ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ছুটির দিনেও ভিড় নেই বাণিজ্যমেলায়, স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

 ছুটির দিনেও ভিড় নেই বাণিজ্যমেলায়, স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা

ওয়াজেদ হীরা ॥ ছোট্ট শিশু সিফাত। একটু খোলা জায়গা পেয়ে বাবার হাতের বাঁধন ছেড়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছে এদিক-ওদিক। বাবা-মা সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন সন্তানের ওপর। ছুটির দিন শনিবার ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় অনেক শিশুকেই খেলা করতে দেখা যায়। ছুটির দিন হলেও এখনও আশানুরূপ ভিড় না হওয়ায় যারা মেলায় আসছেন তারা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরতে পারছেন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার সকাল এবং বিকেল দুটির চিত্র দুরকম। সকালের দিকে একেবারেই ফাঁকা থাকে মেলা। আর বিকেলের দিকে ভিড় থাকলেও টিকেট ইজারাদার ও ব্যবসায়ীদের মতে সেটি এখনও ছুটির দিন হিসেবে পর্যাপ্ত নয়। আর মেলার অভ্যন্তরে ভিড় না থাকার কারণে যারা মেলায় আসছেন তারা বেশ আয়েশ করে ঘুরতে পারছেন। কেনাকাটা কিংবা ঘোরাফেরা কোন কিছুতেই ধাক্কাধাক্কি করতে হচ্ছে না। দর্শনার্থীরা বলছেন মেলায় এখন স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাঘুরি করা যাচ্ছে। মানুষের ভিড় বেশি নয় বলে উপভোগ করা যাচ্ছে মেলার সৌন্দর্যও। আর ব্যবসায়ীদের মতে কেবল মেলা শুরু হলো দ্বিতীয় সপ্তাহে দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। প্রতিবছরই শুক্র ও শনিবারসহ অন্যান্য ছুটির দিনে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় বাণিজ্যমেলায়। এবার মেলা শুরু হওয়ার একদিন পরই ছুটির দিন হওয়াতে মানুষের ভিড়টা তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। তবে শুক্র ও শনিবার অন্য দিনের চেয়ে দর্শনার্থী একটু বেশি। তবে এই মুহূর্তের দর্শনার্থীরা ফাঁকা ফাঁকা ভাব থাকায় আরাম করে চলাফেরা করতে পারছেন। আর বাচ্চারা মনের আনন্দে মেলার অভ্যন্তরে দৌড়াদৌড়িও করতে পারছে। সন্তানের এমন আনন্দেই বাবা-মা খুশি। সরকারী চাকুরে ইব্রাহিম মন্ডল জানান, মেলা প্রতিবছর বাড়তি একটা বিনোদনের অংশ হিসেবেই আসে। বাচ্চাদের নিয়ে আসি নানা বিষয় শেখাতে, দেখাতে। অন্যবার ছুটির দিনে যে ভিড় পাই এবার নেই। অবশ্য পরের ছুটির দিনগুলোতে এমন ফাঁকা আর থাকবে না। এ বছর মেলার অভ্যন্তরেও দর্শনার্থীদের স্বস্তিতে ঘোরাফেরার জন্য একটু ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে। এছাড়াও অনেকেই তাদের বাচ্চাদের নিয়ে ছুটেছেন শিশুপার্কে। মেলার অভ্যন্তরে দুটি শিশুপার্ক বাচ্চাদের বিনোদনের খোরাক মেটাচ্ছে। বন্ধুদের নিয়ে যারা এদিন মেলায় এসেছেন তারা নিজেদের মতো ঘোরাঘুরি ও পণ্য দেখার পাশাপাশি সেলফি উৎসতে মেতে উঠেন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইমামুল হক বলেন, আজ আমাদের ক্লাস নেই। আমরা বন্ধুরা মিলে দেখতে আসলাম মেলা কেমন জমে উঠেছে। মেলার ভেতরে নান্দনিক ফুলের বাগান রয়েছে সেলফি না নিয়ে থাকতে পারলাম না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের মেলায় অভ্যন্তরে ১০টি স্পটে ফুলের বাগান করা হয়েছে। নানা রঙ-বেরঙের ফুল দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করছে বেশ। দর্শনার্থীরা এসব বাগানের পাশে দাঁড়িয়ে বসে নানা ভাবে ছবি উঠাতে দেখা যায়। শনিবার সকালের দিকে দর্শনার্থী ছিল নাম মাত্র। তবে বিকেলের দিকে বেশকিছু দর্শনার্থী দেখা যায়। যাদের অধিকাংশই স্টলে স্টলে ঘুরে সময় কাটিয়েছেন। