ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশকে ২৫ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৭:২২, ১০ জানুয়ারি ২০১৯

বাংলাদেশকে ২৫ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিনিয়োগ ও ব্যবসা পরিবেশের আধুনিকায়ন, কর্মীদের সুরক্ষা ও সক্ষমতা জোরদার করা এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশকে ২৫ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক। বাজেট সহায়তার অংশ হিসেবে বুধবার চলতি অর্থ বছরের সরকারের সঙ্গে সংস্থাটির ২৫ কোটি ডলার বা ২ হাজার ১০০ কোটি টাকার ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে আগামী ৩ বছরে ধাপে ধাপে ৭৫ কোটি ডলার প্রদান করবে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য দেয়া ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা ‘জব ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট’ নামের কর্মসূচী বাস্তবায়নে ব্যয় করা হবে। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমদ এবং ঢাকায় নিযুক্ত বিশ^ ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর কিমিয়াও ফান। বক্তব্য রাখেন অর্থ বিভাগের সচিব আবদুর রউফ তালুকদার ও ইআরডির অতিরিক্ত সচিব মাহমুদা বেগম। পাওয়ার প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আজিজুল আলম। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, নির্বচানী ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে তরুণদের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন, তা আমরা বাস্তবায়ন করব। আমরা অবকাঠামো, শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে উন্নতি করেছি। তবে কর্মসংস্থানে কিছুটা পিছিয়ে আছি। সরকার অবকাঠামো সুবিধাসহ বেসরকারী খাতকে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দিচ্ছে। তারা ব্যাপক বিনিয়োগ করবে। ফলে বিভিন্ন খাতভিত্তিক বেসরকারী শিল্প প্রতিষ্ঠিত হলে কর্মসংস্থান বাড়বে বলে আশা করছি। মন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের রাজস্ব, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে সংস্কার করা হবে। আমাদের ৬০ শতাংশ কর্মক্ষম জনশক্তি রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ জনসংখ্যার বোনাসকাল ভোগ করতে পারবে। দেশের অর্থনীতি সঠিক পথেই আছে। আগে ওঠানামা থাকলেও এখন ধারাবাহিক উন্নতি হচ্ছে। বিশ^ব্যাংকের দেয়া এই অর্থ দিয়ে আগামী ৫ বছরে বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়ন করা হবে এবং তাতে তরুণ প্রজন্মের জন্য গুণগত মানসম্পন্ন কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার আরও বাড়বে বলেও আশা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, এ বছর ৮.২৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে। বেসরকারী খাতে সুযোগ বৃদ্ধি করায় আগামী ৫ বছরে আরও চাকরির সুযোগ আসবে। বিশ^ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর কিমিয়াও ফান বলেন, বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। বিশেষকরে গত দুই দশকে প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র নিরসন, মানবসম্পদ উন্নয়ন হয়েছে ব্যাপক। তবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ। কেননা, প্রতিবছর ২ মিলিয়ন তরুণ কর্মের বাজারে প্রবেশ করছে। কর্ম সংস্থানের ক্ষেত্রে তিনিটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাব, মানসম্মত কর্মসংস্থানের অভাব এবং কর্মসংস্থানে নারীদের পিছিয়ে থাকা। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মনোয়ার আহমেদ বলেন, অত্যন্ত দ্রæততার সঙ্গে এ ঋণটি প্রক্রিয়াকরণ করে চুক্তি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে এটিই প্রমাণিত হয় যে আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন হচ্ছে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, তিনবছর মেয়াদী এ কর্মসূচীর আওতায় বিনিয়োগ ও ব্যবসা বাণিজ্য পরিবেশ আধুনিকায়ন, শ্রমিকদের সুরক্ষা ও সব ধরনের অভিঘাত মোকাবেলায় সক্ষমতা জোরদারকরণ এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিকহারে কর্মে প্রবেশ নিশ্চিত করণে নীতি ও কর্মসূচী উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। বিনিয়োগ ও ব্যবসা বাণিজ্য পরিবেশ আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে ওয়ান স্টপ সেবা সম্পর্কিত আইন, ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো বাস্তবায়ন ও সুসংহতকরণ, তৈরি পোশাক শিল্পের মতো শ্রমঘন রফতানিমুখী শিল্প স্থাপন ত্বরান্বিত করা ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে আইনী কাঠামো সহজ ও স্বয়ংক্রিয় ও সরকারের সকল দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। শ্রমিকদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে বেসরকারীখাতে পেনশন আওতা সম্প্রসারণ ও পেনশন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন ও সরকারী চাকরিজীবীদের পেনশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, শ্রম আইন সংশোধন, কর্মপরিবেশ উন্নতকরণসহ কর্মকালীন ঝুঁকি বীমা প্রবর্তন ইত্যাদি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে তার মধ্যে বিশ^ব্যাংকের দেয়া এ বাজেট সহায়তা ৫ বছরের রেয়াতকাল (গ্রেসপিরিয়ড)সহ ৩০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে উত্তোলিত অর্থের উপর শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ এবং ১ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে সুদসহ মোট ২ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে।
×