ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিনেমার বৈভবময় আয়োজনে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ১১ জানুয়ারি ২০১৯

 সিনেমার বৈভবময় আয়োজনে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব  শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য চমৎকার আয়োজন। যারা ছবি দেখতে পছন্দ করেন তাদের জন্য উৎসবটি ছড়াচ্ছে নির্মল আনন্দের বারতা। চাইলেই দেশ-বিদেশের বিচিত্র বিষয়ের সিনেমাগুলো দেখা যাবে বড় পর্দায়। শহরজুড়ে ছড়িয়ে রাখা হয়েছে অনেক ভেন্যু। পৃথক পৃথক সময়ে হবে ছবির প্রদর্শনী। বড়দের পাশাপাশি ছোটদের জন্যও রয়েছে শিশুতোষ চলচ্চিত্র। বিনা দর্শনীতে বাবা-মার হাত ধরে সোনামণিরা দেখতে পারবে তাদের মননের উপযোগী চলচ্চিত্র। সব মিলিয়ে ৭২টি দেশের ২১৮টি চলচ্চিত্রে সাজানো বৈভবময় আয়োজন। এর মধ্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ১২২টি এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন চলচ্চিত্রের সংখ্যা ৯৬টি। বৃহস্পতিবার উৎসবমুখরতায় শুরু হলো সপ্তদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ প্রতিপাদ্যে রেইনবো চলচ্চিত্র আয়োজিত নয় দিনব্যাপী উৎসবটি চলবে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। উৎসবের ১৭তম আসরে এশিয়ান প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, বাংলাদেশ প্যানারোমা, সিনেমা অফ দ্য ওয়ার্ল্ড, চিল্ড্রেন্স ফিল্ম, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, শর্ট এ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম এবং উইমেন্স ফিল্ম বিভাগে প্রদর্শিত হবে বহুমাত্রিক বিষয়ের ছবি। বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এ উৎসবের উদ্বোধন হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি অনুরাগী সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য সচিব আবদুল মালেক। সভাপতিত্ব করেন উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন উৎসব কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য ম হামিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল। আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, জীবনের জন্য বিনোদন প্রয়োজন। তবে সাহিত্য, চলচ্চিত্র কিংবা সঙ্গীত নিছক বিনোদন মাধ্যম নয়। বিনোদনের বাইরেও অনেক বড় বিষয় যুক্ত এসব সৃষ্টিশীলতার মাঝে। মানুষকে উচ্চতর মার্গে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। সে সঙ্গে রুচিকেও পরিশীলিত করে। চলচ্চিত্র একটি শক্তিশালী মাধ্যম। জাতি গঠনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। প্রভাবিত করে মানুষের মননকে। সেই সঙ্গে সেলুলয়েডের পর্দায় উপলব্ধি করা যায় ভিন্ন ভিন্ন দেশের জীবন ও সংস্কৃতিকে। শাহরিয়ার আলম বলেন, এ ধরনের উৎসব দেশের চলচ্চিত্রনির্ভর সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সকল মানবিক অনুভূতি উঠে আসে। একটি ভাল চলচ্চিত্র একজন মানুষ ও সমাজকে বদলে দিতে পারে। একটি দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য এ ধরনের চলচ্চিত্র উৎসব বিশেষ গুরুত্ববহ। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতার আগে ছিল বর্ণিল নৃত্য পরিবেশনা। সামিনা হোসেন প্রেমার ভাবনা ও পরিকল্পনায় নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যদল ভাবনার শিল্পীরা। উপস্থাপিত হয় সিলেট অঞ্চলে বিয়ের আসরে পরিবেশিত বিশেষ আঙ্গিকের ধামাইল নাচ। সেই সঙ্গে ছিল লাঠিখেলানির্ভর নাচের পরিবেশনা। আলোচনা শেষে উৎসবের উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে প্রদর্শিত হয় তুরস্ক-জর্ডানের যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র ‘দ্য গেস্ট’। চলচ্চিত্রটির কাহিনী তুরস্কে আশ্রয় নেয়া সিরিয়ান শরণার্থীদের দুঃখ-বিগ্রহ, ত্যাগ ও বঞ্চনার বিষয়ে। দশ বছরের লিনা যুদ্ধে তার বাবা-মা ও পরিবারকে হারায়। সে তার ছোট বোন ও প্রতিবেশী মরিয়মকে নিয়ে অন্য শরণার্থীদের সঙ্গে তুরস্কে রওনা হয়। ইস্তাম্বুলে যাওয়ার পর তারা এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। পুরোপুরি অচেনা এক শহরে লিনার বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা উঠে এসেছে এই