ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাইব্রিড গাড়ির বিবর্তন

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১২ জানুয়ারি ২০১৯

হাইব্রিড গাড়ির বিবর্তন

ইতিহাস কিন্তু বেশ পুরনো। বিদ্যুতচালিত গাড়ি কিন্তু প্রথম এই শতাব্দীর আগেই তৈরি হয়েছিল। ১৮৬০ এর পর থেকেই বিদ্যুতচালিত বেশ কিছু গাড়ি নির্মাণ করে ফ্রেঞ্চরা। ১৮৮৮ সালেই জার্মানরাও বানিয়েছিল তাদের প্রথম বিদ্যুতচালিত গাড়িটি। কিন্তু ১৯ শতকের শুরুতে জীবাশ্ম চালিত গাড়ির কাছে পিছিয়ে পড়ে এ ধরনের গাড়িগুলো। দুটি বিশ্বযুদ্ধে ব্যাপক পরিমাণ গাড়ির প্রয়োজন হয় যেগুলো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে এবং যাদের জ্বালানি হবে সহজলভ্য। পেট্রোল এবং ডিজেল চালিত গাড়ির শিল্প এগিয়ে যায় বহুদূর। বর্তমান শতকে যখন প্রত্যেকটি দেশই যখন দূষণ কমাতে যুদ্ধ করে যাচ্ছে তখন পরিবেশবান্ধক ইলেকট্রিক এবং হাইব্রিড গাড়ি আবার সামনে এসেছে। ২০১৬ সালে এক লাফেই ৩৬% বিক্রি বেড়ে যায় জানান দেয় অটোমোবাইলে নতুন যুগ খুব কাছেই। জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম দূষণকারী গ্যাসে গাড়ি চালালেও প্রতি মাইলে গড়ে ৪১১ গ্রাম কার্বন বাতাসে নিঃসৃত হয়। সেখানে বর্তমানের হাইব্রিড গাড়িগুলো নিঃসৃত করে মাত্র ১০০ গ্রাম। হাইব্রিড গাড়ি এখনও আঁতুড়ঘরে আছে বললে ভুল হবে না। আগামী দশকে সময় সঙ্গে গাড়িগুলো আরও উন্নত হলে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা আরও কমে যাবে। সরকার এবং নীতি নির্ধারকদের দিক থেকেও এসব গাড়ির পক্ষে আসছে নানা প্রণোদনা। এই মুহূর্তে সারা পৃথিবীর অটোমোবাইলের মাত্র ১%। কিন্তু এই ১ ভাগই জানান দিচ্ছে আগামী বিশ্বের মহাসড়ক থাকবে তাদের দখলে। বলা হচ্ছে হাইব্রিড গাড়ির কথা। হাইব্রিড গাড়ি কী : হাইব্রিড প্রযুক্তি অর্থ একাধিক বিকল্প পদ্ধতির সসমন্বয়। হাইব্রিড গাড়িতে জ্বালানি প্রয়োগের ক্ষেত্রে একাধিক বিকল্প রাখা হয়। জীবাশ্ম জ্বালানির সঙ্গে এক বা একাধিক ইলেকট্রিক মোটর এবং ব্যাটারির সংযোগ। গাড়ির চাকাতে বসানো ডায়নামো চার্জ হতে পারে গাড়ি চলার সময়, সরাসরি চার্জ হতে পারে বিদ্যুত লাইন থেকেও। হাইব্রিড আর বৈদ্যুতিক গাড়ির মধ্যে তফাত কোথায় : বৈদ্যুতিক গাড়িগুলোকে সরাসরি বিদ্যুত লাইন থেকে চার্জ করতে হয়, আর গাড়ি কত দূর চলবে সেটাও নির্ভর করে এর চার্জে এবং ব্যাটারির ওপর। আর হাইব্রিড গাড়িতে বিদ্যুত এবং তেল-গ্যাস দুভাবেই চালানোর সুযোগ থাকে। হাইব্রিড গাড়ির সুবিধা : এ ধরনের গাড়িতে থাকে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাটারি। গাড়ি যখন তেলে চলে তখনই চার্জ হতে থাকে এই ব্যাটারি। তেল শেষ হয়ে গেলে ব্যাটারিতে চলতে থাকবে গাড়ি। সাধারণত এই গাড়িগুলোর মাইলেজ অনেক বেশি থাকে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে চীন থেকে ঘোষণা আসে আগামীতে ডিজেল এবং গ্যাসচালিত গাড়ি তারা নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে। ফ্রান্স, ব্রিটেনও