সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ সপ্তদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে লীসা গাজী পরিচালিত মুক্তিযোদ্ধা বীরাঙ্গনাদের জীবন নিয়ে নির্মিত ‘রাইজিং সাইলেন্স’ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের উদ্বোধনী প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১২ জানুয়ারি বিকেল ৫টায় জাতীয় জাদুঘর মূল মিলনায়তনে। শাহাদাত হোসেনের চিত্রগ্রহণে চলচ্চিত্রটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন সোহিনী আলম ও অলিভার উইকস। গবেষণা উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন হাসান আরিফ। চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছে লন্ডনভিত্তিক সংগঠন কমলা কালেক্টিভ, ওপেনভাইযার ও মেকিং হারস্টোরি এবং সহযোগিতা করেছেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও দ্য ওসিরিস গ্রুপ। বাংলাদেশে ছবিটি প্রদর্শনীতে সহযোগিতা করেছে বিকাশ।
‘রাইজিং সাইলেন্স’ চলচ্চিত্রটি নারীর সঙ্গে নারীর সম্পর্কের পরিভ্রমণ যারা যুদ্ধ সয়েছেন, যুদ্ধের হিংস্রতা আর পরবর্তীতে দৈনন্দিন বিদ্বেষ সত্ত্বেও আগামী দিন গড়তে ক্ষত মুছেছেন শর্তহীন ভালবাসায়। একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে দুই লাখের বেশি নারী ও কিশোরী পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর যুদ্ধকৌশলের অংশ হিসেবে নির্বিচারে ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হন। বাঙালীর স্বাধীনতার যুদ্ধকে আমরা ডাকি জনযুদ্ধ বলে যেখানে মুক্তিযোদ্ধারা হয়ে ওঠেন সেই জনযুদ্ধের অগ্রসেনা আর এই নারীরা চাপা পড়ে যান উপেক্ষার তলে। কারন ধর্ষণ এই সমাজে এক অনন্ত ঘৃণার উৎস, ধর্ষক নয়!
ধর্ষিত এই নারীরা চলে গিয়েছিলেন নীরবতা, বিচ্ছিন্নতা আর বিস্মৃতির অন্তরালে। এই ছবি তাদের গল্প নিয়ে এসেছে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে, কিভাবে তারা লড়াই করেছেন মুক্তিযুদ্ধে এবং মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে।
ব্রিটিশ বাংলাদেশী অভিনেতা, নাট্যকার লীসা গাজী তার প্রথম চলচ্চিত্রটি এই নারীদের গল্প নারীদের প্রেক্ষিতে বলতে চেয়েছেন। লীসা গাজীর বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা, ছোট বেলা থেকেই মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনেছেন। ২০১০ সালে ২১ জন বীরাঙ্গনার সঙ্গে তার সাক্ষাত হয়। তখন থেকেই তিনি বীরাঙ্গনাদের ব্যক্তিগত গল্প যা আবার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংগ্রহ করেন। ২০১৪ সালে লীসা গাজী ও সামিনা লুৎফা যৌথভাবে লিখেন নাটক ‘বীরাঙ্গনা : যুদ্ধের নারী’ যেটি প্রযোজনা করে লন্ডনের নাট্য ও সংস্কৃতি সংগঠন কমলা কালেক্টিভ। নাটকটি বাংলাদেশে ও লন্ডনে প্রদর্শিত এবং প্রংশসিত হয়। তখন থেকেই এই চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রেরণা।
আগামী ১৮ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে একই উৎসবে ‘রাইজিং সাইলেন্স’ প্রদর্শিত হবে। ঢাকা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল মুক্তিযোদ্ধা বীরাঙ্গনা ও তাদের পরিবারকে এই চলচ্চিত্রের টিকেট বিক্রির সম্পূর্ণ অর্থ প্রদান করবে।
