ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে

কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে রোহিঙ্গা এলাকা আটকানোর পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

 কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে রোহিঙ্গা এলাকা আটকানোর পরিকল্পনা

শংকর কুমার দে ॥ রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। সারাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গত দেড় বছরে ৫৮ হাজার ৩৬১ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে ক্যাম্পে পাঠিয়েছে পুলিশ। এসব কাজে সহযোগিতায় করায় আটক করা হয়েছে ৫৩৬ দালালকে। রোহিঙ্গারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ার কারণে জঙ্গীবাদ সম্প্রসারণ, মরণনেশা ইয়াবার বিস্তার, নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কায় রোহিঙ্গারা এখন দেশের জন্য গোদের ওপর বিষফোঁড়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতাসহ অপরাধ দমনে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ইউনিট গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কক্সবাজার ও বান্দরবানের ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারা এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। সেনা, বিজিবি, র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী তিন স্তরের চেকপোস্ট থাকার পরও কোনভাবেই ক্যাম্পে আটকে রাখা যাচ্ছে না রোহিঙ্গাদের। এতে স্থানীয় ও জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৬ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৫৮ হাজার ৩৬১ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে ক্যাম্পে পাঠিয়েছে পুলিশ। আর এসব কাজে সহযোগিতায় করায় ৫৩৬ দালালকে আটক করা হয়েছে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে তাদের আটকানোর জন্য পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের বসবাস এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে (এপিবিএন) আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন একটি ইউনিট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায় গত বছরের ৮ নবেম্বর সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাচারের চেষ্টাকালে ৩৩ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড সদস্যরা। এদের মধ্যে ১০ নারী, ১৪ পুরুষ ও ৯ শিশু। তারা উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। এ সময় আটক করা হয়েছে ৬ দালালকে। কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর থেকে একটি ট্রলারসহ তাদের উদ্ধার করা হয়। গত ১ ডিসেম্বর টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে মালয়েশিয়াগামী ১০ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে উদ্ধার করে র‌্যাব। এ সময় আব্দুর রহমান নামে এক দালালকে আটক করা হয়। গত ১৬ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৫৮ হাজার ৩৬১ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে ক্যাম্পে পাঠিয়েছে পুলিশ। আর এসব কাজে সহযোগিতায় করায় ৫৩৬ দালালকে আটক করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গা ও আটক দালালদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা উদ্বেগজনক, যা এখনই নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, চট্টগ্রামের কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত ৩০টি ক্যাম্পে বসবাস করছে ১১ লাখ রোহিঙ্গা। কিন্তু এসব ক্যাম্পে নেই কোন কাঁটাতারের বেড়া কিংবা সীমানা প্রাচীর। ফলে অবাধে চলাফেরা করছে রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়া, বিয়েসাদি করা, পাসপোর্ট সংগ্রহ করে বিদেশে যাওয়া, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ, ইয়াবার মতো মরণনেশার মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়ে অপরাধ ছড়িয়ে দিচ্ছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের চেকপোস্ট পেরিয়ে রোহিঙ্গারা নানা উপায়ে ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে আসতে পারায় নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। স্থানীয় মানুষ বলেন, নানাভাবে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে আসছে। আমাদের জীবনে তাদের একটা প্রভাব পড়ছে। তারা বাংলাদেশী পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিশে^র বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। পুলিশ সদর দফতরের পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মনিরুজ্জামান বলেন, রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট গ-ির মধ্যে রাখা এবং কক্সবাজারের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এপিবিএন গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টার মধ্যে তাদের উদ্ধার করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িত দালালদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। রোহিঙ্গারা নিজেদের ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে আশপাশের পরিবেশ নষ্ট করছে। এতে করে স্থানীয় বাসিন্দারা চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়াও পর্যটন নগরী কক্সবাজারের নিরাপত্তায় আরও গতিশীল করতে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। তিনি বলেন, এপিবিএন ইউনিট গঠনের বিষয়ে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাওয়া গেছে। রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়া ঠেকানোসহ তাদের নিরাপত্তায় এপিবিএন পুলিশের ইউনিট গঠনে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু করা হয়েছে বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
×