ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বৃদ্ধ কালামের বেঁচে থাকার লড়াই

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ১২ জানুয়ারি ২০১৯

বৃদ্ধ কালামের বেঁচে থাকার লড়াই

আত্মসম্মান জলাঞ্জালি দিয়ে সাহায্যের জন্য অন্যের দুয়ারে দুয়ারে ছুটে চলা স্বাভাবিক পন্থা। কিন্তু এর ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জের রানীহাটি বাজারের ৭০ বছরের বৃদ্ধ মোহাম্মদ কালাম। সংসার জীবনে স্ত্রীসহ ২ ছেলে ও মেয়ে রয়েছে তাঁর। মেয়ে লেখাপড়া করছে আর সবার বিয়ে হয়ে যে যার মতো সংসার নিয়ে ভালই আছে। কিন্তু সে সব সন্তান খোঁজ রাখে না বৃদ্ধ মা-বাবার। তাই ভিক্ষার ঝুলি হাতে না নিয়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা মিলেই শুরু করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্য কলাই রুটি বিক্রি। ফেরি করে কলাই রুটি বিক্রি মনে হয় রানীহাটিতেই দেখতে পাওয়া যাবে। অন্য কোথাও নয়। গত শনিবার সন্ধ্যার পর রানীহাটি বাজারে চোখে পড়ে এক বৃদ্ধ ডালি কোমরে নিয়ে কি যেন বিক্রি করছে। সেটা আবার গরম কাপড় দিয়ে পুরোটা ঢাকা। কৌতূহল বাড়তেই লক্ষ্য করলাম বৃদ্ধ কালাম কোমরের ডালিটা টেবিলে নামিয়ে ওপর থেকে কাপড়টা সরাতেই বেরিয়ে আসল গরম গরম প্রায় ২০ থেকে ২৫টি কলাই রুটি। সঙ্গে তেল, লবণ, পেঁয়াজও থাকে। দাম ১০ টাকা প্রতি রুটি। এবার বুঝতে পারলাম ডালির ওপরটা কেন গরম কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। রুটি গরম রাখার প্রাকৃতিক নিয়ম। প্রশ্ন করলাম কলাই রুটি বিক্রি করে সংসার, জীবন-যাপন কেমন চলছে। মুখ ভর্তি পাকা দাড়ি মুখটা আমার দিক করে বলল, জি বাবা কলাই রুটি বিক্রি করেই সব চলছে। সকালে আর সন্ধ্যায় ফেরি করে বাজারের আশপাশেই ঘোরাঘুরি করি। আল্লাহর রহমত সব বিক্রি হয়ে যায়। রুটি কে তৈরি করে জানতে চাইলে বৃদ্ধ মোহাম্মদ কালাম জানান, বাড়িতে আমার স্ত্রী রুটি বানায় আর আমি বাজারে বিক্রি করি। দু’জনের পরিশ্রমে জীবনে বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধ এভাবেই করছি। ছেলেরা কিছু দেয় না বলতেই, তিনি বললেন, ওরা যে যার মতো আছে। আমাদের দু’জনের কেউ খোঁজ নেয় না। তাই তো এ বয়সেও খেটে রোজগার করছি। রোজগার করতে পারার মধ্যে আলাদা আনন্দ আছে। -ডিএম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে
×