ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিম চাষে কৃষকের মুখে হাসি

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ১২ জানুয়ারি ২০১৯

  শিম চাষে কৃষকের মুখে হাসি

সদরপুর উপজেলার সবজি চাষীদের চোখে-মুখে এখন তৃপ্তির হাসি। বিষণ্ণতা ছাপ অনেকটাই ম্লান হয়েছে তাদের শীতকালীন শিম চাষের মধ্য দিয়ে। সাধারণত শীতকালে শিম চাষ করেন সবজি চাষীরা। এবার এ এলাকায় নতুন ‘বারি-৪’ ও ‘ইপসা-১’ জাতের শিমের ফলন ভাল হয়েছে। শীতকালে চাষে ফলন ও দাম-দুটোই তারা পেয়েছেন ভাল। এ কারণে সবজি চাষীরা এবার ভীষণ খুশি বলে জানিয়েছেন তারা। সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের শৌলডুবী এলাকা ঘুরে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রত্যেক চাষীর জমিতে প্রচুর শিমের মাচা। ছড়ায় ছড়ায় ঝুলছে শিম। ওই এলাকার সবজি চাষী আলম বেপারি (৪৮) নিজেকে একজন সফল শিম চাষী হিসেবে গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সারাদিন শিমের মাচায় হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে বিক্রির পাশাপাশি বীজ উৎপাদন করছেন। আলম বেপারি জানান, গত বছর তিনি ৬ হাজার টাকা খরচ করে মাত্র ২০ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করে প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করেছেন। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে চলতি মৌসুমে ১৮-২০ হাজার টাকা খরচে ৬৫ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল শিমের চাষ করেন। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ শুধু বীজ উৎপাদনের জন্য এবং বাকি ৩৫ শতাংশ জমির শিম সবজি হিসেবে গত এক মাস ধরে বাজারে বিক্রি করছেন। চলতি মৌসুমে সদরপুর উপজেলার জেলার ৬টি ইউনিয়নে শীতের সবজি শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইউনিয়নগুলো হলো কৃষ্ণপুর, সদরপুর, চরবিষ্ণুপুর, চরনাছিরপুর, ভাষাণচর ও আকোটেরচর। প্রতিটি এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত মণ শিম বিক্রি হচ্ছে। চাষীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সদরপুরের এই ফরিদপুর শহর, ঢাকা শহরের কাওরান বাজার, শ্যামবাজার, ঢাকার দোহার উপজেলার জয়পাড়া, মাদারীপুর, ফরিদপুরের বোয়ালমারীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সদরপুরের শিমের ভাল চাহিদা। অধিকাংশ শিম ক্ষেত থেকে তোলার পর বাড়ির উঠানে বা সড়কের পাশে স্তূপ করা হচ্ছে। পরে স্তূপ করা শিম বস্তায় ভরে ওজন দিয়ে মণ হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। ক্ষেত থেকে তুলে আনা শিম বাজারে পাইকারি ও খুচরা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। পাইকাররা স্থানীয় হাট-বাজার থেকে শিম ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করছেন। উপজেলার ভাষাণচর ইউনিয়নের কারীরহাট গ্রামের আব্দুল মালেক মোড়ল (৩৯) জানান, এ বছর তিনি ৯ হাজার টাকা খরচ করে ৩৩ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই তার পুঁজি উঠে গেছে। বিক্রিও হয়েছে বেশ ভাল। একই গ্রামের আরেক চাষী ইউনুছ খালাসী (৫৪) জানান, ভালভাবে শিম ক্ষেতের পরিচর্যা করেছিলাম। যে টাকা খরচা হয়েছিল তার চেয়ে অধিক লভ্যাংশ হয়েছে। আগামীতে আরও বেশি চাষাবাদ করব। উপজেলার চরবিষ্ণপুর ইউনিয়নের কৃষক খবির উদ্দিন (৪৫) জনান, এ বছর তিনি ৩০ শতাংশ জমিতে শিমের চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে বেশ ভাল। ওই গ্রামের আরেক সবজি চাষী জোনায়েত আলী (৪৮)। তিনিও প্রায় ৩৩ শতাংশ জমিতে শীতকালীন শিম চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এই বছর পোকা-মাকড়ের উপদ্রব কম। অন্য মৌসুমবাদে শীতকালীন সময়ে শিম চাষের চেয়ে শিম চাষে রোগবালাই অনেকাংশে কম। তাই ওষুধ ও সার খরচও কম। এ সময় শিমের বাজারদামও ভাল। প্রতিকেজি শিমের পাইকারি মূল্য পেয়েছি ১৫ থেকে ২০ টাকা। প্রতি মণ শিম ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। উপজেলার চরনাছিরপুর ইউনিয়নের সবজি চাষী আব্দুর রাজ্জাক করিম (৪২) বলেন, শ্রাবণ মাসের প্রথম দিকে এই শিমের বীজ বপন করতে হয়। চারা বের হওয়ার ২৫ থেকে ৩০ দিনের মাথায় গাছে ফুল আসা শুরু হয়। দেড় মাস বয়সের গাছ থেকে শিম তোলা শুরু হয়। তিন থেকে চার দিন পর পর শিম তুলে আমরা বিক্রি করি। তিনি বলেন, আমরা অনেকেই এর আগে সবজি চাষ করে দাম না পেয়ে ঋণে জর্জরিত ছিলাম। এখন আমরা অনেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছি। উপজেলার শৌলডুবী গ্রামের কৃষক শুক্কুর আলী (৫২) জানান, গত কয়েকমাস পূর্বে অবিরাম বর্ষণে তাদের ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। আর তাই এ ক্ষতিকে পুষিয়ে নিতে তিনি বেশ জমিতে শিমের চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে তিনি তার জমি থেকে উৎপাদিত প্রায় ৪০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছেন। এ বছর আবহাওয়া ও পোকা-মাকড়ের উপদ্রব না থাকায় শিম চাষীরা ব্যাপক আনন্দে রয়েছে। আকোটেরচর ইউনিয়নের সোবাহান মুন্সী (৪৬) জানান, ইতোমধ্যে তিনি তার জমিতে উৎপাদিত ২০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছেন। দামও পেয়েছেন ভাল। এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, শীতের আগাম বার্তায় কুয়াশায় ভেজা ভোরের আলোতে শিম ক্ষেতে কাজ করছেন কৃষক কৃষাণিরা। সদরপুর অঞ্চলের অধিকাংশ কৃষক এবার বেশি করে শিম চাষ করেছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও ঢাকাসহ দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে এ শিম সরবরাহ করা হয়ে থাকে। সদরপুর কৃষি কর্মকর্তা বিধান রায় জানান, শিম প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি সবজি। এর বিচিও সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। তাই দেশে এর চাহিদা ব্যাপক। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। শিম চাষীরা বেশ লাভবান হবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, এ বছর উপজেলার ৩৫০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে শিমের চাষ করা হয়েছে ৯০ হেক্টর জমিতে। -অভিজিৎ রায়, ফরিদপুর থেকে
×