ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আল নাহিয়ান

ফ্রিল্যান্সিংয়ে নারীদের ক্যারিয়ার সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১১ জানুয়ারি ২০১৯

ফ্রিল্যান্সিংয়ে নারীদের ক্যারিয়ার সম্ভাবনা

গতানুগতিক একঘেয়েমি চাকরির ব্যতিক্রম কিছু অনেকেই প্রত্যাশা করেন। তারা মুক্তভাবে কাজ করে জীবনটাকে আরও বেশি উপভোগ্য করে তুলতে চান। আর এ স্বপ্ন পূরণের ব্যতিক্রম পন্থাটির নামই হলো ফ্রিল্যান্সিং বা মুক্ত পেশা। কেউ যখন নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট স্থায়ীভাবে চাকরি না করে নিজ দক্ষতা অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন তখন তাকে ফ্রিল্যান্সিং বলে। আর অনলাইনে যারা ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করে থাকেন তাদের বলা হয় ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবী। ইন্টারনেটের কল্যাণে এখন খুব সহজেই ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা যায়। এক্ষেত্রে যখন ইচ্ছা তখন কাজ করার স্বাধীনতা যেমন রয়েছে তেমনি পছন্দ অনুযায়ী কাজ বাছাই করার স্বাধীনতাও রয়েছে সকলের। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ করার কোন তাড়া থাকে না। আয়ের দিক দিয়েও সন্তষ্ট থাকা যায়। বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ইতিহাস খুব বেশি পুরনো নয়। গত কয়েক বছরে এ পেশা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যদিও বিশ্বের অনেক দেশেই এর প্রচলন আমাদের আগে থেকেই ছিল। Guru.com সর্বপ্রথম ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেস যা ১৯৯৮ সালে SOFTmoonlighter.com হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে Elance.com, Freeagnet.com, RentACoder.com, Odesk.com সহ অনেক মার্কেট প্লেস প্রতিষ্ঠিত হয়। ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে সর্বপ্রথম কাজ হলো আপনি কি কাজ করবেন তা বাছাই করা। এখানে অনেক ধরনের কাজ রয়েছে। প্রোগ্রামিং, মার্কেটিং, ওয়েব ডিজাইনিং, ইমেজ এডিটিং, ডেভেলপমেন্টসহ অনেক কিছু। এগুলো থেকে আপনাকে বাছাই করে নিতে হবে আপনার পছন্দনীয় কাজটি। আমাদের দেশে অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী রয়েছে যারা কিনা গতানুগতিক চাকরির প্রত্যাশায় কালক্ষেপণ করে থাকেন। অথচ এই ফ্রিল্যান্সিংয়ে সহজেই একজন সফল মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন। ফ্রিল্যান্সিং নারী-পুরুষ,তরুণ-তরুণী সব বয়সের মানুষের জন্য উন্মুক্ত। যে কেউ কাজের দক্ষতা অর্জন করে এই পেশায় নিয়োজিত হতে পারে। এক্ষেত্রে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তাই বিশেষ করে তরুণী ও মহিলাদের জন্য এই সেক্টরে কর্মসংস্থানের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। কেননা, বাংলাদেশের পেশা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। নিরাপত্তার অভাব, পারিবারিক বাধা, সামাজিক রক্ষণশীলতা ইত্যাদি কারণে চাকরির বাজারে আমাদের মেয়েরা এখনও সম্পূর্ণরূপে প্রবেশ করতে পারছে না। চাকরি পেলেও অনেক ক্ষেত্রে ফুল টাইম চাকরি করাটা তাদের জন্য কঠিন হয়ে থাকে। অনেক মেয়েদের আবার চাকরির পাশাপাশি সংসারের কাজও করতে হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে নারীরা অনায়াসে কিছু সময় ফ্রিল্যান্সিং করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারেন। এ পেশায় ধরাবাধা অফিস টাইম মেনটেন করতে হয় না। