ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মমতাজ লতিফ

কেন জয়? কেন পরাজয়?

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১২ জানুয়ারি ২০১৯

কেন জয়? কেন পরাজয়?

৩০ তারিখের নির্বাচনের ফল যা হওয়ার কথা ছিল তাই হয়েছে। আওয়ামী লীগ যে ল্যান্ডস্লাইড বিজয় অর্জন করবে তা তো দেশী-বিদেশী জরিপের ফলেই জানা গিয়েছিল। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি সফল, দক্ষ, সৎ, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে যখন দেশকে সব ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নয়নের পথে অগ্রসর করে চলেছে তখন মহাজোট সরকারের পাশে বিএনপি দল ও এর নেতা-নেত্রীদের ভূমিকার তুলনা সঙ্গতভাবেই এসে পড়ে। ফলে নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগ জাতি ও দেশের কল্যাণে কৃত নানামুখী নানা ক্ষেত্রের কাজে ঈর্ষণীয় সাফল্য নিয়ে জ্বলজ্বল করছে। অন্যদিকে বিএনপি দলটির জাতির জন্য কল্যাণকর কোন কাজের কৃতিত্ব তো নেই-ই, বরং দেশ-জাতি-রাজনীতি বিধ্বংসী কাজ- যেমন যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষক হয়ে ওঠা, দেশকে জঙ্গী রাষ্ট্রে পরিণত করতে জঙ্গী দলের জন্মদান, আশ্রয়-প্রশ্রয় দান, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের রক্ষাকারী হয়ে ওঠা। শেষপর্যন্ত একদিকে ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে জোট গঠন করে তাদের মন্ত্রিত্ব প্রদান যে দেশের জন্মের তারা ছিল শত্রু! উপরন্তু বিরোধী দলের রাজনীতি ধ্বংস করার লক্ষ্যে হাওয়া ভবনে গৃহীত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, এর আগে আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা, ২০০৫-এ সফল অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকা-সহ প্রায় বিশ হাজারের বেশি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী-সমর্থক হত্যা, হিন্দুদের আওয়ামী লীগের ভোট গণ্য করে তাদের ওপর পরিচালিত হত্যা, লুট, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, জীবিকা ধ্বংস, দেশত্যাগে বাধ্য করা, নিজ দেশের সাধারণ নাগরিক- বাস, ট্রাক, সিএনজি চালক ও যাত্রী নারী, পুরুষ, কিশোর, শিশুদের পেট্রোলবোমায় দগ্ধ করে হত্যা, রাজপথ, বৃক্ষ ধ্বংস এবং মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ চেতনাবাহী রাষ্ট্রকে পাকিস্তানী ধর্মান্ধ ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রচেষ্টা, জঙ্গীদের দিয়ে আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক উদার প্রগতিশীল কবি-সাহিত্যিক-ব্লগার-লালন-সাধক-অধ্যাপক,সাংবাদিক হত্যার যে চিত্র ফুটে ওঠে তাকে বাঙালী জনমানুষ পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করবে- এটি খুবই স্বাভাবিক। সুতরাং এটিই নির্বাচনে ঘটেছে। তাছাড়া, বিদেশী সরকার ও রাষ্ট্রগুলোকে এই নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানে উস্কানি দিয়ে পৃষ্ঠাজুড়ে যে সংবাদপত্রটি তারেক-খালেদার প্রতিহিংসার দানবীয় রাজনীতিকে রক্ষা করতে চেয়েছে, তারা কিভাবে এতটা অবিবেকী খালেদা-তারেকের দুর্বৃত্তায়িত অপরাজনীতির দোসর হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করল, তা ভেবে বিস্ময়বোধ করি। ভাবছি এই নেতিবাচক টুইস্ট করা সব খবর প্রকাশ করেও তারা কি এদেশে একইরকম দাপটের সঙ্গে বাস করবে? যাহোক, প্রশ্ন উঠেছে আওয়ামী লীগ কেন, কিভাবে, কি কারণে এত ভোট লাভ করল? তাদের এত বিপুল সংখ্যক প্রার্থী কেন বিজয়ী হলো? কারণ- ১. আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের ম্যানিফেস্টো, মহাজোট সরকারের ২০০৮-এ জাতিকে দেয়া অঙ্গীকারগুলো দ্রুত গতিতে বাস্তবায়ন, যা জনগণ বাস্তবে দেখতে পাচ্ছে। ২. তরুণ প্রজন্মকে ডিজিটাল প্রজন্মে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়াটি দৃশ্যমান এবং তরুণ-তরুণীরা সরকার প্রদত্ত প্রযুক্তির দ্রুত সদ্ব্যবহার করে সরকারের ওপর আস্থাবান হয়েছে। সুতরাং তারা আওয়ামী লীগকে ভোট না দিয়ে আর কোন্ দলকে দেবে? এবারের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত দুই কোটি নতুন ভোটার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশকে ভালবেসে আওয়ামী লীগকে ভোট না দিয়ে তারা কেন নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারার জন্য যুদ্ধাপরাধী-জঙ্গী মিত্র বিএনপিকে ভোট দেবে? ৩. আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের মহাজোট সরকারের একমাত্র লক্ষ্য ছিল- যে বাংলাদেশকে ’৭১ থেকে ৭৫-এ, ’৭৫ থেকে ২০০১, ২০০৪-৫-এ, ২০১৪-১৫তে ধ্বংস করে দিতে উদ্যত জামায়াত-বিএনপি, বঙ্গবন্ধুর খুনী ও জঙ্গীদের হাত থেকে উদ্ধার করে বিগত দশ বছরে অর্থনীতি, শিল্প, বাণিজ্য, রাজপথ, উড়ালপথ, ব্রিজ, রেলওয়ে, কৃষি, খাদ্য, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি, জ্বালানি, বিদ্যুত- প্রতিটি ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য গতিতে যে উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে সেই চলমান গতিকে অব্যাহত রাখতে প্রতি ক্ষেত্রের পেশাজীবী-কর্মজীবী শ্রেণী বর্তমান সরকারকে ভোট দেবে না- তা কি সম্ভব? বিশেষত যেখানে এই সরকারের বিপরীতে যে দলটি রয়েছে সে তো যুদ্ধাপরাধী-খুনী ও জঙ্গীবাদের মিত্র, তাকে ভোট দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ৪. গত এক মাসে জাতি দেখেছে- ‘অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তার দল, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার দল, সাবেক প্রশাসক দল, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তারের দল, শিক্ষক দল, সাবেক নৌ ও বিমান কর্মকর্তা দল, মুক্তিযোদ্ধাদের দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে একাত্মতা ও সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার করেছে। যারা সবাই, তাদের পরিবারবর্গের সদস্যরা আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে’- এটা তো আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং লাখ লাখ ভোট মহাজোট লাভ করবে তাতো তখনই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। ৫. তাছাড়া, মহাজোট এবং আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হাসিনার দ্বারা বিভিন্ন সময়ে উপস্থাপিত জনমানুষের জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ইতিবাচক প্রস্তাব, সুপারিশ উচ্চ প্রশংসিত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার জঙ্গীবাদের প্রতি জিরো টলারেন্স, দারিদ্র্য হ্রাস, শিক্ষা বৃত্তি, গবেষণা বৃত্তি, গার্মেন্টসের পরিবেশ উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক পলিসি বাস্তবায়নে ইতিবাচক সক্রিয়তা, সর্বোপরি তার সততা প্রশংসা লাভ করে তাকে বিশ্বের নেতাদের মধ্যে উর্ধে স্থান দিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত, প্রতিহিংসামূলক, নাশকতামূলক