ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্লান্ট স্থাপন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে

জমি জটিলতায় আটকে ‘ওয়েস্ট হিট রিকভার এ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন প্রকল্প’

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

 জমি জটিলতায় আটকে ‘ওয়েস্ট হিট রিকভার এ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন প্রকল্প’

রশিদ মামুন ॥ জমি জটিলতায় আটকে আছে দেশের প্রথম ‘ওয়েস্ট হিট রিকভার এ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন’ প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুত কেন্দ্রর অপচয় হওয়া হিট (তাপ) এবং স্টিম (বাষ্প) ধরে শিল্প কারখানার কাছে বিক্রি করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিভিন্ন উন্নত দেশ এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে জ্বালানি খরচ কমিয়ে এনেছে। বাংলাদেশও এটা শুরু করতে চাচ্ছে। তবে শুরুতেই জমি জটিলতায় পড়েছে প্রকল্পটি। টেকসই নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ ¯্রডো সমীক্ষা করে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় সিদ্ধিরগঞ্জের একটি বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে তাপ এবং স্টিম নিয়ে প্রতিবেশী আদমজী ইপিজেডের কাছে বিক্রি করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। প্রাথমিক সমীক্ষার পর একটি চীনা কোম্পানিকে কাজটি দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সেজন্য আদমজী ইপিজেডের কাছে তিন একর জমিও চাওয়া হয়। কিন্তু আদমজী ইপিজেড বলছে তাদের দেয়ার মতো কোন জমি নেই। ফলে প্রকল্পর জন্য প্ল্যান্ট স্থাপন করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ¯্রডো বলেছে তারা ইতোমধ্যে আদমজীর কাছে জমি চেয়ে ব্যর্থ হয়েছে। এখন সরকারের উপর পর্যায় থেকে জমির ব্যবস্থা করা হলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনের পর ৫০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড মাত্রায় হিট বাতাসে ছেড়ে দেয়। এই তাপমাত্রা ধরে আবার কাজে লাগানো যায়। এই হিটকে শিল্পকারখানার বয়লারে ব্যবহার করা যায়। এতে করে শিল্প কারখানা যে দরে তার বয়লারের জন্য জ্বালানি কিনতো তার থেকে অনেক কম দামে এই হিট পাওয়া যায়। একই ভাবি স্টিমও কম দামে শিল্প কারখানায় সরবরাহ করা সম্ভব হয়। কিন্তু এজন্য পৃথক একটি প্ল্যান্ট বসাতে হয়। যা সাধারণত শিল্প কারখানার কাছে স্থাপন করতে হয়। এক্ষেত্রেও সিদ্ধিরগঞ্জ ইপিজেডের মধ্যে জমি চাওয়া হয়। এতে শিল্পকারখানায় যেমন নতুন জ্বলানি দরকার হয় না অন্যদিকে বিদ্যুত কেন্দ্রও তার তাপ এবং বাষ্প বিক্রি করে অর্থ পায়। এই তাপ এবং বাষ্প সাধারণত বাতাসেই মিলিয়ে যায়। নতুন ইপিজিড নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি ইপিজেড এ একটি করে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের চিন্তা করা হচ্ছে। এসব বিদ্যুত কেন্দ্র থেকেও তাপ এবং বাষ্প যাতে ব্যবহার করা যায় বিষয়টি নিয়ে ডো রফতানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছে। তারা ¯্রডোর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে তাদের নীতিমালায় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছে। ¯্রডোর চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রকল্পটির জন্য আমরা আদমজী ইপিজেডের কাছে জমি চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা বলছে আমাদের এখানে দেয়ার মতো জমি নেই। এরপরও আমরা অনুরোধ করেছি। আমরা আবার তাদের সঙ্গে আলোচনা করব জনিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের প্ল্যাট বসাতে তিন একর জমি প্রয়োজন হয়। প্রকল্পটির সুবিধা সম্পর্কে হেলাল উদ্দিন বলেন, এতে শিল্প মালিকরা খরচে বয়লার চালায় তার চেয়ে অনেক কম খরচ পড়বে। অন্যদিকে বিদ্যুত কেন্দ্রও আর্থিকভাবে লাভবান হবে। এতে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচও কমে আসবে। এজন্য জমির যেমন প্রয়োজন তেমনি যে কেন্দ্র থেকে তাপ এবং বাষ্প নেয়া হবে ওই কেন্দ্রকে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসও সরবরাহ করতে হবে। উন্নত দেশগুলোতে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের সময়ই হিট এবং বাষ্প অন্যত্র ব্যবহারের সুযোগ রাখা হয়। বাংলাদেশে অনেক দিন থেকে আলোচনা হলেও এর যাত্রা শুরু করতে চেয়েছিল ¯্রডো। কিন্তু শুরুতেই জমি জটিলতায় পড়ে আটকে গেছে প্রকল্পটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন শুধু একটি বিদ্যুত কেন্দ্রর হিট এবং স্টিম বিক্রি করার চিন্তা না করে অন্য কেন্দ্রর ক্ষেত্রেও চিন্তা করা উচিত। এতে জ্বালানি সাশ্রয় হবে বলে মনে করা হয়।
×