ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব

প্রকাশিত: ০৪:২২, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব

নতুন বছরের শুরুতে দেশে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন ইতোমধ্যে সংস্কৃতিবান সচেতন মানুষের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছে। রাজধানীর সাতটি স্থানে উৎসবের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। উৎসবের মূল কেন্দ্র জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে সকাল থেকে চলছে শিশুতোষ চলচ্চিত্র। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে বিনামূল্যে তিনটি সেশনে চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ দানের জন্য আয়োজক রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ কর্তৃপক্ষ ধন্যবাদ পাবেন। সাধারণ দর্শনার্থীর জন্য টিকেটের নির্ধারিত মূল্য খুব বেশি নয়। উল্লেখ্য, এবার ৫৮টি দেশের ২১৮টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। এর মধ্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ১২২টি, স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন চলচ্চিত্রের সংখ্যা ৯৬টি। ১৯৯২ সালে প্রথম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছিল। উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা বলেছেন। তিনি বলেন, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সব মানবিক অনুভূতি উঠে আসে। একটি ভাল চলচ্চিত্র একজন মানুষ ও সমাজকে বদলে দিতে পারে। মানুষের জন্য কাজ করতেও অনুপ্রাণিত করে। সত্যি বলতে কি সাহিত্য সম্পর্কেও একই কথা প্রযোজ্য। সাহিত্য মানুষের জীবন ইতিবাচকভাবে বদলে দেয়। সাহিত্যনির্ভর যেসব চলচ্চিত্র নির্মিত সারা বিশ্বে সেগুলোয় যোগ হয়েছে ভিন্নতর একটি মাত্রা। এটা ঠিক যে চলচ্চিত্র এমন একটি মাধ্যম যা সংগ্রহ ও সমন্বয় করে নেয় শিল্প-সাহিত্যের প্রায় সব শাখাই। সঙ্গীতের কথা ও সুর মানবমনকে আলোড়িত করে, সত্তার শুশ্রƒষা ও প্রেরণা মেলে এই সংবেদনময় শিল্পমাধ্যম থেকে। চলচ্চিত্র ধারণ করে সরাসরি সঙ্গীত। এছাড়াও থাকে নেপথ্য সঙ্গীতÑ যা মানুষের অনুভূতিকে উজ্জীবিত করে। উৎসবের সূচনালগ্নে আমাদের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, সাহিত্য, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত এগুলো শুধু বিনোদনের জন্য নয়। এর বাইরেও অনেক কিছুই এর সঙ্গে যুক্ত। মানুষকে উচ্চতর মার্গে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। সে সঙ্গে রুচিকেও পরিশীলিত করে। চলচ্চিত্র একটি শক্তিশালী মাধ্যম। জাতি গঠনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। বর্ষীয়ান এই শিল্পবোদ্ধার কথা ব্যাখ্যা করে বোঝানোর কিছু নেই। সাধারণ মানুষের চিত্তবিনোদনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্রের তুলনা নেই। বাস্তব জীবনের নিত্যনৈমিত্তিক সঙ্কট ও টানাপোড়েন ভুলে দু-আড়াই ঘণ্টার জন্য হাসি-কান্না আর নাটকীয়তায় পূর্ণ নাচে-গানে ভরপুর ছায়াছবি খেটেখাওয়া মানুষকে আমাদের পাশাপাশি এক ধরনের জীবনশক্তিও দান করে থাকে। স্বাভাবিক সুস্থ চিত্তবিনোদনের অভাবে একজন মানুষ মনোবৈকল্যের শিকার হতে পারে বলে সতর্ক করে দেয়া হয় আধুনিক মনোবিজ্ঞানে। প্রতিটি উৎসবে আমাদের সংস্কৃতি প্রাণ পায়। জীবন আরও অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে। সঙ্গীত, কবিতা, ছবি অঙ্কন, ভাস্কর্য, সাহিত্য, দার্শনিক চিন্তা প্রভৃতি একেকটা জাতির সংস্কৃতির প্রকাশ মাধ্যম এবং দর্পণ। এসব সৃজনধর্মী কাজেই অর্জিত হয় মন ও হৃদয়ের সুখানুভূতি-আনন্দ ও উৎফুল্লতা। মানুষ উৎসবে তখনই যুক্ত হয় যখন তার কাছে জীবন স্বস্তিকর এবং উপভোগের। উৎসবের সময় ও পরিবেশ সৃষ্টিও তাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। জীবন থেকে উৎসব উপড়ে নিলে সপ্রাণ দেহ আর শবের মধ্যে বিশেষ ব্যবধান অবশিষ্ট থাকে না। জীবনকে বর্ণিল করার জন্য যেমন রচিত হয়েছে নানাবিধ উৎসব তেমনি জীবনের বাঁকে বাঁকে সঙ্কট উজিয়ে সংগ্রাম করেই অর্জন করে নিতে হয়েছে বিবিধ উৎসব। উৎসবের উপলক্ষ সৃজন করতে পারাটাও তাই এক অর্থে অগ্রসরতা, জীবনমুখিতা এবং উজ্জ্বল আনন্দের প্রসারিত প্রাঙ্গণ উদ্ভাবন। সফল হোক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব।
×