অপরাজনীতির হোতা ও প্রশ্রয়দাত্রী খালেদার অনেক ওপরের মানে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাকে, তার অধীনস্থ জোটকে বিপুল ভোট পেতে দেখে পশ্চিমারা বিশ্ব রাজনীতিতে ও বিশ্ব নেতৃত্বে তার গুরুত্বকে অস্বীকার করতে পারে না। শেখ হাসিনার কর্মতৎপরতা, দূরদৃষ্টি, এর সফলতা আর যার সঙ্গেই হোক খালেদা জিয়ার সঙ্গে তুলনীয় নয়, এ কথা বিগত দশ বছরে প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই- এ কথা পশ্চিমারা উপলব্ধি করেছে বলেই মনে হয়। তাহলে জনগণ তাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে- এটিই কি প্রত্যাশিত নয়? ৬. তাছাড়া নির্মূল কমিটি জাতীয় মানবাধিকার সংস্থার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে এবারের নির্বাচনে হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ, শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সারাদেশে নব্বইটির মতো হিন্দু অধ্যুষিত স্থানে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনে সক্রিয়ভাবে সারাদেশ ঘুরে জনমত গঠন করেছে। এবারই প্রথম হিন্দু ভোটাররা নিরাপদে ভোট দিতে সক্ষম হয়েছে। তাছাড়া, ২০০৮-এর নির্বাচনের মতো ’৭১-এর ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধপন্থী দলের প্রার্থীদের ভোটদানের জন্য জনমত তৈরির লক্ষ্যে সভা, সমাবেশ করেছে। তাদের স্লোগান ছিল- সংসদকে যুদ্ধাপরাধীমুক্ত রাখতে হবে। ৭. সারাদেশের কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণী আওয়ামী লীগকে ভোট না দিয়ে কি বিএনপিকে ভোট দিতে পারে? তাদের লাখ লাখ সদস্য আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে তাতে সন্দেহ কি? ৮. সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা তো শেখ হাসিনার প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন, প্রচারে অংশগ্রহণ করেছেন- তারা তো ভোট দিয়েছেই। তাছাড়াও মনে রাখতে হবে- এবার সরকারী মাদ্রাসা এবং কওমী মাদ্রাসার নেতা মৌলানা শফী তাদের ধর্মীয় শিক্ষাকে শেখ হাসিনা কর্তৃক সাধারণ শিক্ষার সমমানে উন্নীত করার ফলে এই নির্বাচনে মাদ্রাসা শিক্ষাগ্রহণরত কয়েক লক্ষ্য শিক্ষার্থী ও তাদের শিক্ষকদের কাছে ভোট প্রদানের জন্য ধর্মভীরু শেখ হাসিনা ছাড়া আর কি কোন বিকল্প ছিল? বলতে বাধা নেই এই ক্ষেত্রে লাখ লাখ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের ভোট শেখ হাসিনাই লাভ করেছেন! আমরা ভুলিনি- হেফাজত কর্তৃক সাধারণ শিক্ষার শিক্ষাক্রমকে ‘মুসলমানী’ করার সেই উদ্যোগ। আশা করছি- এটি আবার আগের রূপে ফিরে এসেছে এবং আসবে। কেননা, কওমী শিক্ষার সনদ যদি প্রাচীনপন্থী শিক্ষাক্রমের ওপরই হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা সনদ যদি লাভ করেও তবু তারা সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের সমান জ্ঞান, মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি আয়ত্ত না করতে পারলে জীবনের প্রতিযোগিতায় তারা তো পিছিয়ে পড়বেই! সুতরাং দেখা যাচ্ছে, সমাজের সব পেশার এক শ’ মানুষের মধ্যে নব্বইজনেরই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দল ও জোটকেই ভোট দেয়ার কথা। সেটিই ঘটেছে। ৯. এবার ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় আওয়ামী লীগ সরকার ও শেখ হাসিনার দেশের সব ক্ষেত্রের উন্নয়নের ওপর ভিত্তি করে যে সব প্রচারমূলক বিজ্ঞাপন- ‘থ্যাংক ইউ পিএম, ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী’ এই স্কিটগুলো খুবই মানসম্মত, সংযত এবং আবেদনময় হয়েছে, যা মানুষের মনকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাবিত করেছে। এবার বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থানের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক- ১. বিএনপি দলটির জন্মদাতা জিয়া দলটিকে জামায়াতের বি টিম হিসেবে জন্মদান করেছিল। অর্থাৎ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-আদর্শের বিপরীতে বিএনপি ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার্থে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রবর্তন করে তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়। যে নীতিটি পরে খালেদা-তারেকও বজায় রেখে দলটি পরিচালনা করেছে। এর ফলে সমাজের মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের এবং তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হলে যুদ্ধাপরাধীর বিচার কাজ যেটি মহাজোট সরকার ২০১০-এ শুরু করেছিল, সেই বিচারের দাবির ন্যায্যতার পক্ষে সমাজে নতুন এক জোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল, যার দ্বারা তরুণ প্রজন্ম প্রভাবিত হয়েছে। অথচ, বিএনপি সে সময় হেফাজত ও জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে মিলে সরকার পতনের আন্দোলনের নামে যে ধ্বংসযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতা সংঘটিত করে, তার ফলে বিএনপি প্রত্যক্ষভাবে অপরাজনীতি ও নাশকতাকারী হিসেবে সমাজের সব শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে চিহ্নিত হয়ে যায়! প্রমাণিত হয় বিএনপি আসলে যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গী ও মৌলবাদীদের সুরক্ষা, আশ্রয়-প্রশ্রয়দানকারী দল, যারা ক্ষমতায় বসলে জামায়াত-জঙ্গীরা ক্ষমতাবান হয় এবং দেশ পাকিস্তানমুখী যাত্রা করে! ২. বিএনপি ক্ষমতায় এলে কি কি হয় এ তো প্রত্যক্ষভাবে জনগণ ২০০১-২০০৬, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫-তে দেখেছে। অন্তত খালেদা-তারেকের বিএনপি যে নিখুঁতভাবে ’৭১-এর জামায়াতের নীল নকশা অনুসরণ করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করা, প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক, প্রকাশক এবং বাঙালী সংস্কৃতির উৎসব-অনুষ্ঠান, যাত্রাপালা ও হিন্দু-আদিবাসীদের হত্যা এবং নির্মূলের কাজটিই বাস্তবায়ন করে তা তারা বারবার প্রমাণ করেছে। তারা জামায়াতের বি টিম। তাদের পেট্রোলবোমা ও ধ্বংসাত্মক অবরোধ দেখার পর তারা কেন ভোট পাবে এ প্রশ্নটি জনগণের মনে না উঠে পারে না। তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জোয়ারে ভাসা জনগণ কি ভোট দেবে? কেন দেবে? খালেদা-তারেকের বিএনপি তো জামায়াতের মতোই টেররিস্ট সংস্থা নামে বিদেশে চিহ্নিত হয়েছে! ৩. যখন বিএনপির দু’জন নেতা-নেত্রী দুর্নীতির দায়ে এবং ২১ আগস্টে একটি রাজনৈতিক দলকে নেতৃত্বশূন্য করার লক্ষ্যে হত্যাকান্ড ঘটানোর জন্য দন্ডিত আসামি হয় তখন ঐ দন্ডিত নেতৃত্বের হাত থেকে দলকে রক্ষা করে নতুন গণতান্ত্রিক ও ইতিবাচক রাজনীতি চর্চাকারী দল হিসেবে গড়ে তোলার একটি বড় সুযোগ এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এসেছিল। উপরন্তু, ড. কামাল হোসেনের অধীনে ঐক্যফ্রন্টকে জামায়াত-মৌলবাদী মুক্ত রাখার একটা সুযোগ গ্রহণ করল না ফখরুল-মওদুদরা, এটি বিস্ময়কর! এ দলটির নেতা-নেত্রী