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গেলে অনেকেই খাবারের স্টলে প্রবেশ করেন। পণ্য কেনাবেচা তেমন একটা জমজমাট না হলেও খাবারের স্টলগুলো বেশ জমজমাট। ফার্মগেট থেকে মেলায় আসা জুলহাস উদ্দিন বলেন, শুক্রবার আসতে পারিনি আজ শনিবারও ছুটি। তাই সন্তান নিয়ে মেলায় আসলাম। বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করলাম। কেনাকাটা কিছু করিনি। সামনে আরও অনেক দিন সময় আছে আর আমার বাসাও কাছে তাই। তিনি আরও বলেন, অনেক স্টল দেখলাম এখনো কাজ হচ্ছে। এসব শেষ হলে হয়তো আরও বেশি ভাল লাগবে। অবশ্য কেউ কেউ কিনেই বাসায় ফিরেছেন। বিশেষ করে সন্তানদের জন্য খেলনা কেনার দৃশ্য দেখা যায়। অনেককেই প্লাস্টিক ও হোম এ্যাপ্লায়েন্স কিনতে দৃশ্যও দেখা যায়। কেরানীগঞ্জ থেকে মেলায় আসা আসলাম বলেন, শুক্র ও শনিবার রাস্তায় যানজট কম থাকে তাই মেলায় আসি। তবে মেলায় কিছু জিনিস কিনেছি সেটা ঘরের ব্যবহারের জন্য। সামনের দিনে এসে প্রয়োজনীয় অন্য সব কিনে নিবো। মেলায় ঘুরে দেখা গেছে, ঘরের আসবাবপত্র, প্লাস্টিক সামগ্রী, ফাস্টফুড ও আইসক্রিমের দোকানগুলোতেই ভিড় বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাণিজ্যমেলা জমে উঠে শুরুর সপ্তাহখানেক পর থেকে। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে মেলায় দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বেশি হয়ে থাকে। এবার মেলা শুরুর পরপরই ছুটির দিন হওয়ার কারণে পূর্বের বছরগুলোর মতো তেমন ভিড় দেখা যাচ্ছে না। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই মেলা মানুষের সমাগমে প্রতিদিনই পরিপূর্ণ থাকবে। এদিকে মেলার অভ্যন্তরে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন নিয়ে তরুণ প্রজন্মের বেশ আগ্রহ দেখা গেছে। তারা বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন ছবি দেখছেন। অনেক তরুণকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠতেও দেখা যায়। প্রতিবছর বঙ্গবন্ধুর এই প্যাভিলিয়ন করার কারণে তরুণ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে নতুনভাবে আরও বেশি জানতে পারছেন বলে আগত জ্যেষ্ঠ নাগরিকরা মন্তব্য করেন। প্যাভিলিয়নটির সামনে সারি সারি সাজানো নৌকা। এছাড়াও মেলায় দৃষ্টিনন্দন মূল ফটক সবার দৃষ্টি কেড়েছে। মেলায় প্রবেশ করার পূর্বে এবং প্রবেশ করে কেউ কেউ মূল ফটকের সঙ্গে সেলফি তুলে মুহূর্তেই ছেড়ে দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এবারের বাণিজ্যমেলার মূল ফটক তৈরি করা হয়েছে মেট্রোরেলের আদলে। যা গতবার করা হয়েছিল পদ্মা সেতুর আদলে। আগত দর্শক তামান্না ইয়াসমিন বলেন, প্রতি বছর এই গেটটা বিশেষ আকর্ষণীয় হয়। দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার আদলে করার কারণে আরও বেশি ভাল লাগে। দর্শনার্থীরা মূল ফটক দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়বে ডিজিটাল এক্সিপেরিয়েন্স সেন্টার। চারটি টাচ স্ক্রিন কম্পিউটার রয়েছে এতে। দিকনির্দেশনা দিতে রয়েছেন একজন কর্মকর্তাও। এই সেন্টারে ঢুকে যে স্টল বা প্যাভিলিয়নে যেতে চান তার অবস্থান জেনে নেয়া যাবে সহজে। ডিজিটাল উন্নয়নকে জানান দিতে আধুনিক এই পদ্ধতির সংযোজন এবারের মেলায়। এছাড়া দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সবই তুলে ধরা হয়েছে মেলায়। বরাবরের মতোই এবারের মেলাতেও ইপিবির তথ্যকেন্দ্র, বিশ্রামস্থল, রক্তদান ও প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রও রয়েছে। বাণিজ্যমেলা থেকে পণ্য কিনে রাহুল দম্পতি বলেন, মেলায় পণ্যের সংখ্যা ও ধরন অনেক বেশি থাকায় পছন্দ করে জিনিস কেনা যায়, আবার বিভিন্ন অফার থাকে। এছাড়া দেশীয় পণ্যও বেশি পাওয়া যায়। তাই বাণিজ্যমেলা থেকে এসব পণ্য কেনেন। বিভিন্ন বিক্রয় প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ছুটির দিন হিসেবে বিক্রিটা খুব একটা হচ্ছে না। যারা আসছেন, দেখেই চলে যাচ্ছেন। তবে সামনের দিনগুলোতে বিক্রি বাড়বে সে প্রত্যাশাও করেন ব্যবসায়ীরা। ব্লেজার বিক্রেতা হাসান বলেন, শীতের মৌসুম অথচ সারা দিনে বিক্রি মাত্র দুটি। তবে আমরা নিরাশ হচ্ছি না। কেবল মেলা শুরু হলো। মেলা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২২ দেশের ৫২ প্রতিষ্ঠান এবার মেলায় অংশ নিয়েছে। দেশগুলো হলো থাইল্যান্ড, ইরান, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, হংকং, সিঙ্গাপুর, মারিশাস, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান। ইপিবি জানিয়েছে, ৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া মেলা শেষ হবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলবে।
×