ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকারদের সঙ্গে বৈঠকে অর্থমন্ত্রী

খেলাপী ঋণ আর এক টাকাও বাড়তে দেয়া হবে না

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ১১ জানুয়ারি ২০১৯

 খেলাপী ঋণ আর এক টাকাও বাড়তে দেয়া হবে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশে খেলাপী ঋণ এখনও উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছায়নি। মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, যে পরিমাণ ঋণখেলাপী হয়েছে তার বেশিরভাগই আদায় করা সম্ভব। তবে আর এক টাকাও খেলাপী ঋণ বাড়তে দেয়া হবে না। বরং ধীরে ধীরে খেলাপী ঋণ কমিয়ে আনা হবে। আমাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ নন-পারফরমিং লোন (এনপিএল) বা খেলাপী ঋণ। এ কারণে এ ধরনের ঋণ যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার শেরেবাংলা নগরে অর্থমন্ত্রী তাঁর আগের অফিসে ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশন নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করলাম। ভাল একটা দিনে ভাল কাজ করেছি। ব্যাংক মালিকদের সঙ্গে বসে ঋণখেলাপী নিয়ে আলোচনা করেছি। সরকার খেলাপী ঋণ যাচাই-বাছাই করবে। এরপরেই কাজ শুরু হবে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এনপিএল নিয়ে যেভাবে লেখা হয় সেভাবে বাড়েনি। আমার মনে হয়, এটা ঠিক করা অসম্ভব নয়। তারপরেও জোর দিয়ে বলছি কোনভাবেই আর বাড়বে না। অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে ব্যাংক মালিকরা কথা দিয়েছেন। বৈঠকে বসার আগে তাদের জন্য শর্ত ছিল একটা। কোন কিছু আলাপ করার আগে এক দফা। আজকের পর থেকে খেলাপী ঋণ এক টাকাও বাড়তে পারবে না। আপনারা কীভাবে বন্ধ করবেন, কীভাবে টেককেয়ার করবেন, কীভাবে ম্যানেজ করবেন, সেটা আপনাদের বিষয়। তারা আশ্বস্ত করেছেন। তাই বলছি, আজকের পর থেকে খেলাপী ঋণ আর বাড়বে না ইনশাল্লাহ। মুস্তফা কামাল বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। ব্যাংক মালিকরা বৈঠকে প্রায় সবাই এসেছেন। তাদের সঙ্গে যেসব আলোচনা হয়েছে, তার অন্যতম হচ্ছে আপনাদের কাছ থেকে ব্যাংকিং খাতের যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, সেগুলো ভেরিফাই করা হবে। এর পরই মূল্যায়ন করা হবে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থবিভাগকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এই মূল্যায়ন শেষ হলে একটি ব্যবস্থায় যাওয়া যাবে। অর্থমন্ত্রী বলেন ইতোমধ্যে একটি জায়গায় ঐকমত্যে পৌঁছেছি। তবে মূল যে চিন্তা সেটি হচ্ছে এনপিএল খেলাপী ঋণ আদায়। এটি ব্যাংক মালিকদের উৎকণ্ঠা, জাতির উৎকণ্ঠা। তবে আমার উৎকণ্ঠা কিছুটা কম। কারণ এরই মধ্যে আমি দেখেছি, পত্র-পত্রিকায় যতটা লেখা হয়, সে পরিমাণ খেলাপী ঋণ আসলে নেই। তবে যা আছে তা আদায় করে পরিস্থিতি ঠিক রাখা সম্ভব। সরকারের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, যে পরিমাণ এনপিএল আছে, তাই থাকবে। এই ঋণ আর বাড়তে পারবে না। তিনি আরও বলেন, খেলাপী ঋণ বিষয়ে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন, কোন ব্যাংকের কতটা খেলাপী ঋণ আছে, কার কাছে কতটা পাওয়া যাবে, এর মধ্যে কতটা আসল, কতটা সুদ কোন অবস্থায় আছে, এ বিষয়ে তাদের তথ্য আমাদের ব্যাংকিং বিভাগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে সঠিক কাজটি শুরু করতে পারব, যথাযথভাবেই করতে পারব। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, যারা বাংলাদেশে ব্যবসা করেন, তারা সবাই প্রভাবশালী। প্রভাবশালী দুই রকম। যারা রাজনীতি করেন তারাও প্রভাবশালী। যারা ক্রিকেট ভাল খেলেন, তারাও প্রভাবশালী। ব্যবসা-বাণিজ্য যারা করেন তারাও প্রভাবশালী। ব্যবসায়ীরা যদি প্রভাবশালী না হন, তাহলে বিনিয়োগ কীভাবে আসবে? কোথেকে কর্মসংস্থান হবে, কীভাবে হবে, দারিদ্র্য কীভাবে কমবে? প্রভাবশালী যারা ব্যবসা বাণিজ্য করেন, অর্থনীতিতে তাদের অংশ ৮২ শতাংশ অবদান। তাদের বাদ দিয়ে ১৮ শতাংশ নিয়ে আমি কীভাবে অর্থনীতি সাজাব? এটা করাও আমার সামনে অবাস্তব চিন্তা। আপনারা যদি বলতে পারেন, নন-পারফরমিং লোন এতটা, এই মানুষ জড়িত তারা খুব খারাপ, আমাকে তালিকা দেন আমি দেখব আমার সঙ্গে মেলে কি না। ওই সময় ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, খেলাপী ঋণ কীভাবে কমানো যায়, কীভাবে সহজ করা যায় এটা নিয়ে ভাবতে হবে। টাকা নিয়ে চলে গেছেন কেউ কেউ। আবার যারা ভাল ব্যবসা করেন, হঠাৎ করেই খারাপ হয়ে গেছেন। এভাবে ক্ল্যাসিফাই করা হোক। এরপর অর্থমন্ত্রী ও গবর্নরের সঙ্গে ব্যাংক মালিক ও উদ্যোক্তারা বসবে। ওখানেই বলব যারা ভাল ব্যবসা করবেন, তাদের কীভাবে সহায়তা দেয়া যায়। আমরা এ মাসের মধ্যেই ক্ল্যাসিফিকেশন করব। এখানে পদ্ধতিগত জটিলতা আছে। এটা কীভাবে সহজ করা যায়। তবে অর্থমন্ত্রী যা বলেছেন, আমরা আশ্বস্ত করেছি। এখন থেকে খেলাপী ঋণ আর বাড়বে না। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারী খাত বিষয়ক উপদেষ্টা ও আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান ডাঃ এইচ বি এম ইকবালসহ ও অন্যান্য ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও তাদের প্রতিনিধি।
×