হিসেবে দ-িত দু’জনকে দেখে জনগণ কেন ভোট দেবে, তার কোন যৌক্তিক ব্যাখ্যা নেই। ৪. এ কথা তো স্পষ্ট যে, খুনী হিসেবে দন্ডিত ব্যক্তি লন্ডন থেকে প্রার্থীদের সাক্ষাতকার নিলে সে কাদের মনোনয়ন দেবে? নিশ্চয়ই এলাকায় অপরিচিত কিন্তু বেশি চাঁদা দিতে পারে এমন ব্যক্তিই তার কাছে যোগ্য এবং সে তাই করেছে। ফলে এলাকার পরিচিত পুরনো প্রার্থীরা প্রার্থী হতে না পারায় তাদের সমর্থকদের অনেকেই এদের ভোট দেয়নি অথবা কাউকেই দেয়নি। এমনও হয়েছে দলবেঁধে বিএনপি দলের অনেকে নির্বাচনের এক-দু’দিন আগে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে! সম্ভবত অনেকে নৌকায় ভোট দিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে! প্রার্থী সঠিক না হলে এমনটাই ঘটবে- এটা ফখরুল, মওদুদরা খুব ভাল করে জানেন! সুতরাং অচেনা, নির্ভরশীল নয় এমন প্রার্থীরা ভোট পায়নি। আগেও লিখেছিলাম, বিএনপি দলটি থাকল কি থাকল না তাতে তারেকের থোরাই এসে যায়। কেননা সে তো হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দন্ডিত আসামি। সে কোনদিন বাংলাদেশে এসে রাজনীতি করতে পারবে না। সেই আসলে বিএনপির অতীতে, বর্তমানে সবচাইতে বড় সর্বনাশটি করেছে। তার দরকার টাকা, সেটা সে পেয়ে গেছে। তার আর কোন দায় নেই। ৫. বিএনপির জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ দেশে থাকা নেতাদের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। সে হিসাবে তারা যথার্থ কাজই করেছে। কিন্তু তাদের নেতিবাচক রাজনীতি চর্চা করতে গিয়ে তারা কোনরকম প্রচার, প্রচারণা, সভা, সমাবেশ, র‌্যালি ইত্যাদি করেনি। যাতে বিদেশীদের দেখানো যায় যে, সরকারী দলের বাধার ফলে তারা প্রচার করতে পারছে না। এই কুটিল কৌশলটিও খালেদা-তারেকের উদ্ভাবিত বলে মনে হয়। কেননা, এর সঙ্গে মিল রেখে বেশ কিছু কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সেজে ভোটারদের বাধা দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রকৃত আওয়ামী লীগাররা ভোটদানে বাধা দেবে- এটা অসম্ভব, কারণ ভোটাররা কোন্ প্রতীকে ভোট দেবে তা জানা সম্ভব নয়। তাছাড়া, এবার বেশির ভাগ ভোট নৌকা প্রতীকে পড়বেÑ এটা সারাদেশের ভোটারদের মতো আওয়ামী লীগাররাও অবগত আছেন। তাছাড়া, দলে দলে পেশাজীবীদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে একাত্মতা প্রকাশ করতে যাওয়ার দৃশ্য থেকে পরিষ্কার হয়েছে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোট লাভ করবে। এখন দেখার সময় এসেছে- বিএনপি কি সেই পুরনো জিয়া, খালেদা, তারেক-জামায়াতের রাজনীতিতে আবদ্ধ থেকে মুসলিম লীগের অবস্থায় পতিত হবে, নাকি শিক্ষিত ফখরুল-নজরুল ইসলাম খান-মওদুদ আহমদ বিএনপি দলটিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর প্রতিষ্ঠিত করে দ-িতদের বাদ দিয়ে সংসদে প্রকৃত বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে? যদি তা হয় তাহলে বিএনপি ইতিবাচক রাজনীতির পথে নতুনরূপে এগিয়ে গিয়ে ক্রমে ক্রমে বাংলাদেশের একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হয়ে উঠবে এতে কোন সন্দেহ নেই। বিএনপিকে সৎ রাজনীতিতে ফিরতে হবে, ষড়যন্ত্রের রাজনীতিকে চিরতরে নাকচ করতে হবে। কারণ, রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র ও চালাকির কোনস্থান নেই। তবে, মহাজোটের পক্ষে দুর্নীতিকে জিরো টলারেন্স প্রদর্শন কঠিন হলেও অসম্ভব হবে না। লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক
×