ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পিন্টু আনোয়ার

এথিক নাট্যদলের ‘আলোর অপেরা’

প্রকাশিত: ০৭:৪৪, ১০ জানুয়ারি ২০১৯

এথিক নাট্যদলের ‘আলোর অপেরা’

প্রায় দুই ঘণ্টা সময়। হলভর্তি দর্শক সামান্য উসখুস ছাড়া ঠাঁয় বসে দেখলেন নাটকটা। মাঝে মাঝে হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানালেন অভিনেতাদের। বলছিলাম এথিক নাট্যদলের পঞ্চম প্রযোজনা আলোর অপেরা নাটক নিয়ে। নাটকটির রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন অপু শহীদ। গত বছরের শেষ রচনা হিসেবে আলোর অপেরা চিহ্নিত হয়ে রইল। একটা নতুন নাটক মঞ্চে আসা নাটকের মানুষ নয় শুধু নাটকের দর্শকের কাছেও অত্যন্ত আনন্দের একটি বিষয়। এমনিতেই আমাদের নাট্যকারের সংখ্যা হাতেগোনা। সেখানে বাংলা নাটকে যুক্ত হলো আরেকটি নতুন নাটক আলোর অপেরা। নাটকটি টিনের তলোয়ার এবং চাঁদ বণিকের পালা নাটকের মিথস্ক্রিয়া। তাই নাটকটির প্রতি রয়েছে আলাদা আগ্রহ। অপু শহীদ বিচিত্র বিষয় নিয়ে নাটক লিখছেন। এরই মধ্যে আমরা তার তিনটি নাটক মঞ্চস্থ হতে দেখছি। ঈশ্বর পাঠ এবং চ-ীদাস নাটক ভিন্ন ভিন্ন নির্দেশক নির্দেশনা দিয়েছেন। বাজারি চাকচিক্য উপেক্ষা করে তিনি রাখতে চেয়েছেন নিজস্ব্য স্বাক্ষর। যা আমাদের প্রত্যাশা জাগিয়ে রাখলো। আলোর অপেরা নাটকে নাটকের ভেতর নাটক। নাটকের দলের ভেতরের খবর নিয়ে গড়ে উঠেছে এই নাটক। নাটকের কাঠামো টিনের তলোয়ারের মতো। মহড়া সূত্রে ঢুকে পড়ে চাঁদ বণিকের পালা এবং ময়মনসিংহগীতিকা। নাটকের দলের অন্তর্গত ভেতরের কথা উঠে আসে এই নাটকে। বর্তমানে উচ্চারিত সংলাপ এবং মহড়ায় দেয়া সংলাপ পরস্পরের পরিপূরক হয়ে ওঠে। এক ভাংচুর সময়কে তুলে ধরে। সেট হিসেবে চটে আঁকা ভাঙা ভাঙা মুখ, গলে পড়া ঘড়ি, পাতাহীন গাছ সবটা না হলেও কিছুটা তুলে ধরেছে নাটকের মুখ। ফয়েজ জহির আমাদের মঞ্চের অন্যতম সৃজনশীল পরিকল্পক। সেটের ব্যাপকতা শিফটিং-এ কিছুটা গতি শ্লথ করে দেয় বলে ধারণা করি। প্রথিতযশা আলোক পরিকল্পক ঠান্ডু রায়হান। মাঝে মাঝে আলোর মুডে এবং রঙের বিন্যাস তার ছোঁয়া পাওয়া যায়। কোন কোন কোণ থেকে আলো ফেলে মঞ্চচিত্র তৈরি করেন। কিন্তু কোথাও কোথাও আরেকটু আলো ফেললে ভাল হতো। আলোর খেলাটা আরেকটু পাওয়া যেত। আবহসঙ্গীত মাঝে মাঝেই রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। দর্শককে টানটান করে দেয়। শরীর এবং মগজ জেগে ওঠে। ধন্যবাদ শিশির রহমানকে কর্ণবান্ধব আবহ নির্মাণের জন্য। কিন্তু কোরাসদলকে দুর্বল বলাই ভাল। পোশাক এই নাটকে আলাদা মাত্রা যোগ করতে পারেনি। মিশ্র রং আরেকটু বেশি ব্যবহার করে দেখা যেতে পারে। নাটক সবচেয়ে জমে উঠে শেষ দৃশ্যে। আলো, কোরিওগ্রাফি, অভিনয়, আবহসঙ্গীত সব মিলিয়ে এক অপার্থিব দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। নির্মাণ হয় এক অব্যক্ত মঞ্চভাষা। বেশ কিছু ভাল অভিনেতা আছে এই দলে। হাঁড়ি ফাটিবে এবং চ-ীদাস নাটকে সেই দুর্দান্ত অভিনয় আমরা দেখেছি। মিন্টু সরদার বরাবরই অনবদ্য অভিনয় করেন। পুরো নাটক তিনি টেনে নিয়ে যান। তার মঞ্চ দাপিয়ে চলাফেরায় মনে হয় পুরো মঞ্চ তার দখলে। আত্মস্থ সংলাপ উচ্চারণ মন স্পর্শ করে যায়। তাছাড়া মণিকাঞ্চন, রুবেল হাসান, সুকর্ণ হাসান, ইমতিয়াজ আসাদ মনে রাখার মতো অভিনয় করেছেন। এই দলের মেয়েদের অভিনয় বরাবরই একটু দুর্বল। রূপসা চরিত্রে উম্মে হাবিবা এখনও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেননি। এই নাটকে বেশ কয়েকজন একাধিক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে তনিমা তথা রানী তথা সনকার ভূমিকাভিনেত্রী হোসনে আরা ডালিয়া। যিনি মুহূর্তের মধ্যে বিপরীতধর্মী চরিত্রে পাল্টে যান। বাধ্য হয় সকলে এক নাটক থেকে আরেক নাটকে ঢুকতে। বিশ বছর আগে তিনি নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বলের হয়ে চাঁদবণিকের পালা নাটকে অভিনয় করতেন। দীর্ঘ বিশ বছর পর আবার মঞ্চে ফিরে এলেন। তার কাছে নিয়মিত কাজের প্রত্যাশা রইল। পুরনোদের পাশাপাশি দলের নতুনরাও অভিনয় দক্ষতা দেখিয়েছেন। সবুজ, সাবা, সোহাগ, এনামুল এবং রুবেল। এদের মধ্যে রাতুল মীরের অভিনয় উল্লেখযোগ্য। অতি নাটকীয়তার ফাঁদে পা না দিয়ে নিজেকে সামলে নিয়েছেন। এবং সাবলীল অভিনয় করেছেন। সম্ভাবনার তালিকায় রইলেন তিনি।
×