ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অপরূপ প্রকৃতি ডাকছে...

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১১ জানুয়ারি ২০১৯

 অপরূপ প্রকৃতি ডাকছে...

ঋতুচক্রে ক্ষণকালের শীত বাঙালী জীবনে এক অন্যরকম অনুভূতি। বিশেষ করে এই সময়, ভ্রমণপিয়সী বা প্রকৃতিপ্রেমীকদের কাছে বেড়াতে যাওয়া প্রধান একটি কাজ হয়ে দাঁড়ায়। সবারই মন টানে প্রকৃতির কাছে। প্রকৃতির সৌন্দর্যকে আপন করে নিতে মন চঞ্চল হয়ে ওঠে । শীতকালে গ্রামীণ বাংলার প্রকৃতি ও জীবনে থাকে মন ভোলানে রূপ রস। মিশে থাকে ভালবাসা। হাঁসের মাংস, বাহরি পিঠা, খেজুররস সঙ্গে কত না উৎসব। যে কারণে শহুরে জীবনের ক্লেদ ভুলে মন ছুটে যায় গ্রামের পানে। চিরায়ত সুজলা-সফলা শস্য শ্যামলা অপরূপ বাংলাদেশ। ঋতুচক্রে হেমন্তকালের পরই প্রকৃতি ঘন কুয়াশায় মুখ ঢেকে উত্তরের হাওয়া বুকে নিয়ে ধরণীর মাঝে উপস্থিত হয় শীতকাল। শীতঋতু জড়তা বা রিক্ততার প্রতীক হলেও এর রয়েছে নিজস্ব্য ঐশ^র্য। বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস শীতকাল। শীতের সকালে এক অপরূপময় সৌন্দর্যে বাংলার প্রকৃতি সজ্জিত হয় সবুজ ঘাসের ডগায় ফোঁটা ফোঁটা জমা শিশির বিন্দু। সে এক অপরূপ দৃশ্য! । যখন ঘন কুঁয়াশা উপেক্ষা করে সূর্যের সোনালি আলো ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশির বিন্দুর ওপর এসে পড়ে শিশিরগুলো সোনার টুকরোর মতো ঝলমল করে। ধীরে ধীরে সূর্যি মামা ঘন কুয়াশার ফুলের দিকে ছুটে যায় মৌমাছিরা। সে যে কি দৃশ্য, চোখ জুড়ানো, মন ভোলানো। মধু সংগ্রহ, কৃষকে ব্যস্ত সময়, খেজুরের রস। ছোট ছেলে মেয়েরা আর বৃদ্ধরা খড়ে আগুন জ¦ালিয়ে আগুন পোহানো। যখন সূর্যের আলোর গরম আভা এই অসহায় মানুষের নিকট পৌঁছায় তখন তাঁরা রৌদ পোহাবার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে। এইটুকু সূর্যের আলো তাঁদের কাছে সোনার চেয়েও দামী মনে হয়। শত কষ্টের হলেও শীতকাল কৃষকের কাছে আবার আনন্দের ও কারণ। শীত ঋতুতে ফলানো যায় নানা রকমের শাক-সবজি। শীত ঋতু আমাদের অমৃত হাতে দান করে বিচিত্র ধরনের তাজা শাকসবজি। চারদিকে যেন সবুজের বেষ্টনী। মাঠে মাঠে হলুদ শর্ষে ফুলের সমারোহ, সব মিলিয়ে শীতের প্রকৃতি যেন মানুষের মনে এক একান্ত অনুভবের সৃষ্টি করে। সূদুর সাইবেরিয়া থেকে আসা পাখিগুলো যেন শীত এলেই তাঁদের আপন নীড় খুঁজে ফিরে বাংলার বুকে। এক সময় তাঁরা আবার উড়ে চলে যায় নিজ গন্তব্যে। মাঘের শীত বাঘের গাঁয়েও লাগে। ঋতু চক্রের পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতি আবার অন্যরূপে সাজে শীতের শেষ ভাগে। আর তাই তো প্রকৃতিকে অপরূপ রঙে সাজিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই হয়ত বিদায় নেবে শীত। তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন ছাড়াও সিলেটের রাতারগুল, কিংবা সুন্দরবন সব খানেই সৌন্দর্য বেড়ে কয়েকগুণ হয়ে যায়। সেই সমস্ত এলাকাগুলোর গ্রামীণ পরিবেশে নতুন মাত্রা যোগ করে শীত। ঘন-কুয়াশায় পাহাড়ের মাঝে ধূসর খেলা অনেকটাই যেন ভিন্নতার জন্মদেয়। নীলগিরির ওয়াচ টাওয়ার থেকে মেঘকে ছুঁয়ে দেখা, টাঙ্গুয়ার হাওরে বিদেশী পাখির ঝাঁক, চলন বিলের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য। উত্তরের জেলাগুলোর ফসলি আবাদ। আলুটিলার অন্ধকার গুঁয়া। খেজুরের রস সংগ্রহে গাছিদের ছুটে চলা। সব মিলিয়ে বাংলার প্রকৃতির রূপের সুধা পান করতে চাইলে দেরি না করে গ্রামের টানে, নাড়ির টানে ছুটে যেতে হবে গ্রামে। প্রকৃতির কাছে নিজেকে করতে হবে সমর্পণ। যান্ত্রিক এ শহরের কলকারখানা আর বিশাক্ত ধোঁয়া ছেড়ে সবুজে ঘেরা, প্রকৃতির কাছে নিজেকে বিলিয়ে দেখায় মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যাবে সুখ। তাই দেড়ি না করে বর্তমান প্রজন্মকে গ্রামীণ পরিবেশ কেমন তা জানাতে ছুটে যান আপনার নিজের গ্রামে। উপভোগ করুন শীতের উষ্ণতাকে। নিজের চোখেই দেখুন গ্রামীণ মানুষের জীবন প্রণালীকে, সঙ্গে সঙ্গে চিরায়িত বাংলার রূপ বৈচিত্র্য উপভোগ করে ধন্য হন।
×