ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অভিমত অলরাউন্ডার শোয়েব মালিকের

‘বিপিএল তরুণদের জন্য ভাল মঞ্চ’

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ১০ জানুয়ারি ২০১৯

‘বিপিএল তরুণদের জন্য ভাল মঞ্চ’

মোঃ মামুন রশীদ ॥ উইকেট নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেট টি২০ ক্রিকেটের জন্য উপযুক্ত নয় সেই সমালোচনা এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসরের শুরু থেকেই চলছে। তবে এরপরও বিশ্বব্যাপী যারা এই ফরমেটে ব্যাটিংয়ে সিদ্ধহস্ত, তারা ঠিকই বড় রানের ইনিংস খেলছেন। সেই রানগুলো আসছে বিদেশী ক্রিকেটারদের ব্যাট থেকে, বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা পারছেন না। এ বিষয়ে পাকিস্তানী অলরাউন্ডার শোয়েব মালিকও মিরপুরের উইকেটকেই দুষলেন। কিন্তু তিনি মনে করেন প্রচুর পরিমাণে বাংলাদেশী তরুণ এবারও বিপিএল অংশ নিচ্ছে। এই মেধাবী উদীয়মান তরুণরা ভাল করতে না পারলেও চাপের মুখে সবকিছু সামলে ওঠার পাশাপাশি সিনিয়রদের কাছ থেকে কিছু অভিজ্ঞতা নিতে পারছেন। এ কারণে মালিক মনে করেন তরুণদের পরিপক্ব ক্রিকেটার হয়ে ওঠার জন্য বিপিএল দারুণ এক মঞ্চ। সে জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) উচিত তরুণদের বেশি বেশি খেলার সুযোগ করে দেয়া এবং ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সবার উচিত সমালোচনা না করে সব ক্রিকেটারের পাশে থেকে তাকে সময় দেয়া। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অনুশীলনের সময় মিরপুর জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে এসব কথা বলেন মালিক। কোন একটি দল হঠাৎ করেই হয়তো বড় সংগ্রহ পাচ্ছে। মিরপুরের উইকেটকে তখন মনে হচ্ছে ব্যাটিংয়ের স্বর্গ। কিন্তু একই ম্যাচে আবার প্রতিপক্ষ দল মুষড়ে পড়ছে। আর অধিকাংশ ম্যাচে যেমন রান হচ্ছে তা ঠিক টি২০ ক্রিকেটের সঙ্গে মানানসই নয়। কুমিল্লা দলটিরও এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। এ বিষয়ে মালিক বলেন, ‘আমরা জানি শিশিরের ব্যাপারটা এখানে আছে। সবকিছুতে পরিবর্তন এসে যায় যখন পিচে শিশির পড়ে। আমরা তিন ফরমেটের সবগুলোতে অবশ্যই দেখে থাকব যে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপগুলো ৪০/৫০ রানেই থেমে গেছে। টুর্নামেন্টের জন্য খুবই ভাল হয় যদি তারা ভাল পিচ তৈরি করতে পারে। আমি বলতে পারি যে সামান্য কিছু পরিবর্তন তারা আনতে পারে। আমার মনে হয় আবহাওয়াটাই কিউরেটরদের ভাল মানের পিচ তৈরি করার যথেষ্ট সুযোগ দেয় না। কিন্তু তারা যদি ভাল পিচ তৈরি করতে পারতো তাহলে বড় স্কোরের খেলা দেখা যেতো এবং দর্শকরাও উপভোগ করতে পারতো। আর এমনটাই তো পুরো বিশ্বের সবাই দেখতে পছন্দ করে।’ তবে কি মিরপুরের উইকেট একেবারেই অনুপযুক্ত? এ বিষয়ে মালিকের মন্তব্য, ‘পিচগুলো ঠিকই আছে। কিন্তু আপনি শুধু নিজের মতো করে এখানে শট খেলতে পারছেন না। আপনি যদি অনেক ভালও খেলেন এই ধরনের পিচে, বিশেষ করে ঢাকায় এটা অনেক কঠিন। নিজের দক্ষতা দেখিয়ে তবুও সর্বোচ্চ ১৪০/১৫০ রান করতে পারলেই সেটাকে উন্নতি বলে ধরা যাবে এই পিচগুলোয়।’ বিদেশী ক্রিকেটাররা কিন্তু ঠিকই রান পাচ্ছে। বেশকিছু বড় ও ঝড়ো ইনিংস দেখা গেছে যার সবগুলোই এসেছে বিদেশী ব্যাটসম্যানদের উইলো থেকে। মালিকও টি২০ ফরমেটে নিয়মিত রান করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেটের সব ফরমেটের দিকে যদি তাকান, তাহলে সবখানেই উন্নতি দেখতে পাবেন। আমার মনে হয় সবচেয়ে জরুরী ব্যাপার হচ্ছে আপনার ক্রিকেটটা ঠিক পথে আছে কিনা। আমি প্রচুর তরুণ মেধাবীদের দেখতে পাচ্ছি এবং এটা তাদের বেশ অভিজ্ঞতা দিচ্ছে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের সঙ্গে অভিজ্ঞতাসমূহ ভাগাভাগি করা এবং কিভাবে চাপ কাটিয়ে উঠতে হয় সেই শিক্ষা দেয়া। মেধা আছে অনেক কিন্তু মেধাটাই এখনকার ক্রিকেটে যথেষ্ট নয়। অভিজ্ঞতা খুবই জরুরী এবং আমার মনে হয় এটা অনেকাংশেই সিনিয়র খেলোয়াড়দের ওপর নির্ভরশীল তারা নিজেদের অভিজ্ঞতার কতখানি তরুণদের দিতে পারছে। আমার মনে হয় বাংলাদেশের ক্রিকেট সঠিক পথেই আছে আর অবশ্যই বিশ্বের সেরা দল হতে সময় লাগবে।’ কিন্তু বাংলাদেশ দলের অনেক সম্ভাবনা দেখছেন মালিক সেরা হয়ে ওঠার। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সার্বিকভাবে আমি যতটা দেখেছি যারাই এসেছে তাদের সংগ্রাম করতে হয়েছে। এমনকি আমরা যদি বাইরের দেশেও বাংলাদেশকে দেখি, অনেক উন্নতি করেছে এবং এটা বাংলাদেশ দলের জন্য অনেক বড় হয়ে ওঠার লক্ষণ। বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব তরুণদের জন্য সুযোগ তৈরি করে দেয়া। আমার দৃষ্টিতে বেশ কিছু ভাল ক্রিকেটার দেখতে পাচ্ছি এবং তারা দলের জন্য অনেক ভাল করছে। আমি যদি দুয়েকটা নাম বলি সেটা এই ভাল ও মেধাবী ক্রিকেটারদের জন্য সঠিক বিবেচনা হবে না। আমার মনে হয় আপনাদের দেশ এবং ক্রিকেটাররা সংগ্রাম করবে এবং আপনিও ভাবতে শুরু করবেন সে ভাল ক্রিকেটার নয়, তাই দেশের জন্য ভাল কিছু করতে পারবে না। লক্ষ্যটা হওয়া দরকার তাদের পাশে থাকা, সমালোচনা নয়। আমার মনে হয় সমালোচনাটা শুধু আপনার নিজের দেশকেই ধ্বংস করবে।’
×