ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘সায়েন্স’ সাময়িকীর গবেষণা প্রতিবেদন

শতাব্দীর শেষ নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে ৩০ সেমি

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ১২ জানুয়ারি ২০১৯

 শতাব্দীর শেষ নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে ৩০ সেমি

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ পূর্ববর্তী হিসাবের চেয়েও দ্রুততর গতিতে উষ্ণ হচ্ছে বিশ্বের সমুদ্রগুলো। এতে বিশ্ব আবহাওয়া চরম পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ শতাব্দীর শেষ নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার বেড়ে যেতে পারে। ১০ জানুয়ারি সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন আভাস দেয়া হয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের। নতুন প্রতিবেদনটি তৈরি করার ক্ষেত্রে ২০১৪-১৭ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত হওয়া চারটি গবেষণা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে সামুদ্রিক তাপমাত্রাজনিত বিভিন্ন পরিমাপ ও এগুলোর মধ্যকার তারতম্যজনিত গোলযোগগুলো সংশোধন করা হয়েছে। সমুদ্রের ওপর জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাব নির্ণয়ের জন্য অতীতের গবেষণাগুলোতে স্যাটেলাইট মনিটরিং, পানিতে ব্যবহারযোগ্য রোবট ও জাহাজের সহায়তা নেয়া হয়েছে। গত দশকে আরগো নামে ৪০০০ রোবটের একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সমুদ্রের তাপমাত্রা, লবণাক্ততা ও অম্লকরণের নজিরবিহীন তথ্য পাওয়া গেছে। ভিন্ন ভিন্ন মেথডলজি ব্যবহার করে করা চারটি গবেষণা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেছেন গবেষকরা। নতুন বিশ্লেষণে সামুদ্রিক উষ্ণতার পূর্ণাঙ্গ চিত্র তৈরি করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা। নতুন প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সমুদ্রগুলো এত বেশি পরিমাণ উষ্ণতা শুষে নিতে পারে যে সেগুলো ঠা-া হতে কয়েক দশক লেগে যাবে। তাছাড়া উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমন সহসা বন্ধ হওয়ারও কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সমুদ্রের উষ্ণতা ক্রমাগত বাড়ছে। গবেষক জেকে হাউসফাদার বলেন, ‘পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠে উষ্ণতার মাত্রার রেকর্ড অনুযায়ী ২০১৮ সাল ছিল চতুর্থ উষ্ণতম বছর। আর সমুদ্রের উষ্ণতার রেকর্ড বিবেচনা করলে এটি নিশ্চিতভাবে উষ্ণতম বছর। এর আগে, সমুদ্রের উষ্ণতার দিক দিয়ে ২০১৬ সাল ও ২০১৭ সালও উষ্ণতম বছর বিবেচিত হয়েছিল। ভূপৃষ্ঠ বেশি উষ্ণ হচ্ছে নাকি সমুদ্র বেশি উষ্ণ হচ্ছে তা বৈশ্বিক উষ্ণতা দিয়ে সহজে শনাক্ত করা যায়।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রীন হাউস গ্যাসের কারণে বায়ুম-লে যতটুকু অতিরিক্ত এনার্জি আটকে থাকে তার দশ ভাগের ৯ ভাগেরও বেশি অংশ সমুদ্র শুষে নেয়। বিশ্বের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তা বড় ভূমিকা রাখে। গবেষকদের দাবি, সমুদ্র উষ্ণ হওয়ার কারণে সেখানকার পানির থার্মাল এক্সপানশন হবে। এতে পানির আকার আয়তন বেড়ে যাবে, এর জন্য বেশি জায়গার প্রয়োজন হবে। এ কারণে এ শতাব্দীর শেষ নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩০ সেন্টিমিটার বেড়ে যেতে পারে। তবে বিশ্বের জলবায়ু ব্যবস্থায় অনেকদিন পর্যন্ত সমুদ্রের ভূমিকাকে বিবেচনায় নেয়া হতো না। পর্যাপ্ত তথ্যের ঘাটতি ও সামুদ্রিক পরিবেশে গবেষণাজনিত জটিলতার কারণে তা সম্ভব হতো না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের পুরোপুরি গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন। সম্প্রতি প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস সাময়িকীতে সমুদ্রের উষ্ণতাবিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে গবেষকরা দাবি করেন, মানুষ কর্তৃক গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গত করার মধ্য দিয়ে যতটুকু যে পরিমাণ উষ্ণতা তৈরি হয় তার ৯০ শতাংশেরও বেশি সমুদ্রগুলো শুষে নেয়। আর বাকি সামান্য উষ্ণতা বাতাস, ভূমি ও মেরু অঞ্চলের বরফ খ-কে উষ্ণ করে। যে বিপুল পরিমাণ এনার্জি সমুদ্রে যুক্ত হচ্ছে তা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে আরও শক্তিশালী রূপে হাজির হচ্ছে হারিকেন ও টাইফুন। গবেষণায় সমুদ্রের সঞ্চালন সংক্রান্ত কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে ১৮৭১ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সমুদ্রের পৃষ্ঠভাগের তাপমাত্রার পরিমাপগুলোকে সমন্বিত করা হয়েছে।
×