ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা

বায়ু দূষণে নারীর গর্ভপাতের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

বায়ু দূষণে নারীর গর্ভপাতের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়

বায়ু দূষণে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য গর্ভপাত বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে ধূমপানের মতোই। এক বিজ্ঞানভিত্তিক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, তথ্যটি গুরুতর এবং পরবর্তী প্রজন্মের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য অবশ্যই বিষাক্ত বায়ু হ্রাস করতে হবে। খবর গার্ডিয়ান অনলাইনের। বায়ু দূষণের কারণে অকালে মৃত্যু ও জন্মলগ্নে শিশুর কম ওজনের ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং ভ্রুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে এর মধ্যেই জানা গেছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, গর্ভপাতে বায়ু দূষণ কণিকাও জায়গা করে নেয়। দীর্ঘদিন ধরে দূষিত বায়ুর প্রভাবে গর্ভপাতের ঝুঁকি রয়েছে একথা আগেও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ব্রাজিল থেকে ইতালি হয়ে মঙ্গোলিয়ায় চালানো সমীক্ষাগুলোতে একটা সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া গেছে। কিন্তু অন্যগুলোতে সেরকমটা দেখা যায় না। তারপরও সাম্প্রতিক সমীক্ষাটিতেই অল্প সময়ের বায়ু দূষণের প্রভাব নিরূপণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, তাতে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইাড দূষণমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং বিশ্বব্যাপী গর্ভপাতের ঝুঁকি ১৬ শতাংশ বেড়ে যায়। ইউনিভার্সিটি অব উটাহয়ের জরুরী ওষুধ বিভাগের ডাঃ ম্যাথ্যু ফুলার বলেন, ভ্রুণের ওপর পরিবেশগত প্রভাবে ঝুঁকি বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে অন্য সমীক্ষাগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় যে, তা প্রথম তিন মাসের গর্ভপাতে ধূমপানের কারণে ঝুঁকির বৃদ্ধির মতোই। বিশেষ করে ডিজেলচালিত যানগুলোতে জ্বালানি পোড়ানোয় সৃষ্টি হয় নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড ডাঃ ম্যাথ্যু ফুলার এ সমীক্ষা দলের একজন গবেষকও। ফার্টিলিটি ও স্টেরিলিটি সাময়িকীতে প্রকাশিত এ গবেষণাটি পরিচালিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের সল্ট লেক সিটি ও পার্শ্ববর্তী অন্যান্য শহর এলাকায়। কিন্তু ফুলার বলেন, এ ফল অন্যত্রও প্রযোজ্য। বিশ্বে অনেক স্থানেই মানুষ এ দূষণের শিকার এবং এর চেয়ে অনেক বেশি। তাই এটা কেবল উটাহর জন্যই অনন্য সমস্যা নয়। এ সমস্যায় ভুগছি বিশ্বে আমরা সবাই। সল্ট লেক সিটিতে যে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড মাত্রা রয়েছে তার সমমাত্রা রয়েছে লন্ডন ও প্যারিসের মতো শহরগুলোয়। ২০১৬ সালে বিশেষ করে অল্প সময়ের বায়ু দূষণে এক পরিবারের সদস্যের গর্ভপাত হলে বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিকভাবে সতর্ক হন ফুলার। প্রভাবটা বাস্তবসম্মত কিনা তা যাচাইয়ের জন্য তিনি জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানী ক্লেয়ার লেইসার ও অন্যের সঙ্গে মিলে কাজ করেছেন। তারা রেকর্ড বিশ্লেষণে বলেছেন, ২০০৭ থেকে ২০১৫ সালে ১ হাজার ৩শ’র বেশি নারী গর্ভপাতের পর জরুরী বিভাগে এসেছিলেন। বয়স, ওজন, আয় ও অন্যান্য ব্যক্তিগত কারণও রয়েছে গর্ভপাতের। ৭ দিনের গর্ভপাতের সঙ্গে সবচেয়ে মারাত্মকভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড পর্যায়। এর আগের একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, উচ্চ মাত্রার কণিকা দূষণের সঙ্গেও গর্ভপাতের অধিক ঝুঁকির সম্পৃক্ততা রয়েছে। কিন্তু নতুন সমীক্ষায় তা পরিসংখ্যানের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়। তারপরও ইরান, ইতালি, মঙ্গোলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘ মেয়াদে কণিকা দূষণের ওপর সাম্প্রতিক কালের অন্যান্য সমীক্ষায় এক তাৎপর্যপূর্ণ সম্পৃক্ততা উঠে এসেছে। ওজন ও সালফার ডাই অক্সাইডসহ অন্যান্য বায়ু দূষণও এ বিশ্লেষণগুলোতে সংশ্লিষ্ট রয়েছে। এডিনবোর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাঃ সারাহ স্টক বলেছেন, বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য বায়ু দূষণ স্পষ্টত ক্ষতিকর। ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বাস্থ্য নিশ্চিতের জন্য বায়ু দূষণের প্রভাব হ্রাসের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লেইসার বলেন, আমরা গর্ভধারণের সময়টি জানতে সমর্থ হলে তা হবে সত্যিকার কল্যাণকর। তখন আমরা বুঝতে পারব যে নারীটি কখন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকছে। এ নির্দিষ্ট বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমাদের আরও সমীক্ষা চালাতে হবে। তাই কোন নারী অন্তঃসত্ত্বা হলে চিকিৎসকের সঙ্গে তার কথা বলা উচিত। ফুলার বলেন, সর্বোৎকৃষ্ট পথ হচ্ছে, শহর এলাকাগুলোতে সার্বিক দূষণমাত্রা হ্রাস করা। তিনি বলেন, বছরের অত্যন্ত দূষণ সময় পরিহার করে গর্ভসঞ্চারের সময় বেছে নিতে পারেন নারীরা। তিনি একথাও বলেন, অন্তঃসত্ত্বা নারীরা দূষণ দিনগুলোতে ইনডর এয়ার ফিল্টার ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ বিলাসী পণ্যের জোগান সম্ভব নয়।
×