চলচ্চিত্রে। ছবিটির পরিচালক তুরস্কের নির্মাতা আন্দাজ হাজানেদারগলু। উৎসবে রাজধানীর সাতটি ভেন্যুতে প্রদর্শিত হবে চলচ্চিত্র। সেগুলো হলো- জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন ও কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তন, আঁলিয়াস ফ্রঁয়েজ মিলনায়তন ও যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমা। উৎসবের অংশ হিসেবে আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার দুই দিন চলচ্চিত্রে নারীর ভূমিকা নিয়ে ‘পঞ্চম আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম মেকারস্ কনফারেন্স’ অনুষ্ঠিত হবে আঁলিয়াস ফ্রঁয়েজ মিলনায়তনে। এই কর্মশালায় দেশী-বিদেশী নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা ও ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে দেশের নারী নির্মাতারা অর্জন করবেন নতুন অভিজ্ঞতা। নারী নির্মাতারা তাদের কাজ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাসমূহ এবং উত্তরণের উপায় নিয়ে বিশে^র খ্যাতিমান নারী নির্মাতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পাবেন এ অধিবেশনে। ১৪ জানুয়ারি ঢাকা ক্লাবে প্রথমবারের অনুষ্ঠিত হবে নির্মাতাদের মিথস্ক্রিয়ামূলক দিনব্যাপী সেমিনার ‘ওয়েস্ট মিটস ইস্ট’। দ্বিতীয়বারের মতো আগামী ১৩-১৪ জানুয়ারি ২০১৮ ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ক্রিটিকস্ এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের আয়োজনে এবং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র সমালোচক ফেডারেশনের সহযোগীতায় ‘এশিয়ান ফিল্ম ক্রিটিকস্ এ্যাসেম্বেলি’ অনুষ্ঠিত হবে। আটটি বিভাগে সজ্জিত উৎসবে আলাদাভাবে নজর কাড়বে এশিয়ান প্রতিযোগিতা বিভাগ। এ বিভাগে প্রদর্শিত হবে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের পূর্ণদৈর্ঘ্য ২২টি চলচ্চিত্র। প্রতিযোগিতা বিভাগ সেরা চলচ্চিত্র নির্ধারণে থাকবে ৫ সদস্যের স্বাধীন আন্তর্জাতিক জুরি বোর্ড। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য পুরস্কার হিসেবে থাকবে স্মারক, সার্টিফিকেট এবং এক লাখ টাকা। এছাড়া শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা-অভিনেত্রী, শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক এবং শ্রেষ্ঠ নিত্রনাট্যের জন্য পুরস্কার হিসেবে থাকছে একটি সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট। উৎসবের ব্যাংলাদেশ প্যানোরামো বিভাগে প্রদর্শিত হবে দেশের নির্মিত ১০টি চলচ্চিত্র। অন্য বিভাগগুলো হলো সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড, চিল্ড্রেন্স ফিল্ম, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, শর্ট এ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম এবং উইমেন্স ফিল্ম সেকশন। জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে সকাল ১০টা থেকে চলবে শিশুতোষ চলচ্চিত্র। এক্ষেত্রে শিশুদের সঙ্গে অভিভাবকরাও আসতে পারবেন। এছাড়া সকাল ১০টা, দুপুর ১টা ও বিকাল ৩টার প্রদর্শনী শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে দেখতে পারবেন। সেক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে। এর বাইরে সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য টিকেট মূল্য ৫০ টাকা। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে সকাল ১০টা থেকে শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। এখানে অভিভাবকরা শিশুদের সঙ্গে বিনামূল্যে চলচ্চিত্র উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া সকাল ১০টা, দুপুর ১টা ও বিকেল ৩টার প্রদর্শনী শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে দেখতে পারবেন। সেক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে। জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনের সব প্রদর্শনী সবাই বিনামূল্যে উপভোগ করতে পারবেন। আঁলিয়স ফ্রঁয়েজ মিলনায়তনের প্রদর্শনীগুলোও সবার জন্য উন্মুক্ত। একইভাবে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে প্রদর্শনীগুলোও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। দর্শনীর বিনিময়ে যমুনা ব্লকবাস্টারে সিনেমায় ছবি দেখতে হবে দর্শনার্থীদের।
×