ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিনহাকে ‘এ ব্রোকেন ড্রিম’ লিখতে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা দেয়া হয়

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ১১ জানুয়ারি ২০১৯

 সিনহাকে ‘এ ব্রোকেন ড্রিম’ লিখতে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা দেয়া হয়

শংকর কুমার দে ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে দিয়ে লেখানো ‘এ ব্রোকেন ড্রিম : রুল অব ল’, হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ শিরোনামের বইটির বাজার ছিল ‘সুপার ফ্লপ’। নির্বাচনের সময়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকে বিতর্কিত, বিব্রত করতে সাবেক প্রধান বিচারপতিকে দিয়ে বইটি লিখিয়েছে বিএনপি-জামায়াত, যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী। নির্বাচনের সময়ে ওই গোষ্ঠী তাকে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা উন্নত দেশগুলোতে এই বইটি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সম্পর্কে নানা ধরনের কুৎসা রটানোর চেষ্টা ও ষড়যন্ত্র করেও ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি নির্বাচনে প্রচারের সময়ে এই বইটির কোন সমালোচনা তো দূরের কথা আলোচনায়ই স্থান পায়নি। এসকে সিনহা ও তাকে দিয়ে লেখানো বইটি বাবদ যত খরচ হয়েছে তা জলে গেছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, এস কে সিনহাকে দিয়ে বইটি লেখানো বাবদ তাকে দেয়া হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশী টাকায় ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। তাকে এই টাকা দিয়েছেন যুদ্ধাপরাধীর মামলায় ফাঁসিতে মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়া যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর ভাই মীর মাসুম। উদ্দেশ্য ছিল এই বইটি বাজারে ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ও মহাজোটের নেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে ভোটারদের মন ভোলানো। কিন্তু নির্বাচনের আগে ও পরে তাকে দিয়ে লেখানো বইটি বাজারে পাওয়া যায়নি। এমনকি কোন আলোচনা-সমালোচনায় স্থান পায়নি। বইটি ছাড়াও এসকে সিনহাকে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টসহ ইউরোপ ও উন্নত দেশসমূহের কাছে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়, যা বিদেশীরা ভালভাবে নেয়নি বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, এসকে সিনহা বই লেখার টাকায় কিনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির পিটারসন এলাকার ১৮০ জেসপার রোডের প্রাসাদের মতো বিলাসবহুল বাড়িটি। এই বাড়িটি কেনার কিছুদিন আগে তিনি থাকতেন নিউজার্সির পিটারসন রোডের ১৭৯ জেসপার রোডের একটি বাড়ির বেজমেন্টে। শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে সাবেক প্রধান বিচারপতিকে ওই বই লেখার জন্য ওই টাকা মানি লন্ডারিং এর মাধ্যমে সংস্থান ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রের যোগান দেন বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে একটি অশুভ মহল। বাংলাদেশ থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতির জন্য টাকা মানি লন্ডারিং করে পাঠানোর জন্য যেসব ব্যক্তি জড়িত হয়েছেন তাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত করছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা এখন আবার নতুন সরকারের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন। তার সঙ্গে যুক্ত আছেন বিদেশীদের কাছে পরিচিত চেনামুখ বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর আরও বেশ কিছু ব্যক্তি। দেশ থেকে সহায়তা করছে বিএনপি-জামায়াতপন্থী একটি অশুভ মহল। নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকার মালিকের অফিসে বসে গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যাতে বাংলাদেশেও ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করানোর চেষ্টা চলছে। এসকে সিনহাকে টাকা প্রদান, প্রকাশনার খরচ ইত্যাদি দিয়েছেন ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর ভাই মীর মাসুম। বইটির ব্যাপক প্রচারের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। সাবেক প্রধান বিচারপতির বইটির কপি পৌঁছানো হয়েছিল ঢাকায়। নির্বাচনের সময়ে বইটির ফটোকপি করে ব্যাপক প্রচারের প্রস্তুতিও শুরু করে বিএনপি-জামায়াত, যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী। কিন্তু নির্বাচনের সময়টা ওই গোষ্ঠীর জন্য প্রতিকূল থাকায় বইটি বাজারে মার খেয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, এরশাদের বিরুদ্ধে খালেদাকে আপোসহীন নেত্রী-বীর বানানোর অপপ্রচার চালানোর জন্য খালেদা ওয়ার ভিডিও ও ডকুমেন্টারি তৈরি করে অপপ্রচার চালানোর সেই পুরানো স্টাইলে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের বিরুদ্ধে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে দিয়ে বই লিখিয়ে অপপ্রচার চালানোর কৌশল নিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত-যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী। আশি ও নব্বই দশকে (শযধষবফ’ং ধিৎ) খালেদা ওয়ার ভিডিও ডকুমেন্টারিটি নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও প্রচার করানো গেলেও বিংশ শতাব্দীতে এসে সেই পুরানো কৌশলটি আর কাজে লাগেনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি, জামায়াত-যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠীর অপপ্রচার চালানোর ষড়যন্ত্র ভেস্তে গেলেও আবার নতুন করে বিদেশের মাটিতে ষড়যন্ত্রের জাল বুনা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি।
×