবাকও করেছেন। ভোটের লড়াইয়ে প্রথমবারের মতো কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম একটি নয়, দুইটি আসন থেকে জয়লাভ করে। কারচুপি যদি হতোই, তাহলে যে দল আগে কোন নির্বাচনেই কোন আসন পায়নি, তারা কীভাবে দুটি আসনে জিতে? তিনি বলেন, গত এক দশকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনই ছিল সম্পূর্ণ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। ভোট কেন্দ্রে বিএনপিকে যেতে বাধা দেয়ার অভিযোগের জবাবে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘তারা বলছে ভয়-ভীতির কথা। কিন্তু যদি আমরা ধরেও নেই আওয়ামী লীগের বাইরের সকল ভোট বিএনপি-জামায়াত এর পক্ষেই যেত, তাহলেও ২ কোটি ২০ ভোটের ব্যবধান থাকত বিএনপি আর আওয়ামী লীগের মধ্যে।’ তিনি বলেন, ‘তাদের প্রথম অভিযোগ, ভোটার সংখ্যা ছিল বেশি, তার মানে ভুয়া ভোট দেয়া হয়েছে। এবার ভোট দেয়ার হার ছিল ৮০ শতাংশ, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে সর্বোচ্চ নয়। ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে ভোট দেয়ার হার ছিল ৮৭ শতাংশ, যা এখন পর্যন্ত রেকর্ড। সেই নির্বাচনটিতেও আওয়ামী লীগ ৪৭ শতাংশ ভোট পেয়ে ব্যাপক ব্যবধানে জয় পেয়েছিল।’ বঙ্গবন্ধুর এই দৌহিত্র তাঁর পোস্টে আরও লিখেছেন, ২০০১ সালে ভোট দেয়ার হার ছিল ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ আর ১৯৯৬ সালে ছিল ৭৫ শতাংশ। ওই দুইটি নির্বাচনের তুলনায় এবার ভোট দেওয়ার হার সামান্য বেশি ছিল। কারণ এক দশকে এটাই ছিল প্রথম অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন। তথ্য নিয়ে অপপ্রচার চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, দ্বিতীয় অপপ্রচার হচ্ছে আওয়ামী লীগ নাকি এবার ৯০ শতাংশ ভোট পেয়েছে। এই কথাটি পুরোপুরি মিথ্যা। আওয়ামী লীগ ভোট পেয়েছে ৭২ শতাংশ। মহাজোটের অন্যান্য শরিকরা পেয়েছে ৫ শতাংশের কম ভোট। এই ৭২ শতাংশও আওয়ামী লীগের জন্য সর্বোচ্চ না। আগের নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৭৩ দশমিক ২ শতাংশ ভোট। সেবার যেমন স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে আওয়ামী লীগ বিশাল বিজয় পেয়েছিল। তিনি বলেন, ২০১৩ সাল থেকেই আওয়ামী লীগের জন্য আমি জনমত জরিপ করাই। হার্ভার্ডে থাকতে আমি জনমত জরিপের ওপর পড়াশোনা করি। জরিপ করতে আমরা যাদের ব্যবহার করি, তাদের বাছাই করার আগে আমি নিজে একাধিক গবেষণা সংগঠনের সঙ্গে বসে আলাপ করি। ভুয়া জরিপ করে নিজেদের জনপ্রিয়তা দেখানোর কাজ আমরা করি না, কারণ আমাদের জন্যই সঠিক তথ্যটি পাওয়া খুবই জরুরী। আমরা জানতে চেষ্টা করি নির্বাচনী লড়াইয়ে আমাদের অবস্থান ও সক্ষমতা, তাই জরিপের ব্যাপারে আমরা খুবই সতর্ক থাকি। জয় লিখেছেন, নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে আমাদের জরিপ থেকে আমরা জানতে পারি আওয়ামী লীগ পাবে ৫৭ থেকে ৬৩ শতাংশ ভোট আর বিএনপি পাবে ১৯ থেকে ২৫ শতাংশ ভোট। তাহলে আমরা ৭২ শতাংশ ভোট কিভাবে পেলাম? আমাদের জরিপের জন্য স্যাম্পল নেয়া হয় ৩০০ আসন থেকে, অর্থাৎ ১০ কোটি ৪০ নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে থেকে। কিন্তু ভোট দেয়ার হার কখনই ১০০ শতাংশ হয় না, আর ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন হয়েছিল ২৯৮টি আসনে। ২৯৮টি আসনে ১০ কোটি ৩৫ লাখ নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে ৮০ শতাংশ ভোট দিয়েছেন অর্থাৎ ৮ কোটি ২৮ লাখ। আওয়ামী লীগ পেয়েছে প্রায় ৬ কোটি ভোট। ১০ কোটি ৩৫ ভোটারের মধ্যে ৬ কোটি মানে ৫৮ শতাংশ। অর্থাৎ, আমাদের জরিপের সঙ্গে এই বিষয়টি মিলে যায়। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোট বাড়ার পেছনে দুটি সুনির্দিষ্ট কারণ থাকার কথা বলেন জয়। এর প্রথমটি হচ্ছে, গত ১০ বছরে মানুষের অর্থনৈতিক ও জীবনমানের উন্নতি। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, সরকারের সাফল্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। জয় বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে মানুষের জীবনমানের উন্নতি হয়েছে যে কোন সময়ের থেকে বেশি। আমরা নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছি, মাথাপিছু আয় প্রায় তিনগুণ বেড়েছে, দারিদ্র্যের হার অর্ধেক করা হয়েছে, মোটামুটি সবাই এখন শিক্ষার সুযোগ, স্বাস্থ্যসেবা ও বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছে। সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, আমাদের সুশীল সমাজ সবসময়ই বলার চেষ্টা করে, বাংলাদেশের ভোটাররা নাকি পরিবর্তন চায়। এইসব ঢালাও কথাবার্তা, যার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এ থেকেই বোঝা যায় আসলে তারা কতটা জনসম্পৃক্ততাহীন। আর আমাদের নির্বাচনী প্রচার কিন্তু গত বছর শুরু হয়নি। আমরা ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে আমাদের প্রচার শুরু করে দিয়েছিলাম। জনগণের কাছে আমাদের উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দেয়ার কোন সুযোগই হাতছাড়া করিনি। আমরা তাদের বুঝিয়েছি, যা উন্নয়ন ও অগ্রগতি হচ্ছে তা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণেই হচ্ছে। নাশকতার আন্দোলনের কারণে বিএনপি জনসমর্থন হারাতে শুরু করার পর দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দ- তা তলানীতে নিয়ে ঠেকায় উল্লেখ করে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন দুর্নীতির দায়ে দ‍ন্ডিত হয়ে জেলে আছেন। তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনও দ-িত আসামি, আছেন দেশের বাইরে পালিয়ে। তাদের সংগঠনের অবস্থা করুণ। তার থেকেও বড় আরেকটি কারণ আছে যা আমাদের সুশীল সমাজ সহজে বলতে চায় না। তিনি বলেন, জনমত জরিপগুলো থেকে খেয়াল করেছি যে, বিএনপি ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত যে অগ্নিসন্ত্রাস চালায়, তারপর থেকেই তাদের জনপ্রিয়তায় ব্যাপক ধস নামে। পেট্রোলবোমা সন্ত্রাসের আগে জরিপগুলোতে বিএনপি আওয়ামী লীগ থেকে জনপ্রিয়তায় ১০ শতাংশ পিছিয়ে থাকত। কিন্তু রাজনীতির নামের সন্ত্রাসবাদের কারণে তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ব্যবধান ৩০ শংতাংশ হয়ে যায়, আর তারপর থেকেই বাড়তেই থাকে। বিএনপির প্রচারণার অভাব ও মনোনয়ন প্রক্রিয়াও এতে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেন, তাদের আত্মঘাতী নির্বাচনী প্রচারণার বিষয়টিও আমাদের আমলে নিতে হবে। নির্বাচনী প্রচারে কমতি ছিল পরিষ্কারভাবেই। তার ওপর তারা তারেক রহমানের মাধ্যমে নিজেদের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার নেয়। আর মানুষের মনে ভেসে উঠে হাওয়া ভবন আমলের দুর্নীতি ও সহিংসতার দুঃসহ সব স্মৃতি। তারেক রহমান আবার মনোনয়ন দেন একাধিক চিহ্নিত অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধীদের। এর মাধ্যমে কি তাদের জনপ্রিয়তা বাড়বে না কমবে? নির্বাচনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের সমর্থকদের তারা ইঙ্গিত দেয় যে তারা নির্বাচন থেকে সরে আসবে। আপনি যদি মনে করেন আপনার দল নির্বাচনেই আসবে না, তাহলে কি আপনি ভোট দেয়ার জন্য প্রস্তুত হবেন? এই কারণে তাদের নিজেদের সমর্থকদেরও ভোট দেয়ার হার কম ছিল, যার ফলশ্রুতিতে তারা কম ভোট পায়।
×