ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

৪০ কারখানায় ছুটি

গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও ভাংচুর

প্রকাশিত: ০৫:০১, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

  গাজীপুরে পোশাক  শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও  ভাংচুর

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ও নিজস্ব সংবাদদাতা, টঙ্গী, ১২ জানুয়ারি ॥ বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে শনিবারও গাজীপুরের বিভিন্নস্থানে কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি, বিক্ষোভ ও ভাংচুর করেছেন। টঙ্গীতে আন্দোলনরত পাঁচ শ্রমিককে সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা তুলে নেয়ার খবরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানা ও গাড়ি ভাংচুর এবং মহাসড়ক অবরোধ করেন। এসময় একাধিক পয়েন্টে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় কয়েকজন আহত হয়। শ্রমিক অসন্তোষের মুখে এদিন প্রায় অর্ধশত কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। পুলিশ ও কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, ভ্রান্ত ধারণা থেকে শ্রমিকরা অযৌক্তিকভাবে কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছে। পুলিশ ও শ্রমিকরা জানায়, সরকার ঘোষিত মজুরি কাঠামোয় বৈষম্যের অভিযোগে তা দূর করে ন্যূনতম বেতন ভাতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের দাবিতে শনিবারও গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। ওই দাবিতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কোনাবাড়ি, টঙ্গী, গাজীপুরা, ভোগড়া, চান্দনা চৌরাস্তা, ইসলামপুর, সাইনবোর্ড, বোর্ডবাজার ও নলজানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সকাল থেকে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে শ্রমিকরা মিছিল নিয়ে কারখানা থেকে বেরিয়ে আসে। এসময় তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য আশপাশের বিভিন্ন কারখানায় গিয়ে তারা শ্রমিকদের আহ্বান জানায় এবং কারখানায় ইটপাটকেল ছুড়ে ভাংচুর করে। বিক্ষোভকারীরা ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ ও গাড়ি ভাংচুর শুরু করে। এতে মহাসড়কগুলোর কয়েকস্থানে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় মহাসড়কের ওপর থেকে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে শ্রমিকদের সঙ্গে শিল্প পুলিশ, থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন আহত হয়। এদিকে টঙ্গী বিসিক এলাকার এক কারখানার শ্রমিক নাজমুলসহ কয়েকজন শ্রমিক জানায়, বেতনভাতা বৃদ্ধির দাবিতে শনিবার টঙ্গী বিসিক এলাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সকাল থেকে আন্দোলন করছিল। এসময় স্থানীয় ট্রিপল ই (ট্রাইভল) পোশাক কারখানার পাঁচ শ্রমিককে সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা ধরে নিয়ে গেছে- এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই এলাকার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এবং তারা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা পার্শ্ববর্তী টঙ্গী স্টেশন রোড মোড় এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও টঙ্গী-নরসিংদী সড়ক মোড়ের ওপর অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করতে থাকে। তারা কয়েকটি গাড়ির কাঁচ ভাংচুর করে। পুলিশ অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই কারখানাসহ ওই এলাকার প্রায় ৪০টি কারখানা শনিবারের জন্য ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ছুটি ঘোষণার পর এসব কারখানার শ্রমিকরাও কারখানা থেকে বেরিয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে সড়কে নেমে পড়লে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও টঙ্গী-নরসিংদী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। টঙ্গী (পূর্ব) থানার ওসি মোঃ কামাল হোসেন জানান, খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের বুঝিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও টঙ্গী-নরসিংদী সড়ক থেকে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সরিয়ে দিলে যান চলাচল শুরু হয়। শ্রমিক অসন্তোষের ফলে স্থানীয় বিসিক এলাকার প্রায় ৪০টি কারখানা শনিবারের জন্য ছুটি হয়ে যায়। তবে সাদা পোশাকে পাঁচ শ্রমিককে ধরে নেয়ার খবরের সত্যতা স্বীকার করে ওসি কামাল বলেন, তাদের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে কারা বা কি কারণে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সে বিষয়ে কোন তথ্য জানাতে পারেননি তিনি। এ বিষয়ে স্থানীয় কয়েকটি কারখানার কর্মকর্তারা জানান, কারখানার কর্তৃপক্ষ সরকার নির্ধারিত বেতন ভাতা শ্রমিকদের দিচ্ছে। কিন্তু বহিরাগত কিছু শ্রমিক বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের জোরপূর্বক কারখানা থেকে বের করে নিয়ে গিয়ে সড়কে গ-গোল করেছে। ভুল ধারণা থেকে শ্রমিকরা অযৌক্তিকভাবে এ আন্দোলন করছে। সরকার ঘোষিত বেতন কাঠামোয় পোশাক কারখানার সিনিয়র-জুনিয়র অপারেটরদের মূল বেতনসহ আনুষঙ্গিক খাতের ভাতাদি বৃদ্ধি করা হয়েছে। সরকারের আগের ঘোষিত গেজেটে কর্মীদের দক্ষতা অনুযায়ী তাদের গ্রেড নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাদের বেতন ভাতা কম দেয়ার কোন সুযোগ নেই। অথচ বিভিন্ন মহল সিনিয়র ও দক্ষ অপারেটরদের ভাতাদি বৃদ্ধি করা হয়নি বলে গুজব ছড়িয়ে আন্দোলনে ইন্দন দিচ্ছে। আশুলিয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা সাভার থেকে জানান, আশুলিয়ায় মজুরি বৈষম্যের অভিযোগ তুলে তা সংশোধন ও সমহারে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো শনিবার বিক্ষোভ করেছে তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এ সময় বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা দফায় দফায় সড়ক অবরোধ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল, জলকামান ও লাঠিচার্জ করে। জানা গেছে, এদিন সকাল নয়টার দিকে আশুলিয়া থানাধীন বেরণ এলাকার ‘ইয়াগী বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামক কারখানার শ্রমিকরা প্রথমে মজুরি বৈষ্যমের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে পাশর্^বর্তী স্টার লিংক ক্রিয়েশন, উইন্ডি গ্রুপসহ কয়েকটি কারখানার অধিকাংশ শ্রমিক। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের জামগড়া ও বেরণ এলাকায় সড়ক অবরোধ করে। পুলিশ প্রথমে শ্রমিকদেরকে বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা দাবি আদায়ে অনড় থেকে রাস্তায় অবস্থান নিলে পুলিশ জলকামান, টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে দুই ঘণ্টাব্যাপী দফায় দফায় সড়ক অবরোধ করে অন্তত ২০টি গাড়ি ভাংচুর করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। সকাল নয়টা থেকে বেলা এগারোটা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন শ্রমিক আহত হয়। এদিকে, বেরণ এলাকার ‘শারমিন গ্রুপ’-এর ‘এ.এম. ডিজাইন’ কারখানার শ্রমিকরা দুপুরের খাবার খেতে বাসায় যাওয়ার পথে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এলাকার বিভিন্ন শাখা সড়কে অবস্থান নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জাকির হোসেন, বাবু মিয়াসহ কয়েকজন শ্রমিককে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। সব মিলিয়ে দিনব্যাপী চলা সংঘর্ষে অন্তত ৩০ শ্রমিক আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে আন্দোলনকারী শ্রমিকরা। শিল্প পুলিশের পরিচালক সানা শামীনুর রহমান বলেন, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা দাবি আদায়ে সড়ক অবরোধ করে অন্তত ২০টি গাড়ি ভাংচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জলকামান, টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়া, যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শিল্প এলাকায় ৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে।
×