ঘোষণা দিয়েছে ২০৩০ থেকে ২০৪০ এর ভেতর তারা রাস্তায় শতভাগ হাইব্রিড গাড়ি নামাবে। প্রতিবেশী ভারতও ২০৩০ সালের মধ্যে ব্যাপক আকারে হাইব্রিড গাড়ি নামানোর কথা ভাবছে। যুক্তরাষ্ট্রের দুই অটোমোবাইল জায়ান্ট ফোর্ড এবং জেনারেল মোটরস ২০২৩ এর ভেতর বাজার থেকে ৩০টি পুরনো মডেল সরিয়ে নেবার ঘোষণা দিয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে ফিলিপাইন ১০ লাখ পরিবেশবান্ধব গাড়ি সড়কে দেখতে চায় বলে ঘোষণা দিয়েছে। প্রায় সব দেশের সরকারই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। ২০১৯ সাল থেকে ভলভো শুধুমাত্র ব্যাটারিচালিত হাইব্রিড গাড়ি ছাড়া অন্য গাড়ি নির্মাণ করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। চীন সরকার মাত্রাতিরিক্ত দূষণের ফলে গাড়ি নির্মাণকারীদের হাইব্রিড গাড়ি নির্মাণে ঠেলে দিচ্ছে। ডিজেলচালিত গাড়ির ওপর অতিরিক্ত ট্যাক্স আরোপ করে বা বর্তমানে ১০০র বেশি মডেল চীনে হাইব্রিড গাড়ির বাজারে বড় পরিবর্তন এনেছে। গবেষকরা চীনকে বলছেন আগামী দিনের অটোমোবাইল জায়ান্ট এবং তাদের সিদ্ধান্ত অন্যান্য দেশগুলোকেও প্রভাবিত করছে। বিভিন্ন দেশের সরকারও নানাভাবে নির্মাতাদের তবে সরকারের চাপ না থাকলেও নির্মাতা এবং ক্রেতা উভয়ই এই ধরনের গাড়ির দিকে ঝুঁকত। কারণ খরচে সাশ্রয় এবং রক্ষণাবেক্ষণে কম ব্যয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে অনেক ব্যাবহারকারী এখনও সন্তুষ্ট নন। বিশেষ করে গাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং গাড়ি কতটা দুর্ঘটনা প্রতিরোধী সেসব নিয়ে উদ্বিগ্নতা রয়েছে। তাছাড়াও দীর্ঘ মহাসড়ক পাড়ি দিতে সক্ষম কিনা সেটা নিয়েও সন্দিহান অনেকেই। প্রথমদিকে গাড়িগুলো এক চার্জে ১০০ মাইলের বেশি চলতে পারত না। প্রযুক্তির ফলে সেটা এসে দাঁড়িয়েছে ২০০-৩৩০ মাইলে। ডিজেলচালিত গাড়ির তেলের ট্যাংক সম্পূর্ণ ভর্তি করে এই দুরত্বের চেয়ে খানিকটা বেশি যাওয়া যায়। আরেকটি বড় সমস্যা হলো গাড়ির চার্জিং এবং চার্জ সম্পন্ন হবার সময়। ২০১১ সালে ব্রিটেনে এক হাজারের কম হাইব্রিড গাড়ি ছিল। বর্তমানে ব্রিটেন ১৫৫০০০ এর বেশি হাইব্রিড গাড়ি চলাচল করছে এবং প্রতি মাসে রাস্তায় ৪৫০০ নতুন গাড়ি নামছে। কিন্তু এদের জন্য চার্জ পয়েন্ট মাত্র ১৭৪০০ এর কিছু বেশি। ২০২০ সাল নাগাদ চীন ৪ মিলিয়নের বেশি চার্জিং পয়েন্ট তৈরি করার কথা ভাবছে যেগুলো হবে জনগণের জন্য উন্মুক্ত। ২৪০ বা ৪৮০ ভোল্টের এসব পয়েন্টে ২০-৩০ মিনিটে চার্জ সম্পন্ন করা যাবে বলে আশাবাদী সরকার। হাইব্রিড গাড়িতে এখনও বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তবে এসব ছাপিয়ে দিনে দিনে জনপ্রিয় উঠছে এই ধরনের গাড়ি। হাইব্রিড গাড়ির ছোঁয়া লেগেছে বাংলাদেশেও। দেশেও ক্রমে জনপ্রিয় হচ্ছে হাইব্রিড গাড়ি। পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে সব ক্ষেত্রেই দূষণমুক্ত প্রযুক্তি আসবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
×