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণ কাজ থাকায় নারীরা তাদরে পছন্দমতো কাজ বাছাই করে নিতে পারেন। কারও কারও আর্ট কিংবা লেখালেখির শখ থাকে । এখানে এই শখের কাজগুলো করেও ভাল একটা ইনকাম করা সম্ভব। যেহেতু বিদেশী ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে বেশি কাজের অর্ডার নিতে হয় তাই ইংরেজীতে ভাল দক্ষতা অর্জন করা জরুরী। ফলে মক্কেলদের সঙ্গে ভাল যোগাযোগ রক্ষা করা ও কাজের অর্ডার বেশি পাওয়া সম্ভব হয়। ফ্রিল্যান্সিং ইন্ডাস্ট্রিতে স্কিল ইজ দ্য কিং।কোন ব্যক্তির যতই একাডেমিক সার্টিফিকেট থাকুক না কেন প্র্যাকটিক্যাল কাজ না জানলে এখানে তার কোন মূল্য নেই । তাই এ পেশায় আগ্রহী সকলকেই সময় নিয়ে মনোযোগসহকারে কাজ শেখা উচিত। অন্ততপক্ষে যে কোন একটি বিষয়ে এক্সপার্ট হয়ে কাজে নামা ভাল। কয়েকটি বিষয় মনে রাখতে পারলে আপনার কাজে তুলনামূলক বেশি সফলতা অর্জন সম্ভব। যেমন ডিসপ্লে সাইডে আপনার পোর্টফোলিওতে ভাল ভাল কাজ ডিসপ্লে করা, এ্যাকাউন্ট নিয়মিত আপডেট করা, প্রথমে ছোট ছোট প্রজেক্টে এপ্লাই করা। কাজের মানসম্মত রেট বজায় রাখাও জরুরী। এতে পরবর্তীতে বেশি রেটের কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। কাজের জন্য ক্লায়েন্টদের প্রতি অতিভক্তি কিংবা অতিরিক্ত অনুরোধ না করাই ভাল। আমি নারী, আমাকে দিয়ে হবে না, আমি কি পারব প্রযুক্তিনির্ভর কাজ করতে! এসব ঠুনকো বিষয় মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। ধৈর্য ও একাগ্রতা নিয়ে সাফল্য অর্জনের লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। কাজের বিভিন্ন বিষয় গুগল থেকে জানা যেতে পারে। আবার যারা অনেকদিন ধরে কাজ করছে তাদের প্রোফাইলে হাইলাইট করা বিষয়গুলো দেখলেও এক সময় সে রকম শক্তিশালী প্রোফাইল গঠন করা সম্ভব হবে। ফ্রিল্যান্সিং যেমন প্রচুর সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে তেমনি এক্ষেত্রে কিছু বাধার সম্মুখীনও হতে হয়। অনেক সময় এক সঙ্গে প্রচুর কাজ চলে আসে আবার কখনও হাতে কোন কাজই থাকে না। ফলে আয়ের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয় না। উপরন্তু কাজ করে পারিশ্রমিক পাওয়াতেও নানা জটিলতা পরিলক্ষিত হয়। আপনি যদি পারিশ্রমিক প্রাপ্তির প্রক্রিয়াটা ভাল করে না জানেন তবে খুব সহজেই আপনি প্রতারিত হতে পারেন। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে মার্কেট প্লেসে সরাসরি ব্যাংক এ্যাকাউন্টে ব্যালেন্স ট্রান্সফার করা নিরাপদ। যেখানে এ ব্যবস্থা নেই সেখানে অনলাইন পেমেন্ট ট্রাঞ্জেকশন প্রসেসে আপনার টাকা বুঝে নিন। আশার কথা হলো আজকাল এ পেশার প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ধীরে ধীরে পাল্টাচ্ছে। কাজেই নারীদের মেধা ও মননশীলতাকে কাজে লাগিয়ে এখানে সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার সুযোগের সদ্ব্যবহার সম্ভব। শুধু তাই নয়, এ পেশা নারীদের বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্কিং সৃষ্টির দক্ষতা বৃদ্ধি করবে। তারা তাদের পেশাদারিত্বকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাচাই করার সুযোগ পাবে। এ কাজে তাদের একই সঙ্গে মক্কেল ব্যবস্থাপনা, প্রদত্ত প্রকল্পের কাজ সম্পাদন, অর্থায়ন ইত্যাদি বিভিন্ন দিক খেয়াল রাখতে হয়। ফলে তারা একই সময়ে কর্মমুখী কাজ সম্পাদনের দক্ষতা অর্জনে সক্ষম হয়ে উঠতে পারবে।
×