ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিজ্ঞানী অপুর একদিন

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ১২ জানুয়ারি ২০১৯

বিজ্ঞানী অপুর একদিন

বিজ্ঞানী হিসেবে অপুর নাম গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। নিজের গ্রাম ছেড়ে আশপাশের গ্রামেও। লোকে বলে, ‘অপু বিজ্ঞানী হয়ে গেছে। বড় বিজ্ঞানী।’ অবশ্যই নাম ছড়িয়ে যাওয়ার পেছনে যথেষ্ট কারণও আছে। চুম্বক কীভাবে লোহাকে টেনে নিয়ে আসে তা দেখিয়ে গ্রামের ছেলেবুড়োকে হতবাক করে দিয়েছে। তারপর একদিন চুলে চিরুনি ঘষে বিদ্যুত উৎপাদন করে কাগজের টুকরোকে টেনে আনার জাদুও দেখাল। এসব দেখে তিতপাখি গ্রামের মানুষের তাকে বিজ্ঞানী না ভাবার উপায় নেই। ছেলেরা বলাবলি করে, অপু আইনস্টাইন আর নিউটনের চেয়ে বড় বিজ্ঞানী হতে পারে। সম্ভাবনাটা উড়িয়ে দেয়া যায় না। আইনস্টাইন আর নিউটন খগেনের বয়সে বিজ্ঞানের কিছুই বুঝতেন না।’ এসব আলোচনা তিতপাখি গ্রামের অনেকেই করে। এসব আলোচনা এখানেই শেষ হলে ভাল হতো। কিন্তু অপুও কম যায় না। যেখানে-সেখানে বিজ্ঞানের লেকচার দেয়। তা ঘরই হোক কিংবা ক্ষেত-খামারেই হোক না কেন। আজ সকালেই তার ছোট বোন তাপতীকে বলল, ‘শুধু ডিম আর দুধ খেয়েই ভিটামিন ডি-এর অভাব পূরণ করা সম্ভব না। গায়ে রোদও লাগাতে হবে। রোদেও প্রচুর ভিটামিন ডি আছে। নে, আমার ডিমটাও খেয়ে নে। এটা খেয়ে চল আমার সঙ্গে।’ তাপতী বলল, ‘তোমার সঙ্গে কোথায় যাব?’ ‘রোদে হাঁটতে। ভিটামিন ডি-এর জন্য গায়ে রোদ লাগাতে হয়।’ ‘আমি যাব রোদে? আমার ফর্সা ত্বকের বারোটা বাজাতে, না? তুমি যাও।’ ‘আরে বোকা! ভিটামিন ডি-এর অভাবে রিকেট রোগ হয়। রিকেট। চিনিস এটা কী?’ ‘নট, সুগার নট। মানে, চিনি না।’ অপু সুন্দর করে বোঝায়, ‘ভিটামিন ডি-এর অভাবে হাড় নরম হয়। তখন হাড় চেপ্টা হয়ে যায়। আর মানুষ এভাবে হাঁটে।’ অপু অভিনয় করে দেখায়। অভিনয়টা ভালই করেছে। তাতে কাজ হয়নি। অপুর অভিয়ন দেখে তাপতি হেসেছে বটে, তবে সাফ সাফ জানিয়েও দিয়েছে সে রোদে যাবে না। অপু কি আর সহজে ছেড়ে দেয়ার পাত্র? নাশতা খাওয়া শেষ করে তাপতীর হাত ধরে টানতে শুরু করে। বলে, ‘আমার সঙ্গে আয়। তোকে রোদ লাগিয়ে নিয়ে আসি।’ তাপতী চেঁচিয়ে ওঠে। তাপতীর চেঁচানোর শব্দ শুনে মা এসে হাজির। ‘কী হচ্ছে রে অপু?’ ‘তাপতীকে ভিটামিন ডি খাওয়াতে নিয়ে যাচ্ছি। ও ছোট মানুষ, রোদে যাওয়া দরকার।’ অপুর কথা শুনে মা হাসে। ‘তুই খুব বড় হয়ে গিয়েছিস, না?’ ‘অবশ্যই। আমি পড়ি ফাইভে আর কেবল থ্রিতে।’ মা আবারও হেসে বলল, ‘থাক। ওর রোদে যেতে হবে না। তুই যা।’ অপু তখন মুখ ভার করে বসে থাকে। তারপর মাকে আরও কিছু কথা বলল, তাতেও কাজ হয়নি। অপুর লেকচারের এমন আরও অনেক ঘটনাই আছে। তবে আসল গল্পটা বলি। একদিন মাতবর সাহেবের পুকুরের সব মাছ পানির উপরে ভেসে ওঠেছে। মুখ হাঁ করে খাবি খাচ্ছে। মাতবর সাহেব চিন্তায় পড়ে গেলেন। এতগুলো মাছ কি মরে যাবে? মাতবর সাহেবের ছেলে রবু পাশেই ছিল। সে বলল, বাবা, অপু বিজ্ঞানীকে ধরে আন, ‘একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’ মাতবর সাহেবও অপুর কথা আগে শুনেছেন। তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ। ওকে পাকড়াও করা হোক।’ মাতবর সাহেবের ছেলে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে অপুকে হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসে কিছুক্ষণের মধ্যেই। এভাবে ধরে আনার জন্য অপু হতবাক। কী হতে কী হয়েছে কে জানে? বিপদের গন্ধ পাচ্ছে সে। অপু মাতবর সাহেবের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়াল। মাতবর সাহেব অপুর দিকে তাকিয়ে হাসছেন। তারপর বললেন, ‘বাবা অপু, আমার পুকুরের মাছ সব ভেসে খাবি খাচ্ছে। এর একটা বিহিত কর, বাবা। শুনলাম তুমি নাকি বিজ্ঞানী হয়ে গেছো!’ অপু যে বিপদের গন্ধ পাচ্ছিল এখন সে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। যাক, সে বিজ্ঞানী মানুষ। হাল ছাড়েনি। আকাশের দিকে তাকায়। আকাশ মেঘলা। গতকালও আকাশ মেঘলা ছিল। ভাবতে ভাবতে অপুর বুদ্ধি খুলে যায়। সে বলল, চাচা, পেয়ে গেছি। সে পুকুরে নেমে হাতের আজলায় পানি নিয়ে পরখ করে। বেশ শ্যাওলা। অপু বলল, ‘চাচা, আপনার পুকুরের পানিতে অক্সিজেনের অভাব হয়েছে। আকাশ মেঘলা থাকাতে পর্যাপ্ত সূর্যালোক না থাকায় পানির ভেতরের উদ্ভিদ কণা অক্সিজেন তৈরি করতে পারছে না। তাই মাছগুলো পানির উপরে ভেসে অক্সিজেন নিচ্ছে।’ মাতবর সাহেব বললেন, ‘বাহ, বাবা তুমি সত্যি বড় বিজ্ঞানী। তবে আমি এসব জ্ঞানের কথা বুঝি না। আগে ওষুধ দাও। আমার মাছ বাঁচাও।’ অপু বলল, ‘ওষুধ দিতে হবে না। পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এ জন্য হররা টানেন। বাঁশ দিয়ে পানিতে পিঠান। ছেলেমেয়েদের বলেন পুকুরে সাঁতার কাটতে। ঠিক হয়ে যাবে।’ অপুর কথা মতো ছেলেরা শুরু করে দিল কাজ। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভাসমান মাছগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেল। মাতবর সাহেব বেজায় খুশি। তিনি অপুকে পুরস্কৃত করলেন। এখন মাতবর সাহেবই প্রচার করতে লাগলেন, ‘অপু সত্যি সত্যি বিজ্ঞানী হয়ে গেছে।’ অপুর বিজ্ঞানী হওয়ার বিষয়টি আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। অলঙ্করণ : প্রসূন হালদার
×