ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী

বাজারে চাল সরবরাহ বাড়াতে চালকল মালিকদের নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১১ জানুয়ারি ২০১৯

  বাজারে চাল সরবরাহ বাড়াতে চালকল মালিকদের নির্দেশ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ স্থিতিশীল রাখতে বাজারে চালের সরবরাহ বাড়াতে চালকল মালিকদের আহ্বান জানিয়েছেন নতুন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। বৃহস্পতিবার বিকেলে খাদ্য অধিদফতরে চালকল মালিকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তিনি এই নির্দেশ দেন। মিল মালিক এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এ কে লায়েক আলী বলেছেন, বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির ঘটনা সঠিক নয়। চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। প্রয়োজনে সরবরাহ আরও বাড়ানো হবে। বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে চালকল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেন, বিভিন্ন পত্রিকায় চালের দাম বৃদ্ধির যে প্রতিবেন বেরিয়েছে তা সঠিক নয়। নির্বাচনের আগে চালের যে দাম ছিল, এখনও সেই দাম রয়েছে। দেশের দুই-একটি জেলায় দাম একটু বৃদ্ধি পেয়ে থাকতে পারে। যে সকল জেলায় বাইরে থেকে চাল সরবরাহ করার প্রয়োজন সে জাতীয় দুই-একটি জেলায় দাম সামান্য বাড়তে পারে। কারণ নির্বাচনের সময় সরবরাহে কিছুটা ব্যাহত হয়। তিনি বলেন, যত চাল লাগবে আমরা আগের দামে তা সরবরাহ করব। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, খাদ্য মানুষের মৌলিক চাহিদা। দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা বিধান করা এবং নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করা আমাদের দায়িত্ব। যে কোন মূল্যে আমাদের বাজার স্থিতিশীল রাখতে হবে। এর জন্য পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকতে হবে। এই বিষয়টিকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেব। তিনি মিলারদের নিরবচ্ছিন্ন চাল সরবরাহ করার অনুরোধ জানান। পাশাপাশি মিডিয়াকে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানান। সদ্য শেষ হওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের আশায় সিন্ডিকেটের করসাজিতে চালের দাম বাড়ায় চালকল মালিকরা। নির্বাচনের তিন দিন আগে ২৭ ডিসেম্বর থেকেই মিলাররা বাজারে চালের সরবরাহ কমিয়ে দেয়। এর পেছনে খুচরা বিক্রেতাদের তারা ‘ছুটিতে কর্মচারী’ ও ‘পরিবহন বন্ধের’ অজুহাত দেখিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, ‘মিলাররা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চালের দাম বাড়িয়েছে। ভেবেছিল দেশে বড় ধরনের কোন বিশৃঙ্খলা হবে। দুই দলের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাড়তি মুনাফার উদ্দেশ্য ছিল তাদের। খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, মিনিকেট চালের দাম বাড়ে কেজিতে সর্বোচ্চ ৫ টাকা। ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে। ১০দিন আগেও এ জাতীয় চাল মিলেছে ৫০ টাকায়। মোটা চালের দাম কমে আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪২ টাকায়। সদ্য শেষ হওয়া আমন মৌসুমে ধানের ফলন ভাল হয়েছে। চালের উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫৯৪ হাজার মেট্রিক টন। ৫৩ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে থেকে এ পরিমাণ চাল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। আর আগে আউশ ও বোরোর ফলনও ভাল হয়েছিল। বর্তমানে চলছে বোরো ধানের বীজতলা তৈরির কাজ। এদিকে, দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা মণে ধান বিক্রি হচ্ছে। ফল, বাজারে ধান ও চালের প্রচুর সরবরাহ রয়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। এ বিষয়ে কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এ সময়ে চালের দাম বাড়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। চালের দাম বাড়ার পেছনে আমি সিন্ডিকেট ছাড়া অন্য কিছু দেখছি না। চালকলে আগে যারা মালিক ছিলেন, এখনও তারাই আছেন। ফলে দাম বাড়ার কারণটি তারাই ভাল বলতে পারবে।’ বাংলাদেশ অটো মেজর এ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স এ্যাসোসিয়শনের সাধারণ সম্পাদক কে এম লায়েক আলী বলেন, ‘মিলগুলোতে কর্মচারীরা নির্বাচনের ছুটিতে থাকায় চালের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। তবে চালের দাম তেমন বাড়েনি।’ বাজারে মিনিকেটের দাম সর্বোচ্চ ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে জানালে লায়েক আরও বলেন, ‘মিনিকেট নিয়ে আর কথা বলতে চাই না। এটা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে এ চালের দাম কিছুটা কম থাকলেও দিন যত বাড়তে থাকবে এ জাতীয় চালের দামও বাড়তে থাকবে।’ কাওরানবাজারের কিচেন মার্কেটের হাজী ইসমাইল এ্যান্ড সন্সের মালিক মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মিলাররা চালের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করেছে। নির্বাচনের আগে তারা বলছিল নির্বাচন তাই এখন বেচাকেনা বন্ধ, পরে বেচব। নির্বাচনকে ইস্যু করে ২৭ ডিসেম্বর থেকে মিলাররা গড়িমসি শুরু করেছে। নির্বাচনের পরে এখনও মিলাররা রেট দিচ্ছে না। বলছে, টাকা পাঠিয়ে দেন। যখন চাল সরবরাহ করা হবে তখন চালের দাম নির্ধারণ করা হবে।’ জসিম আরও বলেন, ‘মিলাররা আরও বলছে ধান পাচ্ছে না। এ কারণে দাম বাড়ছে। কিন্তু বৈশাখী ধান আসতে আরও ৪ মাস। তার মানে কী এই চার মাস মানুষ না খেয়ে থাকবে?’ কিচেন মার্কেটের চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ লোকমান বলেন, ‘নির্বাচনের চার দিন আগে থেকে মিলাররা চাল সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। তারা বলেছে ভোটকে সামনে রেখে সবাই ছুটিতে ছিল। নির্বাচনের আগে চালের ডেলিভারি দিতে পারেনি। তবে এখনও তারা সরবরাহ বাড়ায়নি। বরং নানা অজুহাত দিচ্ছে।’ একই ধরনের কথা বলেন লাকসাম ট্রেডার্সের কর্মচারী মোঃ মোশাররফ। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে দেখে গেছি চালের দাম ঠিকই আছে। এসে দেখি সব ধরনের চালের দাম বেড়ে গেছে। গাড়ি বন্ধ থাকবে এই অজুহাতে নাকি চালের দাম বাড়ানো হয়েছে।’ জনতা রাইস মিলের মালিক আবু ওসমান বলেন, ‘মিলাররা বলছে ধানের বাজার বাড়তি, তাই চালের দাম বাড়তি। রশিদের মিনিকেট আগে ২ হাজার ৪৫০ টাকা বিক্রি হলেও এখন ২ হাজার ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
×