ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শহর সাজাতে খুদে শিল্পীরা

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ১২ জানুয়ারি ২০১৯

শহর সাজাতে খুদে শিল্পীরা

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী থেকে ॥ খুদে চিত্রশিল্পীরা তাদের নিজ জেলা শহরকে নতুনরূপে সাজাতে ফের নেমে পড়েছে। রং-তুলির আঁচড়ে সাজিয়ে চলেছে শহরের বিভিন্ন দেয়াল। তাদের আঁকা চিত্রকর্মে ফুটে উেেছ ফুল, ফল ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য। শুক্রবার সকাল হতে দুপুর পর্যন্ত দেখা যায় জেলা শহরের প্রধান সড়ক, পিটিআই কলেজ, স্টেশন সড়ক, গাছবাড়ি সড়কের বিভিন্ন দেয়ালে তারা ছবি অঙ্কন করেছে। নিজের শহর সাজাতে ছোটদের এই দৃষ্টিনন্দন শিল্পকর্ম প্রভাব ফেলেছে বড়দের মনে। শিশুদের হাতের ছোঁয়ায় সাজানো শহর দেখে আনন্দিত অনেকে। দেয়ালে দেয়ালে আঁকা বিভিন্ন ছবি মন কেড়েছে শহরের মানুষসহ পথচারীর। এতে শহর সাজানোর চেতনা ছড়িয়ে পড়েছে সবার মাঝে। মজার বিষয় হলো, শিশুদের এই ছবি আঁকা দেখে পথচারীরাও থমকে যায়। পথচারীরা থমকে থেকে শিশুদের এই কার্যক্রম দেখে আনন্দ উপভোগ করে তা যেন সঙ্গে নিয়ে যায়। ভিশন- ২০২১ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে বছরের মার্চ হতে শহর রাঙানোর কাজটি শুরু হয়। সে সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ বিখ্যাত মানুষদের প্রতিকৃতি, জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা হয়। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে ১৫ জনের একটি প্রতিনিধি দল নীলফামারী শহরে এসে খুদে শিল্পীদের ছবি আঁকার দিকনির্দেশনা দেন। সেই থেকে আজও থামেনি খুদে শিল্পীদের রং-তুলি। লেখাপড়ার পাশাপাশি ছুটির দিনে রং-তুলির আঁচড়ে তারা রঙিন করে তুলেছে নীলফামারী শহরের বেশিরভাগ দেয়াল। ৮৮ খুদে চিত্রশিল্পী বিভিন্ন দেয়ালে আঁকছে ছবি। শিশুদের দৃষ্টিনন্দন এমন চিত্রাঙ্কন দেখে শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী বুলবুল বলেন, পথ দিয়ে হাঁটলে দেয়ালে দেখা যায় ছবি আর ছবি। তাতে শোভা পেয়েছে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, বিখ্যাত অনেক ব্যক্তি, জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি। এসব ছবিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বৃদ্ধি পাবে, দেশপ্রেম জাগরিত হবে। পোস্টার আর দেয়াল লিখনের পরিবর্তে সুন্দর ছবি দেখে মানুষের মন প্রফুল্ল থাকবে, চেতনার পরিবর্তন ঘটবে। দেয়ালে দেয়ালে ছবি আঁকতে পেরে আনন্দিত খুদে শিল্পীরা। তাদের মধ্যে অদিতি রায় ঊর্মি, উর্শিতা, আশিকুর রহমান, নির্জনা বৈরাগী, মেধা, ইভা, অথৈ আপনসহ অনেকে বলেন-আমাদের কোন ক্লান্তি নেই, নিজের শহর সাজাতে পেরে আনন্দ পাচ্ছি, এমন সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি আমরা কখনও ভাবতে পারিনি। খুদে শিল্পীরা জানায়, আগে ছবি এঁকেছিল কাগজে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রতিযোগিতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল তাদের চিত্রাঙ্কন। রং-তুলির আঁচড়ে নিজের শহরকে রঙিন করে তুলতে পারবে এটা তারা ভাবতেই পারেনি কখনও। কাজটির সঙ্গে যুক্ত ভিশন-২০২১’র একঝাঁক তরুণ সংগঠক। সংগঠকদের মধ্যে আল-মামুন করিম সুমেল, সহিদুল ইসলাম সেতু, তপন রায় বর্ষণ, সাগর শারিয়ার বলেন, শিশুদের সঙ্গে কাজ করে আমরা আনন্দ পাচ্ছি। তাদের কাছে রং ও ছবি আঁকার কাজ শিখতে পারছি। এমন একটি কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আমরা নিজেদের ধন্য মনে করছি। সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী ওয়াদুদ রহমান জানান, ওই উদ্যোগের প্রধান পৃষ্ঠপোষক নীলফামারী সদর আসনের সংসদ সদস্য সাবেক সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তার সহযোগিতায় একটি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শহরের ৮৮ খুদে শিল্পীকে বাছাই করে গত বছরের মার্চ থেকে জেলায় জাতীয় রবীন্দ্র সম্মেলন ঘিরে চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে শহরের দেয়াল সাজানোর কাজ শুরু করে তারা। সেটি শেষ হলেও খুদে শিল্পীদের উদ্যম থামেনি। তাদের ছবি আঁকার আগ্রহে শহর সাজাতে অন্যান্য দেয়াল রাঙানোর কাজ হাতে নেয়া হয়। ইতোমধ্যে শহরের ৬০ভাগ দেয়ালে খুদে শিল্পীদের তুলির আঁচড়ে সৌন্দর্য দৃশ্যমান হয়েছে। এ ব্যাপারে কথা বলা হলে সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর বলেন, শিশুমনের সৃজনশীলতার এই যে আলো, তা ছড়িয়ে যাবে লাল-সবুজের দেশটা জুড়ে; তারা জাগিয়ে দিয়েছে তেমনই শুভ প্রত্যাশা। তিনি বলেন, নীলফামারী আমাদের ভালবাসার শহর, আমাদের গর্বের শহর। এটাকে আমরা সুন্দর রাখতে চাই, পরিচ্ছন্ন রাখতে চাই।
×